বিজেপি-সিপিএম-কংগ্রেস নয়, মমতার রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছেন সাধারণ মানুষ‌!

কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসার ১৩ বছর পরে এই প্রথম এমন কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এমন পরিস্থিতি যে তৈরি হবে সেটা কল্পনাও করতে…

Public Anger Against TMC BJP silence on RG Kar incident

কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসার ১৩ বছর পরে এই প্রথম এমন কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এমন পরিস্থিতি যে তৈরি হবে সেটা কল্পনাও করতে পারেননি তিনি। এই তো সেদিনের কথা। লোকসভা নির্বাচনে ২৯টি আসনে জিতে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। এরপর চারটি বিধানসভার উপনির্বাচনে ৪-০ ফলে জিতেছে তারা। কিন্তু এরপরই আরজি কর কাণ্ডের জেরে তৃণমূল এতটাই ব্যাকফুটে চলে গিয়েছে যে, তারা আগামী দিনে ক্ষমতা হারাতে পারে বলেও জল্পনা পর্যন্ত শুরু হয়ে গিয়েছে। (Public Anger Against TMC)

আন্দোলনের রাশ  অরাজনৈতিক মানুষের হাতে

আসলে বিরোধী দলগুলি তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ইস্যুতে পথে নামবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আরজি কর কাণ্ডের পর থেকেই আন্দোলনের রাশ মূলত চলে গিয়েছে অরাজনৈতিক মানুষের হাতে। কলকাতা বা গোটা রাজ্য শুধু নয়, গোটা দেশ, এমনকী বিদেশের মাটিতেও পরপর দু’বার ‘রাত দখল’ কর্মসূচিতে সামিল হয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। এমন আন্দোলন স্বাধীন ভারতে হয়েছিল কিনা তা চট করে কেউ মনে করতে পারছেন না। আন্দোলনকারীরা মূলত নির্যাতিতার সুবিচার চাওয়ার পাশাপাশি এই অপরাধের সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকের কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তি চেয়েছেন। তবে এরপরেই আন্দোলনে নতুন বাঁক আসে।

আরজি কর কাণ্ড:  স্বতঃস্ফূর্ত জনরোষ

দেখা যায় রাজ্য জুড়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগের দাবিতে সরব হয়েছেন আন্দোলনকারীদের বড় অংশ। এমনটা যে হতে পারে সেটা ভাবতে পারেনি তৃণমূল। কিন্তু যেভাবে সাধারণ মানুষ এই বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হয়েছে, সেখানে বিজেপি, সিপিএম কিংবা কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁদের জড়িয়ে পাল্টা আক্রমণ সেভাবে করতে পারছে না শাসক দল। কারণ এই জনগণই তো ভোট দিয়ে তৃণমূলকে একের পর এক নির্বাচনে জিতিয়েছেন। তাই তাঁদের উদ্দেশে বিরূপ মন্তব্য করলে ইভিএম বাক্সে তার প্রভাব নিশ্চিত ভাবে পড়বে বলে তৃণমূল মনে করে। তাই আরজিকর কাণ্ডের জেরে রাজ্য জুড়ে যে স্বতঃস্ফূর্ত জনরোষ দেখা যাচ্ছে তাতে ভীত দেখাচ্ছে তৃণমূলকে। ক্ষমতায় অসার ১৩ বছর পরে যা এই প্রথম বলে সবার মত।

মমতার আত্মবিশ্বাসে কিছুটা হলেও কি চিড় ধরেছে?

একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্য জুড়ে এমন আবহ তৈরি হয়েছিল যাতে অনেকেই মনে করেছিলেন তৃণমূল বুঝি এবার পরাজিত হবে। সেই সময় তৃণমূলের একের পর এক শীর্ষ নেতা দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করেছিলেন। তৃণমূলের সাফল্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল নানা মহল। কিন্তু তখনও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফের ক্ষমতায় আসার ব্যাপারে অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী দেখিয়েছিল। বারবার তিনি দাবি করেছিলেন বিপুল সংখ্যক আসনে জিতে তৃতীয়বার ক্ষমতায় ফিরবে তৃণমূল। বাস্তবে সেটাই হয়েছিল। কিন্তু আরজিকর কাণ্ডের পর বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর সেই আত্মবিশ্বাসে কিছুটা হলেও কী চিড় ধরেছে? এই প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠছে।

‘রাত দখল’ বা ‘ভোর দখল’ কর্মসূচি

যেভাবে অরাজনৈতিক আন্দোলন প্রতিদিন কলকাতা বা রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় দেখা যাচ্ছে, তা তৃণমূলের পক্ষে একেবারেই ভাল বিজ্ঞাপন নয়। আর তাতেই উদ্বেগ বাড়ছে বাংলার শাসক দলের। ‘রাত দখল’ বা ‘ভোর দখল’ কর্মসূচিতে সামিল হয়ে সাধারণ মানুষের একাংশ মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে সরব হয়েছেন। এ দৃশ্য আগে কোনও দিন দেখা যায়নি। তৃণমূলের বিরুদ্ধে অসন্তোষ থাকলেও রাস্তায় নেমে কেউ মুখ্যমন্ত্রীর সরাসরি পদত্যাগ চাইছেন, এটা দেখা যায়নি। আর তাতেই প্রমাদ গুণছে তৃণমূল। তার উপর জুনিয়র চিকিৎসকরা অনড় মনোভাব নিয়ে আন্দোলন করছেন সরকারের বিরুদ্ধে। বলতে দ্বিধা নেই এই সম্মিলিত আন্দোলন রীতিমতো ঘুম ছুটিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এই পরিস্থিতি মুখ্যমন্ত্রী পুরোপুরি সামলাতে পারেন কিনা এখন সেটাই দেখার।

আরও পড়ুন-

বিনা চিকিৎসায় যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ!

পুজো মণ্ডপের বাইরে কোন দায়িত্বে থাকবেন বিজেপি নেতাকর্মীরা?

রিজওয়ানুরের পর আরজিকর কাণ্ড, ফের কলকাতা পুলিশের ভূমিকায় উঠছে প্রশ্ন

কোন অঙ্কে সুখেন্দু শেখরের বিরুদ্ধে ‘ব্যবস্থা’ নেওয়া কঠিন তৃণমূলের কাছে?

আরজি কর-কাণ্ড: ‘বেসুরো’ শাসক ঘনিষ্ঠ কবি সুবোধ! বিলম্বিত সু-বোধ?

বামেদের মতোই কি হাল হচ্ছে তৃণমূলের? 

আরজি কর আবহের মধ্যে কোন তথ্য অস্বস্তি বাড়াল তৃণমূলের?

চেন সিস্টেমে এবার উঠে আসবে পরপর নাম? 

Mamata Banerjee faces unprecedented public anger following the RG Kar case. With protests escalating and calls for resignation rising, how will TMC manage this political crisis in West Bengal? The future of the government is at stake. Public Anger Against TMC