বিনা চিকিৎসায় রোগী মৃত্যু আর কতদিন?

কলকাতা: অভয়া তিলোত্তমাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের অবশ্যই সুবিচার চাই। কিন্তু এত এত সাধারণ মানুষের হয়রানি, বিনা চিকিৎসায় রোগীমৃত্যু, হাসপাতালের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেও চিকিৎসা পরিষেবা…

RG kar new

কলকাতা: অভয়া তিলোত্তমাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের অবশ্যই সুবিচার চাই। কিন্তু এত এত সাধারণ মানুষের হয়রানি, বিনা চিকিৎসায় রোগীমৃত্যু, হাসপাতালের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেও চিকিৎসা পরিষেবা না পাওয়া! তাঁদের দোষটা কোথায়? সাধারণ মানুষের জীবনে কোনো দাম নেই? চিকিৎসকরা তো চিকিৎসা পরিষেবা দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ। টতাহলে কেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কে পায়ে ধরে চিকিৎসা পরিষেবা চাইতে হচ্ছে?

এ কেমন দিন দেখতে হচ্ছে রাজ্যের মানুষকে? গোটা দেশকে? দিনের পর দিন পার, কিন্তু সরকারি হাসপাতালে জুনিয়র চিকিৎসকদের কর্মবিরতি চলছে তো চলছেই। আরজিকর কাণ্ডে পুলিশি তদন্তে ভরসা রাখতে পারেননি আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীরা। মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসেও ভরসা ছিল না তাঁদের। ভালো কথা। হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্তভার গেছে সিবিআই এর হাতে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন সিবিআইকে তদন্তের সব রকম সহযোগিতা করা হবে। হাইকোর্ট চিকিৎসকদের চিকিৎসা পরিষেবা চালু করার আর্জি জানিয়েছে। গোটা রাজ্য গোটা দেশ আরজিকর কাণ্ডে সুবিচার চেয়ে পথে নেমেছে। আন্দোলন চলছে। কিন্তু এত কিছুর পরেও চিকিৎসকদের কর্মবিরতি সেই তিমিরেই রয়ে গেছে। কেন? তারা বলছেন আসল অপরাধী কে না ধরা পর্যন্ত তাদের এই আন্দোলন চলবে। আবার রোগীর সহ তাদের পরিবারকেও পাশে থাকার আর্জি জানাচ্ছেন তাঁরা। ভালো কথা। কিন্তু যেসব সাধারন মানুষের জীবন বিপন্ন, তাহলে তাঁদেরকে কে দেখবে? তাদের জীবন বাঁচানোর দায় কার?
আন্দোলন কি অন্য ফরম্যাটে করা যায় না? করা যেত না? প্রশ্ন সাধারণ মানুষেরই একাংশের।চিকিৎসারা কাজ শুরুর প্রথম দিনে ওথ নিতে থাকেন৷ চিকিৎসকরা চিকিৎসা পরিষেবা দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ।

তাঁদের সহযোগিতায় অসুখ থেকে মুক্তি পান সাধারণ মানুষ৷ রোগীদের পরিষেবা দিতে তাঁরা নিজেদের সুখের পরোয়া করেন না। ইমার্জেন্সি হলে রাতের কাঁচা ঘুম ছেড়েই ছোটেন ডাক্তারি করতে। চিকিৎসকদের রুল বুকে দিন-রাতের কোনও ফারাক নেই। তাঁদের আশু পদক্ষেপেই কোনও রোগীর প্রাণ বেঁচে যায়। সেই কারণেই অনেকে ভগবানের পরেই স্থান দেন চিকিৎসককে। এই চিকিৎসকরা যদি পাঁচ দিন ধরে টানা কর্মবিরতি পালন করেন, OPD বন্ধ রাখেন তাহলে সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়? না মৃত্যু আটকানো ডাক্তারদের কাজ নয়, কিন্তু চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়াটা তো তাঁদের কর্তব্য। সেটা ভুলে গেলে চলবে কেমন করে?

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই বলেছেন, আরজিকর কাণ্ডে সমস্ত রকম আন্দোলন যুক্তিসঙ্গত। কিন্তু সমস্ত চিকিৎসকরা যেভাবে কর্ম বিরতি পালন করে চলেছেন, এবং এই কারণে যেভাবে রাজ্যে একের পর এক মৃত্যু ঘটছে তাতে তিনি উদ্বিগ্ন। আর সেই কারণে শেষে কিনা
চিকিৎসকদের পায়ে ধরে অনুরোধ করতে হচ্ছে পরিষেবা দেওয়ার জন্য?

হ্যাঁ এদিন বেহালার অনুষ্ঠান থেকে মমতা বলেন, ‘‘চিকিৎসকদের আমি আবেদন জানাচ্ছি সাধারণ মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে। তিন জন ইতিমধ্যে বিনা চিকিৎসায় মারা গিয়েছেন। চিকিৎসা দিতে কিন্তু আপনারা অঙ্গীকারবদ্ধ। পাঁচ দিন হয়ে গেল। পায়ে ধরে বলছি, চিকিৎসা করুন। তার জন্য আপনারা নিযুক্ত। অনেক আন্দোলন করেছেন। কেউ আটকায়নি। এবার কাজে নামুন, এটা আমার আবেদন। আমার স্বাস্থ্য সচিব এই আবেদন জানিয়েছেন। আজ আমিও আবেদন করছি। সিনিয়র ডাক্তাররা পরিষেবা দিচ্ছেন, তাঁদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’’

কিন্তু মমতার আবেদনে চিরে ভিজছে না। আবেদন নিবেদন সত্ত্বেও এখনই কাজে ফিরছেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তাঁদের বক্তব্য, এখনও তাঁদের সব দাবি পূরণ হয়নি। এক আন্দোলনকারী বলেন, ‘‘আমরা রোগী পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত। দ্রুত কাজে যোগ দিতে চাই। কিন্তু আমাদের কাছে এখনও সব স্পষ্ট হয়নি। আমাদের সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। আমরা আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়েছি। সিবিআইয়ের তদন্তে আমরা সদুত্তর পেলে পরবর্তীকালে ভেবে দেখব।’’

কিন্তু, প্রশ্ন হল কী ভেবে দেখবেন তাঁরা? চিকিৎসা পরিষেবা বন্ধ রেখে নিহত মহিলা চিকিৎসকের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অপরাধের সুবিচার চাওয়ার এটাই বুঝি শ্রেষ্ঠ ভাষা? একটা প্রাণ গেছে, তারই সুবিচারের আশায় এতো কাঠখড় পোড়ানো। এরপর বাকি যে এত এত প্রাণ যাচ্ছে? সেগুলোর সুবিচার কে করবে? তাঁর জন্য কে বা কারা পথে নামবে? প্রশ্ন উঠছে। কারেন্ট সিচুয়েশন দেখে শুনে ওয়াকিবহাল মহল বলছে, বেঁচে থাকার অধিকার যেমন সবার আছে তেমনি চিকিৎসা পাওয়ার অধিকারও সবার আছে। মনে রাখা উচিৎ, সেবামূলক কাজে জড়িয়ে রয়েছেন চিকিৎসকরা। সেখানে সহকর্মী/সহপাঠীর খুন ধর্ষণের জাস্টিস পেতে যেমন আন্দোলন দরকার, তেমন সর্বসাধারণকে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়াও দরকার। প্রয়োজনে দুটোকে ব্যালেন্স করা দরকার বলে মত ওয়াকিবহাল মহলের।