নিজস্ব প্রতিনিধি: বেহালায় প্রাক স্বাধীনতা দিবসের মঞ্চ থেকে তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে অনুব্রত মণ্ডলের পাশে দাঁড়িয়েছেন তা নিয়ে রাজ্য জুড়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতির পাশে দল কতটা থাকবে তা নিয়ে বিভিন্ন মহল এর আগে প্রশ্ন তোলে। উঠে আসে নানা মতামত। শেষ পর্যন্ত দেখা গেল শুধু পাশে থাকাই নয়, অনুব্রতর সমর্থনে মমতা তাঁর দলকে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করার নির্দেশ পর্যন্ত দিয়েছেন। কি কারণে এই সিদ্ধান্ত নিলেন তৃণমূল নেত্রী? উত্তর একটাই, ভোটের লক্ষ্যে এ ছাড়া মমতার দ্বিতীয় কোনও অপশন ছিল না।
এই সিদ্ধান্তের পিছনে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কারণ কাজ করছে। প্রথমত অনুব্রত মণ্ডলের সাংগঠনিক দক্ষতা। দীর্ঘ বাম শাসনকালে সিপিএমের বিরুদ্ধে বীরভূম জুড়ে নজিরবিহীন সন্ত্রাসের অভিযোগ ওঠে। সেই সময় বীরভূমের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছুটে গিয়ে তৃণমূলের সংগঠন মজবুত করেছেন অনুব্রত। এটা সকলেই মানেন অনুব্রত ছাড়া বীরভূমে তৃণমূলের মাথা তুলে দাঁড়ানোর ক্ষমতা ছিল না। সেই জায়গা থেকে মমতা কখনই চাইবেন না অনুব্রতর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। তাতে বীরভূমের পাশাপাশি প্রতিটি জেলায় তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে বিরূপ বার্তা যাবে। ব্যাপারটা তখন এমন দাঁড়াবে যে, দরকারের সময় দল ব্যবহার করলেও দুর্দিনে তাঁদের পাশ থেকে সরে গিয়েছে। এই ধারণা রাজ্য জুড়ে ছড়িয়ে পড়লে পঞ্চায়েত ভোটের আগে খুবই অসুবিধার মধ্যে পড়বে তৃণমূল। তখন ভবিষ্যতে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব কতটা সিরিয়াসলি দলটা করবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যাবে। আর সেই অবস্থা বেশিদিন চললে শূন্যস্থান ভরাট করতে বাম, বিজেপি, কংগ্রেস যে ঝাঁপিয়ে পড়বে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই মমতা যেভাবে অনুব্রতর পাশে দাঁড়িয়েছেন সেটা তৃণমূলের প্রত্যেক জেলা নেতৃত্বের কাছে এক প্রকার ‘ভোকাল টনিক’ হিসেবে কাজ করছে।
আসলে অনুব্রতর নামটা রাজ্য রাজনীতিতে বহু চর্চিত। কিন্তু চর্চিত নয় তৃণমূলের এরকম বহু নেতা-নেত্রী রাজ্য জুড়ে আছেন যাঁরা নিজের ক্যারিশ্মায় এলাকা ভিত্তিক দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সংগঠন আরও মজবুত করছেন। সেই সুফল তৃণমূল পাচ্ছে ভোটবাক্সে। তাই অনুব্রতর পাশে এখন যদি তৃণমূল না দাঁড়ায় তাহলে সেই সমস্ত নেতা-নেত্রী আগামী দিনে কি করবেন তা নিয়ে যথেষ্ট চিন্তায় থাকবে তৃণমূল। এছাড়া অনুব্রতর পাশে দাঁড়ানোর আর একটা কারণ হচ্ছে তাঁর বাড়ি বা অনুগামীদের বাড়ি থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার হতে দেখা যায়নি। যেটা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে দেখা গিয়েছে।
টেলিভিশনের পর্দার সেই দৃশ্য রাজ্যবাসীর মনে যে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে তা সকলেই জানেন। সেই সঙ্গে পার্থর সঙ্গে মডেল অভিনেত্রী অর্পিতার সম্পর্ক নিয়ে রাজ্য জুড়ে হাসি-ঠাট্টা ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ চলছে। যে সমস্যা অনুব্রতকে ‘ফেস’ করতে হচ্ছে না। কোটি কোটি টাকা উদ্ধার সম্পর্কিত মেগা নাটকের মধ্যে দিয়ে গ্রেফতার হতে হয়েছে পার্থ- অর্পিতাকে। কিন্তু অনুব্রতর ক্ষেত্রে সেটা ঘটেনি। তাই অনুব্রতর পাশে দাঁড়িয়ে মমতা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে নজিরবিহীন আক্রমণ করে চলেছেন। এর পাশাপাশি অনুব্রতর পিছনে মমতার দাঁড়ানোর আরও একটা জোরালো কারণ রয়েছে। পার্থর মতো অনুব্রতকেও যদি তৃণমূল ছেঁটে ফেলত তাহলে বিরোধীরা এ কথা বলার সুযোগ পেয়ে যেতেন যে, অনুব্রত দুর্নীতিগ্রস্থ বলেই তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তৃণমূল দেরি করেনি। সেক্ষেত্রে আরও বেশি করে প্রচার হতো তৃণমূলে সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত। সব মিলিয়ে অনুব্রত ইস্যুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘অফেন্স ইজ দ্যা বেস্ট ডিফেন্স’ নীতিতেই চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মমতার এই সিদ্ধান্ত আগামী দিনের নির্বাচনগুলিতে কতটা প্রভাব ফেলবে তা সময়ই বলে দেবে।