কলকাতা: তামিলনাড়ুর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত জয়ললিতা প্রথম সামাজিক প্রকল্প মারফত মাসে মাসে আর্থিক সাহায্য দেওয়ার ঘোষণা করেছিলেন। যা অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছিল দক্ষিণের রাজ্যটিতে। পরবর্তীকালে প্রায় সমস্ত রাজ্যেই এই ধরনের নানা প্রকল্প চালু করেছে সংশ্লিষ্ট সরকার। যা রাজনীতিতে ‘ডোল পলিটিক্স’ হিসেবে পরিচিত।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ধরনের বহু প্রকল্প চালু করেছেন ক্ষমতায় আসার পরেই। তার মধ্যে অন্যতম হল মহিলাদের প্রতি মাসে ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পের মাধ্যমে ৫০০ টাকা করে দেওয়া। আর তফসিলি জাতি-উপজাতিদের এই খাতে দেওয়া হচ্ছে হাজার টাকা করে। তবে বিরোধীরা বিশেষ করে বিজেপি বিষয়টি নিয়ে বহুবার কটাক্ষ করেছে তৃণমূলকে।
বিজেপির অভিযোগ, আসলে চাকরির ব্যবস্থা না করে ভিক্ষার দান দিয়ে মানুষকে চুপ করিয়ে রাখতে চায় তৃণমূল। কিন্তু এই ধরনের সামাজিক প্রকল্পের প্রতি মানুষের কতটা আগ্রহ থাকে সেটা দেরিতে হলেও বুঝতে পেরেছে বিজেপি। আর সেই সূত্রেই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেছেন রাজ্যে তাঁরা ক্ষমতায় এলে এই অনুদানের অঙ্ক আরও বাড়বে। শুভেন্দুর ঘোষণা, বাংলায় বিজেপি ক্ষমতায় এলে মহিলাদের জন্য প্রতি মাসে ২ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। সম্প্রতি নন্দীগ্রামে সভা থেকে এমনই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। নন্দীগ্রামের একটি সভায় শুভেন্দু বলেন, ”বিজেপি শাসিত অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা মহিলাদের তিন হাজার টাকা করে দেন। মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান মহিলাদের ২০০০ টাকা করে দেন। বিজেপি বাংলায় ক্ষমতায় এলে পাঁচশো নয়, মহিলাদের ২০০০ টাকা করে দেওয়া হবে৷”
তাই এটা স্পষ্ট অনুদানের রাজনীতি থেকে বিজেপিও দূরে সরে থাকতে পারবে না। কিছুদিন আগেই কর্ণাটকে বিপুল সংখ্যক আসনে জিতে ক্ষমতায় ফিরেছে কংগ্রেস। নির্বাচনের আগে অনুদানের পাশাপাশি নানা সুবিধামূলক প্রকল্পের ঢালাও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল হাত শিবির। তাতে যে কতটা কাজ হয়েছে সেটা সকলেই বুঝতে পারছে। একই ভাবে ভোটমুখী রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, তেলেঙ্গানায় কংগ্রেস এমন প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। এই ধরনের প্রকল্প নিয়ে সাধারণ মানুষের অসম্ভব আগ্রহ দেখা যায়। তাই পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচারে নেমে শুভেন্দু মহিলাদের ভোট পাওয়ার লক্ষ্যেই যে এমন বড় প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সেটা স্পষ্ট।
স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি নিয়ে শুভেন্দু তথা বিজেপিকে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না তৃণমূল। ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পের যে কতটা বাস্তবতা আছে সেটা দেরিতে হলেও বুঝেছে বিজেপি, এমনটাই বলছে শাসক দল। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে মহিলারা উজাড় করে তৃণমূলকে ভোট দিয়েছিলেন। তার অন্যতম বড় কারণ হচ্ছে একাধিক সামাজিক প্রকল্পের প্রতিশ্রুতি। যেগুলি ভোটবাক্সে ডিভিডেন্ড দিয়েছে তৃণমূলকে। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলের দেখানো পথেই হাঁটতে চায় গেরুয়া শিবির। তা ভোটবাক্সে কতটা প্রভাব ফেলবে সেটা পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে।