বাংলাদেশের বন্যার দায় সত্যিই কি ভারতের? জানুন আসল ফ্যাক্ট

কলকাতা: বাংলাদেশের বন্যার দায় ভারত নেবে কেন?ভারতের দিকে উঠছে আঙুল, আগুনে ঘি ঢালছে কারা?বন্যা রোধে আগে থেকে কেন কোনো ব্যবস্থা করতে পারল না বাংলাদেশ?১৯৯৩ কাট…

yunus modi

কলকাতা: বাংলাদেশের বন্যার দায় ভারত নেবে কেন?ভারতের দিকে উঠছে আঙুল, আগুনে ঘি ঢালছে কারা?বন্যা রোধে আগে থেকে কেন কোনো ব্যবস্থা করতে পারল না বাংলাদেশ?১৯৯৩ কাট টু ২০২৪,শোধ তুললো ভারত?জানুন আসল ফ্যাক্ট।

একেবারেই গুজবে কান দেবেন না। রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছিলই দেশটায়। সম্পূর্ণ টালমাটাল পরিস্থিতি। আর এবার প্রকৃতির অভিশাপের মুখে পড়লো বাংলাদেশ।

আচমকাই দেশটায় বন্যা পরিস্থিতি তীব্র আকার ধারণ করেছে ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লায়। বন্যার জলে তলিয়ে গেছে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, চাষের জমি। হাজারো মানুষ জলবন্দী। এসব এলাকায় নেই বিদ্যুতও। বন্ধ হয়ে গেছে মোবাইল নেটওয়ার্কও। বাংলাদেশে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে ক্রমশ।

আর ঠিক এই নিয়েই শুরু কাদা ছোড়াছুড়ি। অলরেডি নেটিজেনদের একাংশ ভারতের দিকে আঙুল তোলা শুরু করেছে। দাবি করা হচ্ছে, ত্রিপুরায় ডম্বুর হাইড্রোইলেক্ট্রিক পাওয়ার প্রজেক্ট এর গেট খুলে দেওয়ায় বন্যার জল ঢুকতে শুরু করেছে বাংলাদেশে। আর তাতেই নাকি তৈরি হয়েছে বন্যা পরিস্থিতি। এই সংক্রান্ত পোস্টে ছয়লাপ সোশ্যাল মিডিয়া। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই সিচুয়েশনে দাঁড়িয়ে ভারত কার দিকে আঙুল তুলবে? কারণ, ইতিমধ্যেই তীব্র বৃষ্টিপাতে ভারতের ত্রিপুরায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। মৃত্যু মিছিল ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে বলে জানিয়েছে রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর। নিখোঁজ একাধিক। রাজ্যের প্রায় সব নদীই বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। এর সঙ্গে মিথ্যে দায় চাপাচ্ছে বাংলাদেশ।
বিবিসির রিপোর্ট বলছে, লাস্ট ১৯৯৩ সালে বাঁধ খুলে দিয়েছিল ভারত। কিন্তু ২০২৪ এ‌ ঠিক কী ঘটলো? বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলছেন, আগাম কোনও সতর্কবার্তা না দিয়েই ভারত জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাঁধ খুলে দিয়ে অমানবিকতার পরিচয় দিয়েছে। বাংলাদেশের শিক্ষার্থী, জনগণ এতে ক্ষুব্ধ।
কিন্তু আদতেও কি তাই ঘটেছে?

না। ভারতের বিদেশ মন্ত্রক একটা বিবৃতি দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া এই ধরণের সমস্ত দাবি খারিজ করেছে। বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়া এই উদ্বেগ সঠিক নয়, বলা হয়েছে ওই বিবৃতিতে। এমনকি বিদেশ মন্ত্রক বিবৃতিতে জানিয়েছে আসল কারণ ও। ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া গোমতী নদীর অববাহিকা এলাকায় গত কয়েকদিন ধরে প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে। নিম্ন অববাহিকা অঞ্চলে বৃষ্টির দরুন জলপ্রবাহই বাংলাদেশের বন্যার প্রকৃত কারণ। ত্রিপুরা সরকারের বিদ্যুৎমন্ত্রী তো স্পষ্টভাবে জানিয়েও দিয়েছেন, গোমতী হাইড্রো ইলেকট্রিক প্রজেক্টের কোনও গেটই খোলা হয়নি। এটা তো মনে রাখতে হবে, ওই রিজার্ভারে ৯৪ মিটার পর্যন্ত জল ধারণ করার ক্ষমতা রয়েছে। বরং সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে ভারত।
কিভাবে? সেটাতে পরে আসছি তার আগে জানাবো বন্যা রোধে কেন ফেইলিওর বাংলাদেশ?

জানিয়ে রাখি, বিবিসির রিপোর্ট অনুযায়ী এই বন্যার বিষয়ে অন্তত তিন দিন আগে থেকে সতর্কতা ছিল বাংলাদেশে। এবং বিপজ্জনক মাত্রা অতিক্রম করার পূর্বাভাসও ছিল। সেই মতো নেয়া হয়েছিল প্রস্তুতিও। কিন্তু তারপরও এহেনও পরিস্থিতি হলো কি করে? তথ্য বলছে, বন্যা যে এরকম ব্যাপকতায় আসছে তা তাদের প্রাথমিক সমীক্ষায় ছিল না। এমনকি এ ধরনের আকস্মিক ও প্রবল মাত্রার বন্যার জন্য প্রস্তুতি নেওয়াটাও ‘কঠিন’ বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। মোদ্দা কথা বন্যা অতি প্রবলমাত্রার হয়েছে। খুবই বড় মাত্রার বন্যায় একদিনের প্রস্তুতি যথার্থ না। এটা আসলে গ্লোবাল চ্যালেঞ্জ আর কি।
কিন্তু সেই কারণে নিজেদের ব্যার্থতার দায় ভারতের উপর চাপাতে পারে না বাংলাদেশ অন্তত তেমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

যদিও এত কিছুর পরেও ভারতের বিদেশ মন্ত্রক বলেছে, ডম্বুর জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বাংলাদেশের সমতল অংশ থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে উচ্চভূমিতে অবস্থিত। এর উচ্চতা কম, যা থেকে বিদ্যুৎ তৈরি হয়। এখান থেকে বাংলাদেশেও ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ত্রিপুরা এবং পার্শ্ববর্তী জেলাগুলিতে ২১ অগস্ট থেকে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে ওই অংশে বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ বিঘ্নিত হয়েছে। কিন্তু আমরা বাংলাদেশকে বন্যা প্রসঙ্গে সমস্ত তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করছি।

অতএব এটা পরিষ্কার, ভারত অমানবিকতার পরিচয় দেয়নি এবং বাংলাদেশের সাথে অসহযোগিতাও করেনি।