১৪ই আগস্ট রাতেই হেস্তনেস্ত! মেয়েদের লড়াই রাজপথে

কলকাতা: এই রাত দখল করবেন মেয়েরা! স্বাধীনতা দিবসের মধ্যরাতে নারী স্বাধীনতার ঝড় উঠবে! এই প্রতিবাদ অনেক কিছু কে হেস্তনেস্ত করে দেবে! সব সহ্যের বাঁধ ভেঙে…

Picsart 24 08 14 02 07 01 821

কলকাতা: এই রাত দখল করবেন মেয়েরা! স্বাধীনতা দিবসের মধ্যরাতে নারী স্বাধীনতার ঝড় উঠবে! এই প্রতিবাদ অনেক কিছু কে হেস্তনেস্ত করে দেবে! সব সহ্যের বাঁধ ভেঙে গেছে! দেশ স্বাধীন হওয়ার ৭৫ বছর পরেও সত্যিই কতটা স্বাধীন অভয়া, তিলোত্তমারা?কী ঘটবে ওই রাতে? আর অবহেলা নয়। মেয়ে মানেই ভোগ্যপণ্য নয়। চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।

“মেয়েটার একা থাকা ঠিক হয়নি”, “মেয়েটার একা ওদিকে যাওয়া ঠিক হয়নি”, “রাত মেয়েদের জন্য সেফ নয়”, “মেয়েটার পোশাক সেফ নয়”, “মেয়েটার চরিত্র ঠিক নয়”; সব ক্লিশে ধারণা মুছে দেবেন বীরাঙ্গনারা। কেন এতো নিয়ম? কেন এতো বাঁধন? কেন সবটাই মেয়েদের জন্য? স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে আরজিকরে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ খুনের ঘটনার নৃশংসতায় শিউড়ে উঠছে গোটা দেশ। আর বেড়ে উঠছে প্রশ্নের পাহাড়। এই ঘটনা আরও একবার বুঝিয়ে দিল, নারী মুক্তি, নারীর অধিকার, নারী স্বাধীনতা নিয়ে সমাজকে প্রশ্ন করার সময় এসেছে।
একবার ভেবে দেখুন, কোন আজাদীর স্লোগান ওঠে স্বাধীনতা দিবসে? এটা কিসের স্বাধীনতা? যখন মেয়েদের পায়ে বেড়ি পরিয়ে সমাজ চলছে একই নিয়মে।
না, আর নয়। দিন নয়, সোজা রাত দখল করবেন মেয়েরা! ১৪ অগাস্ট মাঝ রাতে প্রতিবাদে রাস্তায় নামবেন মহিলারা। ‘The Night Is Ours’ নাম দিয়ে কলকাতা থেকে জেলায় জেলায় প্রতিবাদে মুখর হবেন প্রত্যেকে। স্বাধীনতা দিবসের সূর্যোদয়ের আগের রাতে বাংলার প্রত্যেক রাস্তা দখল করবেন মেয়েরা। এই ‘রাত দখলের’ প্রথম ডাক দিয়েছেন প্রেসিডেন্সি কলেজের এক প্রাক্তনী, রিমঝিম সিনহা।
সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা পোস্ট করে জানিয়েছিলেন “সারারাত বাইরে থাকবো।
যারা থাকতে চান, কমেন্টে জানান।” এই পোস্টের পরেই শেয়ার-কমেন্টের ঝড় বয়ে যায়। রাত দখলের ডাক ছড়িয়ে পড়ে দিকে দিকে। বলতে গেলে, সোশ্যাল মিডিয়াতেই সংগঠিত হয় এই অভিযান। বুঝতে বাকি নেই
এই রাতে প্রতিবাদের ঢেউ আঁচড়ে পড়বে রাজপথে।
যাদবপুর, কলেজ স্ট্রিট ও অ্যাকাদেমি, শহরের এই তিন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় জড়ো হবেন প্রতিবাদী মহিলারা।
এই আন্দোলনে অংশ নেওয়ার জন্য রিমঝিম এর ভিডিও নিজের ওয়ালে পোস্ট করে তিনটে ফোন নম্বরও শেয়ার করেছেন অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। সঙ্গে ‘জাস্টিস ফর আরজিকর’ স্লোগান তুলে লেখা ‘স্বাধীনতার মাঝরাতে নারী স্বাধীনতার জন্য’। সত্যিই তো। “আমি রাতেই থাকবো। ১৪ই অগাস্ট রাত ১১.৫৫ নাগাদ স্বাধীনতার, আমার নারী স্বাধীনতার জন্য রাতে বাইরে থাকবো। গান গাইবো-গান শুনবো-আড্ডা দেবো।
যা ইচ্ছে তাই করবো”;
লিখেছিলেন রিমঝিম। সেটাই অক্ষরে অক্ষরে সত্যি করে
আরজিকরের ঘটনার প্রতিবাদে চিকিৎসকদের পাশে যে তারকা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও দাঁড়াতে শুরু করেছেন, তা ফের স্পষ্ট হচ্ছে। কলকাতার যাদবপুর থেকে শুরু করে জেলার সোদপুর, নিউ টাউন বিশ্ব বাংলা গেট, সিঁথির মোড় থেকে শুরু করে শ্রীরামপুর, উত্তরপাড়া, নৈহাটি, লিলুয়া, হাবড়া, বনগাঁ, বর্ধমান, মেদিনীপুর, নবদ্বীপ, বহরমপুর, ক্যানিং, চন্দননগর, দুর্গাপুর সহ রাজ্যের দিকে দিকে জমায়েত হবে ১৪ই অগস্ট রাতে। বাংলার প্রত্যেক এলাকায় আরজিকরের নির্যাতিতার হয়ে বিচার চাইবেন মেয়েরা। সেই সঙ্গে রাতের অন্ধকারেও যাতে মেয়েরা সুরক্ষিত থাকেন, ১৪ অগাস্ট রাত থেকে শুরু হবে সেই দাবিও।

