বাংলা ফেইল! সেই মণিপুরে আমন্ত্রণ জানিয়েও নাগাল মিলছে না “মোদী”র

কলকাতা: বাংলা ফেইল, বিজেপি শাসিত মণিপুর রীতিমতো রণক্ষেত্র! মানবিকতার স্বার্থে একবারও মণিপুরমুখী হয়েছেন নরেন্দ্র মোদী? ডেকেও নাগাল পাচ্ছে না কংগ্রেস! ঘাটতি নেই অত্যাধুনিক অস্ত্রের! সেনা…

মোদী Prime Minister Narendra Modi

কলকাতা: বাংলা ফেইল,
বিজেপি শাসিত মণিপুর রীতিমতো রণক্ষেত্র!
মানবিকতার স্বার্থে একবারও মণিপুরমুখী হয়েছেন নরেন্দ্র মোদী? ডেকেও নাগাল পাচ্ছে না কংগ্রেস! ঘাটতি নেই অত্যাধুনিক অস্ত্রের! সেনা নামানোর পরেও সিচুয়েশন আউট অফ কন্ট্রোল।

না, আন্তর্জাতিক যুদ্ধক্ষেত্র নয়। কিন্তু পরিস্থিতি তারও অধম। সেক্ষেত্রে, ভারত রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে মধ্যস্থতা করার ক্ষমতা রাখলে, সেই আড়াই বছরের যুদ্ধ থামানোর পাওয়ার রাখলে; প্রশ্নটা খুব স্বাভাবিকভাবেই আসে। তাহলে নিজের দেশের মণিপুর কী ক্ষতি করল? তাহলে স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে এমন নজিরবিহীন সংঘর্ষের পরেও, অন্তত মানবিকতার স্বার্থে একটা বার মণিপুরে আসতে পারলেন না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী? প্রশ্নটা কংগ্রেসের হলেও, মণিপুরের পরিস্থিতি দেখে এই একই প্রশ্ন ফিরছে অনেকেরই মুখে মুখে। অথচ, গত ১৬ মাস ধরে চলা সংঘর্ষে বারবার সমালোচিত হলেও মণিপুরমুখী হননি নরেন্দ্র মোদী। তিন দফায়, মণিপুরের নামমাত্র উল্লেখেই দায় সেরেছেন তিনি।

বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, মণিপুর যখন চাপ বাড়াচ্ছে বিজেপির অন্দরে। তখন বাংলায় আরজি কর কাণ্ডকে ইস্যু করে গদি হাতানোর চেষ্টা চালাচ্ছে বঙ্গের পদ্ম শিবির। যেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অলরেডি মানবিকতা দেখিয়ে জুনিয়র চিকিৎসকদের ধর্নামঞ্চে পৌঁছে যান। বসে সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেন।

আর মণিপুর? গত বছরের মে মাসে মেইতেই আর কুকি, এই দুই জনগোষ্ঠীর মধ্যে যে সহিংসতা শুরু হয়েছিল, তা বেশ কয়েক মাস ধরে এক রকম বন্ধই ছিল। কিন্তু চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মণিপুর। সেখানে দিনকে দিন পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। প্রথমবারের মতো ড্রোন ও রকেট হামলার ঘটনা ঘটেছে। এক জেলা থেকে অন্য জেলায় উড়ে আসছে ক্ষেপণাস্ত্র! আকাশ থেকে আধুনিক ড্রোন ব্যবহার করে চলছে বোমাবর্ষণ! কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের পরও মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। ওখানে যা যা ঘটছে, শুনলে বোঝা কঠিন মিয়ানমার, রাশিয়া ইউক্রেন? নাকি ভারতের মণিপুর?

জানুন তাহলে, নতুন করে দুই সম্প্রদায়ের ছড়ানো সংঘর্ষে উদ্বেগ প্রকাশ বিজেপি সরকার। দুপক্ষের হাতেই দেখা যাচ্ছে অত্যাধুনিক সব যুদ্ধাস্ত্র। অলরেডি দুই সম্প্রদায়ের অস্ত্র ভাণ্ডারে রয়েছে জার্মানির হেকলার অ্যান্ড কোচ, আমেরিকার কোল্ট এ-আর-ফিফটিন, এম-সিক্সটিন, এম-ফোর-এ-ওয়ান, চীনা এ-কে-ফিফটি সিক্স রাইফেল। শুধু অটোমেটিক রাইফেল নয়, এদের অস্ত্র ভাণ্ডারে আছে বিধ্বংসী বোমা, ড্রোন, হ্যান্ড গ্রেনেড, রকেট লঞ্চার, মর্টার শেল ও ট্যাংক বিধ্বংসী নানা অস্ত্র।
এছাড়াও ইন্ডিয়া টুডের রিপোর্ট বলছে, চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং মিয়ানমারের অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে মণিপুরে। এর মধ্যে রয়েছে একে-৪৭, আইএনএসএএস, ৭.৬২এমএম, বিভিন্ন স্টেন কার্বাইন মেশিনগান। এমনকি অস্থিতিশীলতার সুযোগে মণিপুরের বেশ কয়েকটা পুলিশ স্টেশন থেকে লুট হয়ে গেছে অন্তত ৪ হাজার অস্ত্র। জানা যাচ্ছে, এসব অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ এখন কুকি আর মেইতে সম্প্রদায়ের হাতে। অতএব, একটা রাজ্যে এতো অস্ত্রশস্ত্র মজুত। সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধ। মানুষের মৃত্যু। চলছে তো চলছেই। শান্তি ফিরছে না। শান্তি ফেরাতে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রতিবাদে পথে নেমেছে মানুষ। মহিলারা ইম্ফলে রাস্তায় নেমেছেন। মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের পদত্যাগের দাবি তুলেছেন। রাজ্য ছেড়ে চলে গেছেন রাজ্যপাল। মণিপুরে নিভতেই চাইছে না অশান্তির আগুন। রাজ্যের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বিভিন্ন মহল থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হস্তক্ষেপের দাবি করা হয়েছে হচ্ছে। এ বারের চিঠিতে কোনও সমালোচনা না করে কংগ্রেস লিখেছে, “মানবিকতার খাতিরে যত দ্রুত সম্ভব রাজ্যে আসুন। আপনি একটি বার এলে রাজ্যেশান্তি ও স্বাভাবিকতা ফেরানোর শক্তি মিলবে।” কিন্তু, অনেকের মনেই একটা প্রশ্ন। ফের এক বার কাতর আহ্বান জানালো কংগ্রেস। এ বারেও কি মোদী সেই সাহস দেখাতে পারবেন? যখন এভাবেই মোদীর উপর চাপ বাড়ছে। তখন, এর মধ্যেই কুকি বনাম মেইতেই সংঘর্ষের মধ্যেই জটিলতা বাড়াল নাগারা। ইউনাইটেড নাগা কাউন্সিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে ডেডলাইন বেঁধে দিয়ে বলল, ২০১৬ সালে নাগাদের মতামত না নিয়েই হঠকারী ভাবে ৭টি নতুন জেলা গঠন করেছিল সরকার। ১৫ দিনের মধ্যে ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করলে শুরু হবে তীব্র আন্দোলন।

এখন প্রশ্ন হল, এই পরিস্থিতিতে কী করবে মোদী সরকার? আদৌ কী মোদী যুদ্ধক্ষেত্র মণিপুরে পা রাখবেন? নাকি দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর। এভাবেই আন্দোলন, অস্ত্রের ব্যবহার বাড়তে থাকবে মণিপুরে? আর কতদিন এভাবে অশান্ত থাকবে উত্তর পূর্ব ভারতের এই রাজ্য।