সন্দেশখালির ‘বেতাজ বাদশা’! ১৯টি তালা ভেঙে শাহজাহানের ডেরা থেকে কী উদ্ধার করল ইডি?

সন্দেশখালির ‘বেতাজ বাদশা’! ১৯টি তালা ভেঙে শাহজাহানের ডেরা থেকে কী উদ্ধার করল ইডি?

cbi-searching-for-shahjahan-sheikhs-mobile

ed

কলকাতা: রেশন দুর্নীতির তদন্তে তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখের ডেরায় গিয়ে মার খেতে হয়েছিল ইডি-র আধিকারিকদের৷ বুধবার ১৯ দিন পর উত্তর ২৪ পরগণার সেই সন্দেশখালিতে ফের হানা দিলেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা৷ এবার একেবারে পুরোদস্তুর প্রস্তুতি নিয়ে৷ তালা ভেঙে তাঁরা ঢোকেন শাহজাহান শেখের বাড়িতে৷ এদিন দু’জন চাবিওয়ালাকে সঙ্গে নিয়েই গিয়েছিল ইডি৷ ৭টা ৪৫ মিনিট নাগাদ তালা খুলে ভিতরে ঢুকে পড়েন অফিসাররা৷ শুরু হয় তল্লাশি পর্ব৷   

বুধবার সাত সকালে ৫টি গাড়িতে ১২৫ জনেরও বেশি কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানকে নিয়ে সন্দেশখালি পৌঁছন সাত জনের একটি দল৷ তবে পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এদিন ‘রক্ষাকবচ’ নিয়েই ময়দানে নেমেছিলেন ইডি আধিকারিকরা৷ তাঁরা সেখানে পৌঁছনোর পরই শাহজাহানের বাড়ি  ঘিরে ফেলেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা। তাদের সঙ্গে ছিল কাঁদানে গ্যাস। মোতায়েন করা হয় ন্যাজাট থানার পুলিশকেও৷ শাহজাহানের বাড়ির মূল দরজার সামনে পাহারায় সে রাজ্য পুলিশ। জানা গিয়েছে, ভিডিওগ্রাফার-সহ মোট ১৩ জন শাহজাহানের বাড়ির ভেতরে ঢুকেছিলেন৷ ছিলেন ছয় ইডি আধিকারিক৷ সাক্ষী হিসাবে ঢুকেছিলেন দু’জন স্থানীয় বাসিন্দা। কিন্তু, চারিদিকে চিরুনি তল্লাশি চালিয়ে মিলল কী? 

বুধবার শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে ঢুকে পদে পদে বাধা পেতে হয় ইডি-র আধিকারিকদের৷ এদিন বিক্ষুদ্ধ গ্রামবাসীদের আক্রমণের মুখে পড়তে হয়নি
ঠিকই, কিন্তু বাড়ির ভিতরে বারবার হোঁচট খেতে হয়েছে ইডি আধিকারিকদের৷ বাড়ির প্রায় সর্বত্রই তালা৷ যার একটিও চাবি পাওয়া যায়নি৷ ফলে বারবার তালা ভেঙে ছানবিন করতে হয়েছে৷ সব শেষে মিলেছে কিছু ‘অ-মূল্য’ রতন৷ 

জানা গিয়েছে, শাহজাহানের বাড়িতে মোট ১৯টি তালা ভাঙতে হয়েছে ইডি-কে৷ দরজা থেকে আলমারি, ড্রয়ার, সবকিছুই ছিল তালাবন্দী৷ তথ্য প্রমাণের আশায় ইডি আধিকারিকরা উঁকি দিয়েছিলেন চিলেকোটার ঘরেও৷ তবে কোথাও গুরুত্বপূর্ণ কিছু মেলেনি৷ আলমারি এবং ড্রয়ারের তালা ভেঙে দেখা যায়, তাতে রয়েছে কিছু জামাকাপড় এবং গৃহস্থালির সরঞ্জাম৷ বাড়ির এক তলার একটি ঘরে তল্লাশি চালিয়ে কিছু নথি পাওয়া যায়। এ ছাড়া ছিল ৫০০ টাকার পুরনো পাঁচটি নোট৷ সেগুলি বাজেয়াপ্ত করেছে ইডি৷ তল্লাশি শেষে বাড়ির দরজায় একটি নোটিস সেঁটে দিয়ে এসেছেন কেন্দ্রীয় এজেন্সির অফিসাররা৷ আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে কলকাতায় হাজিরা দিতে বলা হয়েছে তাঁকে৷ 

গত ৫ জানুয়ারি রেশন ‘দুর্নীতি’কাণ্ডে সন্দেশখালির ‘নবাব’ শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি অভিযানে গিয়ে রক্ত ঝরেছিল ইডি-র। সে দিন ইডি আধিকারিকেরা তৃণমূল নেতার বাড়িতে ঢুকতেই পারেননি। রে রে করে তেড়ে গিয়েছিল শাহজাহানের অনুগামীরা৷ ওই দিন থেকেই নিখোঁজ শাহজাহান৷ তাঁর হদিশ পেতে এবং কে বা কারা ওই বাড়িতে আসা যাওয়া করছে সেদিকে  নজর রাখতে আদালতের নির্দেশে গত ১৬ জানুয়ারি শাহজাহানের বাড়ির সামনে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়। তবে কি সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর আগেই বাড়ি থেকে যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ নথি সরিয়ে ফেলা হয়েছে? এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে আজই সিসিটিভি ক্যামেরার ছবি খতিয়ে দেখার জন্য আদালতে আবেদন জানাবে ইডি৷ 

শাহজাহান এককথায় সরবেড়িয়ার ‘বেতাজ বাদশা’৷ এক সময় বামপন্থী এই নেতা  এখন খাঁটি তৃণমূল৷ পদ জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ৷ তবে স্থানীয়দের কথায়, শাহজাহানের অনুমতি বিনা এলাকায় একটা পাতাও নড়ে না৷ মাছের ভেড়ি থেকে শুরু করে ইট ভাটা, এমনকি, বাংলাদেশ থেকে চোরাপথে আসা জামাকাপড়ের রমরমা কারবার, সবটাই চলে শাহজাহান শেখের অঙ্গুলিহেলনে৷  শাহজাহানের নামে রয়েছে আস্ত একটা বাজার৷ ৫ বিঘা জমির উপর সেই বিশাল বাজারে মাছের দোকান থেকে সবজি, জামাকাপড় সবই বিক্রি হয়। সূত্রের খবর, ওই বাজার থেকে কোটি কোটি টাকা আয় করেন শাহজাহান। 

সোমবার মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে রাজ্যের প্রায় সর্বত্রই ‘সংহতি যাত্রা’ পালন করা হয়৷ মিছিল হয়েছে সন্দেশখালিতেও৷ সেই মিছিল থেকেই তৃণমূল বিধায়ক সুকুমার মাহাতো শাহজাহানের কর্তৃত্বের কথা কার্যত স্বীকার করে নেন৷ তিনি বলেন, আড়ালে থাকা শাহজাহানের নির্দেশেই সংগঠন চলছে। তিনি আছেন। সুকুমারের কথায়, ‘রাতের সব তারাই আছে দিনের আলোর গভীরে।’ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *