তরুণীকে বাঁচাতে গিয়ে গুরুতর জখম মহিলা, আজ অস্ত্রোপচার! ফেরার অভিযুক্ত

তরুণীকে বাঁচাতে গিয়ে গুরুতর জখম মহিলা, আজ অস্ত্রোপচার! ফেরার অভিযুক্ত

37383d3199cf9ff434f368585333d9ec

কলকাতা: করোনা পরিস্থিতিতে যখন কেউ কারোর দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে না, সেই পরিবেশেও রাতে অন্ধকারে বিপদে পড়া গাড়ি থেকে এক তরুণীর চিৎকার শুনে জীবন ঝুঁকি নিয়ে ছুটে এলেন এক দম্পতি। এমনি দুঃসাহসিক ঘটনার সাক্ষী থাকল কলকাতার ইএম বাইপাস৷

ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার রাতে ইএম বাইপাসে, আনন্দপুর থানা এলাকার আর আর প্লটে একটি আবাসনের সামনে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শনিবার রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ মায়ের জন্মদিনের অনুষ্ঠান সেরে ওই আবাসন থেকে বেরিয়ে স্বামী দীপ শতপথী ও মেয়ের সঙ্গে বাড়ি ফিরছিলেন নীলাঞ্জনা চট্টোপাধ্যায়। সেই সময়ে আবাসনের কাছেই তাঁদের গাড়ির পিছনে দাঁড়ানো একটি গাড়ির ভিতর থেকে ওই তরুণীর চিৎকার শোনেন ওই দম্পতি। নিজেদের গাড়িটিকে তাঁরা পিছনের গাড়ির সামনে আড়াআড়ি ভাবে দাঁড় করিয়ে দেন। নীলাঞ্জনা গাড়ি থেকে নেমে পিছনের গাড়ির দিকে যেতেই ভিতর থেকে ওই তরুণীকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। নীলাঞ্জনা দৌড়ে গিয়ে ওই তরুণীকে ধরে তুলতে যান। সেই সময় নীলাঞ্জনা চট্টোপাধ্যাইয়ের স্বামী তিনিও গাড়ি থেকে নেমে ওই গাড়ির দিকে এগোতে গেলেই, হঠাই গাড়ির চালক গাড়িটিকে জোর গতিতে বাঁক ঘুরি পালিয়ে যেতে যায়। তখনই ওই দম্পতি গাড়িটিকে ধাওয়া করতে গেলে গাড়িটি ধাক্কা মারে নীলাঞ্জনা চট্টোপাধ্যায়কে। পালানোর সময়ে নীলাঞ্জনার পায়ের উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দেন চালক। আহত ওই মহিলা রাস্তায় পড়ে ছটফট করতে থাকেন৷

রাতের অন্ধকারে বাইপাসে দাঁড়িয়েই অ্যাম্বুল্যান্সের জন্যে নীলাঞ্জনা চট্টোপাধ্যায়ের স্বামী ফোন করেন কাছের এক বেসরকারি হাসপাতালে, কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে অ্যাম্বুল্যান্স না পেয়ে, তিনি ১০০ ডায়াল করেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই কসবা ট্র্যাফিক গার্ডের এক সার্জেন্ট ঘটনাস্থলে পৌঁছে কলকাতা পুলিশের ট্রমা কেয়ার অ্যাম্বুল্যান্স৷ পরে নীলাঞ্জনাকে বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। ঘটনাস্থলে পৌঁছে আনন্দপুর থানার পুলিশ ওই তরুণীকেও উদ্ধার করে।

ওই তরুণীর সঙ্গে কথা বলে প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে, জলপাইগুড়ির বাসিন্দা ওই তরুণী নয়াবাদ এলাকায় একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকেন। তিনি একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। ১ সেপ্টেম্বর তাঁর সঙ্গে অমিতাভ বসু নামে ওই ব্যক্তির আলাপ হয়। তরুণী পুলিশকে জানান, শনিবার সাড়ে আটটা নাগাদ অমিতাভ গাড়ি নিয়ে এসে ফোন করলে তিনি বেরিয়ে আসেন। এবং দু’জনে মিলে গাড়িতে করে বেরোন। পরে আরও রাতে তিনি অমিতাভকে অনুরোধ করেন তাঁকে তাঁর ফ্ল্যাটের সামনে নামিয়ে দিতে। কিন্তু অমিতাভ রাজি হচ্ছিলেন না। তরুণী পুলিশকে জানান, তিনি গাড়ি থেকে নামার জন্য জোর করতে থাকেন। তখনই অমিতাভ গাড়ির মধ্যে তাঁকে যৌন হেনস্থা করেন। তাঁর জামা-কাপড়ও ছিঁড়ে দেওয়া হয়। উদ্ধারকারী ওই দম্পতি জানান, গাড়ি থেকে যখন তরুণীকে রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয় তখন তাঁর চোখে-মুখে মারধরের চিহ্ন ছিল।

দীপ বাবু জানান, তাঁর স্ত্রীর মাথায় ছ’টি সেলাই পড়েছে। বাঁ পায়ের হাঁটুর পিছনে হাড় ভেঙে গিয়েছে। শিনবোন টুকরো হয়ে গিয়েছে। সোমবার তাঁর অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা। দীপের অভিযোগ, তাঁরা ঘটনার পরে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করতে চাইলেও পুলিশ তা নিতে রাজি হয়নি। যদিও পুলিশের পাল্টা দাবি, একসঙ্গেই দু’টি ঘটনার তদন্ত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘‘পায়ের বদলে মাথার উপর দিয়ে গাড়ির চাকা গেলে নিমেষে সব শেষ হয়ে যেত।’’ কলকাতা পুলিশের এক পদস্থ কর্তা জানান, রাস্তার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে গাড়িটিকে খোঁজার চেষ্টা হচ্ছে। তরুণী এখনও আতঙ্কিত হয়ে রয়েছেন। তাঁর মাথায় ও মুখে চোট রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *