কলকাতা: জন্ম থেকেই দুটো পা দুর্বল। শারীরিক গঠনও সাধারণ মানুষের থেকে আলাদা। কুঁদঘাটের বাসিন্দা দেবর্ণিতা বসু’র বয়স ১৮ বছর, কিন্তু তার উচ্চতা মাত্র দেড় ফুট। হুইল চেয়ার ছাড়া চলাফেরা করতে পারে না তিনি। শারীরিক এই অক্ষমতা নিয়েও উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে এখন কলেজে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত দেবর্ণিতা।
আরও পড়ুন- তৃণমূলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা PSC-র মাথায়! ‘অসাংবিধানিক’, প্রভাবিত হবে নিয়োগ?
দেবর্ণিতা এ বছর উচ্চমাধ্যমিকে ৫২ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাশ করেছে। সে এ বিষয়ে জানিয়েছে, 'পড়াশোনা করার যদি তাগিদ থাকে, তাহলে সেটা করার থেকে কেউ আটকাতে পারে না। আমার শারীরিক প্রতিবন্ধকতাও এক্ষেত্রে আমাকে আটকাতে পারেনি। আমি সেই ভয় কাটিয়েই উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছি।' দেবর্ণিতা’র ইচ্ছা ছিল হোম ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়ার। কিন্তু তার জন্য তাকে রোজ কলেজে যেতে হবে। এর পাশাপাশি উচ্চমাধ্যমিকে ওই বিষয়ে দরকার ছিল আরও নম্বর। তাই তা না হওয়ার জন্য আক্ষেপ করছে দেবর্ণিতা।
আরও পড়ুন- ৩০০ টাকা কেজি লঙ্কা, বেগুন ৭০! অগ্নিমূল্য সবজি, খাবে কী জনতা?
এ প্রসঙ্গে দেবর্ণিতা জানায়, 'বুঝতে পারছি না কী নিয়ে পড়ব, হোম ম্যানেজমেন্ট না পেলে জুলজি নিয়ে পড়ার ইচ্ছা আছে।' দেবর্ণিতা’র বাবা সুশান্ত বসু’র কথায়, তাঁর মেয়ে ছোটবেলা থেকে কোন কিছুতে পিছিয়ে আসেনি ভয় পেয়ে। কিন্তু দেবর্ণিতা এখন যেটা নিয়ে পড়তে চাইছে তা হয়ত সম্ভব হবে না, সেই কারণে দেবর্ণিতাকে ডিসট্যান্স এডুকেশনে পড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সুশান্ত বাবু। স্কুলে পড়ার সময় তিনিই দেবর্ণিতাকে হুইল চেয়ারে পৌঁছে দিতেন স্কুলে। তাঁরা যে ফ্ল্যাটে থাকেন, সেখানে ওপর থেকে নামা ওঠার জন্য আলাদা বৈদ্যুতিক হুইল চেয়ার আছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন- ছুঁয়ে দেখল না কেউ! হাসপাতালের বাইরে স্ত্রীর কোলে স্বামীর মৃত্যু দেখল বনগাঁ
দেবর্ণিতা’র মা সুমিতা বসু’র কথায় দেবর্ণিতা’র জন্মের সময় চিকিৎসকদের ভুলের জন্যেই দেবর্ণিতা'র এই শারীরিক সমস্যা। তাঁর মতে, চিকিৎসকদের ভুলের শাস্তি পেতে হচ্ছে তাঁর মেয়েকে। কিন্তু এত শারীরিক সমস্যার সঙ্গে লড়াই করেও যে দেবর্ণিতা লড়াই করে চলেছে, এতে সুমিতা দেবী তার মা হিসাবে গর্ববোধ করেন। পড়াশোনার পাশাপাশি গানবাজনা, আবৃত্তি ইত্যাদিতেও পারদর্শী দেবর্ণিতা স্কুলের শিক্ষকদের কাছেও খুব প্রিয়। সে জানায়, পড়াশোনা, গানবাজনা, আবৃত্তি এগুলোই তার একমাত্র সঙ্গী। তার কথায়, 'বাবা মা পাশে আছেন বলেই সব সমস্যার মুখোমুখি হতে পারি আমি। ওরাই আমার একমাত্র ভরসা।'