“অপরাজিতা”ই দেবে ফাঁসি! কী এমন আছে মমতা সরকারের ধর্ষণ বিরোধী বিলে?

কলকাতা: ধর্ষককে চরম শাস্তি দেবে “অপরাজিতা”।মমতা সরকারের ধর্ষণ বিরোধী বিল কী বিরোধীদের মুখ বন্ধের স্ট্র্যাটেজি?কী এমন আছে এই বিলে যে ভোটাভুটি ছাড়াই বিরোধীরা ফুল সমর্থন…

mamata aparajita

কলকাতা: ধর্ষককে চরম শাস্তি দেবে “অপরাজিতা”।মমতা সরকারের ধর্ষণ বিরোধী বিল কী বিরোধীদের মুখ বন্ধের স্ট্র্যাটেজি?কী এমন আছে এই বিলে যে ভোটাভুটি ছাড়াই বিরোধীরা ফুল সমর্থন করলো এই বিলকে?

৩রা সেপ্টেম্বর। বিধানসভার ভেতরেই উঠল স্লোগান। দফা এক, দাবি এক, মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ। এরই মাঝে বিধানসভায় পেশ করা হলো, অপরাজিতা নারী ও শিশু বিল ২০২৪ (ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্রিমিনাল ল অ্যান্ড অ্যামেন্ডমেন্ট)। আর বিধানসভায় পেশ করা ধর্ষণ বিরোধী এই ‘অপরাজিতা’ বিল, কোনো ভোটাভুটি ছাড়াই, পাস হয়ে গেল। পূর্ণ সমর্থন করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।কিন্তু এই বিলে কী আছে?ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য এবং ন্যাক্কারজনক ঘটনায় ধর্ষকের চরম শাস্তি। অপরাজিতায় নয়া গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন, ধর্ষণের ফলে নির্যাতিতা কোমায় চলে গেলে, ধর্ষককে মৃত্যুদণ্ডের বিধান। যা বিধান মনে করিয়ে দিচ্ছে মুম্বইয়ের অরুণা শানবাগের ঘটনা। যে নার্স নিজের হাসপাতালেই ধর্ষিতা হয়ে প্রায় ৪০ বছর কোমায় আচ্ছন্ন ছিলেন। কিন্তু ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ড হয়নি। রাজ্য সরকারের এই বিল আইনে পরিণত হলে অরুণাদের মতো অনেকে ন্যায়বিচার পাবেন বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়া ধর্ষণ করে খুনের ক্ষেত্রে আগের আইন অনুযায়ী ফাঁসির সাজা বহাল থাকছে। গণধর্ষণের ক্ষেত্রেও ন্যূনতম শাস্তি আজীবন কারাবাস ও জরিমানা। তাছাড়া আগের দু মাসের সময়সীমা কমিয়ে, এই বিলে বলা হয়েছে ধর্ষণের মামলার তদন্ত প্রাথমিক রিপোর্টের ২১ দিনের মধ্যে শেষ করতে হবে। ২১ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করা সম্ভব না হলে, ওই সময়সীমা আরও ১৫ দিনের বেশি বাড়ানো যাবে না। খসড়া বিলে নির্যাতিতাদের জন্য দ্রুত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে, বিশেষ আদালত এবং তদন্ত দল গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, বিলে বলা হয়েছে, নারী ও শিশুদের উপর ধর্ষণ বা নৃশংসতার ঘটনা তদন্তের জন্য “অপরাজিতা টাস্ক ফোর্স” গঠন করা হবে। একজন ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট অফ পুলিশ এর নেতৃত্বে থাকবে।

কিন্তু প্রশ্ন হল এই বিল আইনে পরিণত হবে কবে?এবিষয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, ইমিডিয়েটলি এই বিলকে আইনে পরিণত করা হোক।এর পাল্টা উত্তর দিতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার বক্তব্যের মাঝে বারংবার এ দিন বলেছেন বিধানসভায় পাশের পর রাজ্যপাল সই করুন। তারপর রাষ্ট্রপতির কাছে যাবে। আইনে পরিণত হবে। যার একটা ইতিহাস হয়ে থাকবে। সব রাজ্য এটাকে একদিন মডেল করবে। একই সঙ্গে বলেন, প্রধানমন্ত্রী করতে পারেননি বলে আমরা করেছি। প্রধানমন্ত্রী আপনি দেশের লজ্জা। আপনি মেয়েদের প্রোটেকশন দিতে পারেন না। তাই এদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে সরব হন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

একইসঙ্গে বারংবার তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা স্লোগান এবং একাধিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, “সবাই আমার বিরোধিতা করলেও, আমি তাঁদের বিরোধী নই।মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ধর্ষণ। যে সমাজে মেয়েরা ভাল থাকে না। সেই সমাজ ভাল থাকতে পারে না। আমি মনে করি, পরিবারের কাউকে হারিয়েছি।”

এদিকে এতকিছুর মধ্যেও বিনা ভোটাভুটিতে এদিন বিধানসভায় অপরাজিতা বিল পাস হয়ে গেলেও, শুধু সমর্থন জানিয়েই থামেননি বিরোধী দলনেতা। তিনি রাজ্যে ঘটে যাওয়া একের পর ধর্ষণের ঘটনার উল্লেখ করেছেন। প্রামাণ্য হিসেবে সামনে রেখেছেন বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টের প্রিন্ট আউট। কিন্তু স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় সাফ জানিয়ে দেন ওই তথ্যগুলোর সত্যাসত্য যাচাই না করে গ্রহণ করা যাবে না। শুভেন্দু পাল্টা যাচাই করার কথা বলেন। এই নিয়ে এক চোট তর্কাতর্কিও লেগে যায়।তবে গলা চড়িয়েও দমানো যায়নি মুখ্যমন্ত্রীকে। তিনি পাল্টা, সিবিআই-এর থেকে বিচারের দাবি জানিয়েছেন। বলেছেন, “আমরা প্রথম থেকেই ফাঁসি চেয়ে আসছি।”শুধু মমতা নয়। এদিন বিধানসভা থেকে ধর্ষণবিরোধী অপরাজিতা বিল পাশের পর সেই কথা মনে করিয়ে এক্স হ্যান্ডেলে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় লেখেন, ‘কড়া ধর্ষণবিরোধী আইন এনে পথ দেখিয়েছে বাংলা। এবার কেন্দ্রকে চূড়ান্ত পদক্ষেপ নিতে হবে।’

কিন্তু যে ধর্ষণবিরোধী বিল, ঐতিহাসিক দিন নিয়ে এত তোড়জোড় সেই বিল কবে আইনে পরিণত হয়? কবে সেই আইন কার্যকর হয়ে ধর্ষক সাজা পায়? এই বিল কিছুটা হলেও কি আরজিকর কান্ডের পর তৃণমূলের হারানো জমি ফিরিয়ে দিতে সাহায্য করলো শাসক দলকে? উত্তর দেবে সময়।