হাসপাতাল কেন, কারোর আবার মনে হয়েছে, বহু মহিলা বাড়িতেও সুরক্ষিত নয়, তাই বাড়ি থেকেই প্রতিবাদ শুরু হোক। আওয়াজ তুলছেন নারীরা। হ্যাঁ এবার বুঝতে হবে, নিরাপত্তা আদায় করে নেওয়াটা আমাদের কাজ নয়। দাবী নয়। এটা আমাদের প্রাপ্য। কই পুরুষদের তো নিরাপত্তা চাইতে হয় না। তাহলে মেয়েদের কেন? শুধু স্বস্তিকা নন, শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে মধুমিতা সরকার, সোহিনী সরকার, ঋতাভরী চক্রবর্তীর মতো তারকারাও
এই জমায়েতে সামিল হওয়ার কথা জানিয়েছেন নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়া ওয়াল থেকে। প্রতিটা ফেসবুক পোস্টের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে #justiceforRGKar আর #stoprapeculture হ্যাশট্যাগ। আরজি করের নির্যাতিতার সুবিচার থেকে নারী স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেওয়ার দাবি তুলে, অন্যায়ের শেষ দেখতে চাইছেন তাঁরা। তবে এতেও পুরুষতান্ত্রিক সমাজ অসুবিধা দেখেছে। মহিলারা রাত জেগে মিছিল করবে শুনে অনেক পুরুষ বা ছেলেই যেভাবে উদ্বিগ্ন। কিন্তু এই প্রতিবাদের ভাষায় দাঁড়ি পড়বে না। এই প্রতিবাদ বুঝিয়ে দেবে এখনো সব শিরদাঁড়া বেঁকে যায়নি। রাজধানী দিল্লি হোক বা কলকাতা, এক একটা অভয়ার মৃত্যু, নারী আন্দোলনের পরিধি বাড়াচ্ছে। হয়তো সত্যিকারের পরিবর্তন দেরিতে হলেও আসছে আমাদের দেশে। আর আরজি কর চত্বর ছেয়ে আছে বিক্ষোভে, চিৎকার শোনা যাচ্ছে, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’। সুবিচারের আশায় কাটছে দিন। কিন্তু এখনও প্রত্যেকের মনের কোণে একটাই প্রশ্ন জেগে, আদৌ সুবিচার পাবে তো তিলোত্তমা?

ছবি : ফেসবুক