নিজস্ব প্রতিনিধি: গত কয়েক মাসে নিম্ন আদালতের পাশাপাশি কলকাতা হাইকোর্টে সমালোচিত হয়েছে সিবিআই। কেন নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে তদন্তের গতি আরও বাড়ছে না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে আদালত। এই পরিস্থিতিতে অনেকটাই নড়েচড়ে বসেছে সিবিআই। এবার পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের কাছে ২০১৪ সালের টেট-এ যারা উত্তীর্ণ হয়ে চাকরি পেয়েছিলেন, সেই সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকার তথ্য তলব করল সিবিআই। উল্লেখ্য কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জমা দেওয়ার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে আগেই জানিয়েছিল সিবিআই। এবার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা আধিকারিকদের থেকে সেই সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করার কাজ শুরু করল পর্ষদ।
বিভিন্ন জেলা থেকে ধাপে ধাপে তথ্য সংগ্রহ করা শুরু হয়েছে। জানা গিয়েছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা আধিকারিকদের একটি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে তথ্য পাঠাতে বলা হয়েছে। বিভিন্ন স্কুলে যারা শিক্ষকতা করছেন তাঁদের নিয়োগপত্র, অ্যাডমিট কার্ড, প্রাতিষ্ঠানিক বিভিন্ন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার শংসাপত্র, কেস সার্টিফিকেট, এক্সট্রা কারিকুলাম সার্টিফিকেট এবং টেট পাশ করার শংসাপত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পর্ষদের কাছ থেকে এই নির্দেশ আসার পরেই জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কাউন্সিলের সেক্রেটারি আরও একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। এর মাধ্যমে জেলাগুলির স্কুলের সাব ইন্সপেক্টরদের এই তথ্য জমা দিতে বলা হয়েছে। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু জেলা এই সংক্রান্ত তথ্য পর্ষদের কলকাতার দফতরে পাঠিয়ে দিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে সমস্ত তথ্য জমা দিতে হবে কলকাতায় সিবিআই-এর নিজাম প্যালেসের ১৪ তলার দফতরে।
২০১৪ সালের টেট-এ পাশ করে ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে রাজ্যের প্রাথমিক স্কুলগুলিতে অনেকেই শিক্ষকের চাকরি পেয়েছেন। মূলত তাঁদের সম্পর্কেই এই তথ্য জমা দিতে বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে গত ২৫ এপ্রিল একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের থেকে এই সংক্রান্ত তথ্য তলব করেছিল সিবিআই। প্রসঙ্গত, সিবিআই মনে করে ২০১৪ সালের টেট’কে কেন্দ্র করে বহু অনিয়ম হয়েছিল। তাই সেই পরীক্ষার ভিত্তিতে যারা শিক্ষক-শিক্ষিকার পদে চাকরি করছে তাঁরা আদৌ যোগ্য কিনা সেটাই যাচাই করে নিতে চাইছে সিবিআই।
আর সিবিআই যখন এই বিষয়ে তথ্য চাইছে স্কুলগুলির কাছ থেকে, ঠিক তখনই রাজ্যে আরও একশো জন সিবিআই অফিসার আসতে চলেছেন বলে সূত্রের খবর। কিছুদিন আগেই কলকাতায় এসেছিলেন সিবিআইয়ের অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর অজয় ভাটনগর। দুর্নীতি সংক্রান্ত বিভিন্ন মামলার তদন্ত কোন পথে রয়েছে, তদন্তকারী অফিসারদের কোথায় কোথায় সমস্যা হচ্ছে, এই সমস্ত বিষয় খতিয়ে দেখেছিলেন তিনি। তখনই ঠিক করা হয় শীঘ্রই অফিসারের সংখ্যা বাড়ানো হবে পশ্চিমবঙ্গে। আর সেই সূত্রেই বিভিন্ন রাজ্য থেকে ডেপুটেশনের ভিত্তিতে অতিরিক্ত অফিসার আনছে সিবিআই। মূলত শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তের কাজেই তাঁদের ব্যবহার করা হবে বলে খবর। স্বাভাবিকভাবেই সিবিআইয়ের এই পদক্ষেপে খুশি আন্দোলনকারী যোগ্য চাকরিপ্রার্থীরা। তাই আগামী দিনে তদন্তের গতি কতটা বাড়ে, নতুন করে কি পর্দাফাঁস হয় এখন তারই অপেক্ষা।