কলকাতা: করোনার করাল গ্রাস থেকে এখন অনেকটাই মুক্ত আমাদের পৃথিবী৷ তবে বিপদ যেন পদে পদে৷ করোনার মাঝেই চোখ রাঙাচ্ছিল ম্যাঙ্কিপক্স৷ আর এবার মথাচাড়া দিয়েছে কলেরার আতঙ্ক৷ পৃথিবীর নানা দেশে কলেরার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে বলে খবর মিলেছে। ১৯৯৩ সালের পর এই বছর লেবাননে প্রথম কলেরা আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। অন্যদিকে কলেরায় ছেয়ে গিয়েছে লেবাননের যুদ্ধবিধ্বস্ত প্রতিবেশী রাষ্ট্র সিরিয়া৷ সেদেশে ইতিমধ্যেই মৃত্যু হয়েছে ৩০ জন কলেরা আক্রান্ত রোগীর৷ আরও একটি হিংসাকবলিত দেশ হাইতিকেও গ্রাস করেছে কলেরা৷ প্রশ্ন হল কলেরা আসলে কী?
আরও পড়ুন-পৃথিবীতে আসছে ভিনগ্রহীরা! ‘২৬৭১ সাল থেকে ঘুরে এসে’ ভবিষ্যদ্বাণী করলেন অ্যালারিক
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডায়রিয়া উপসর্গবিশিষ্ট অসুখই হল কলেরা। এই রোগের দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা না গেলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রোগীর জীবনহানির আশঙ্কা থাকে৷ সুষ্ঠু পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থা না থাকা, জীবাণুমুক্ত জলের অভাব এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার অপ্রতুলতা কলেরার ভয়াবহতা বহুগুণ বাড়িয়ে তোলে৷ কলেরার এই ভয়াল রূপ চাক্ষুষ করছে একাধিক দেশের নাগরিক।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রস আধানম গেব্রিয়েসাস টুইটে জানিয়েছেন, ‘দ্বন্দ্ব এবং দারিদ্রকে ভিত্তি করেই কলেরার বাড়বাড়ন্ত দেখা দেয়। তবে এর পিছনে জলবায়ুর পরিবর্তনেরও প্রভাব রয়েছে। বন্যা, সাইক্লোন, খরার মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়গুলিও শুদ্ধ পানীয় জলের অভাব তৈরি করে। কলেরা ছড়িয়ে পড়ার মতো পরিবেশ সৃষ্টিতে ইন্ধন জোগায়। কলেরার ঘটনা ক্রমশ হ্রাস পেতে শুরু করেছিল। তবে গত কয়েকবছর ফের উদ্বেগজনকভাবে কলেরায় আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা বাড়তে শুরু করেছে।’
বিভিন্ন দেশে যেভাবে কলেরা ছড়াচ্ছে তা নিয়ন্ত্রণে দ্রুত প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে৷ রোগীকে দিতে হবে ইন্ট্রাভেনাস ফ্লুইড ও অ্যান্টিবায়োটিক। এর জন্য প্রয়োজন নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য পরিকাঠামো৷ এই পরিকাঠামো ঠিক না থাকলে সাধারণ অসুখও প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে।
কখন কলেরা প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে?
কলেরা সংক্রমণ দেখা দিলে অ্যাকিউট ডায়ারিয়ার মতো উপসর্গ তৈরি হয়। কোনও ব্যক্তি ভিব্রিও কলেরি নামে ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রামিত খাদ্য ও জল গ্রহণ করলে কলেরা আক্রান্ত হয়। কলেরার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে শুধু স্বাস্থ্য ব্যবস্থাই ভেঙে পড়ে না, তা আর্থসামাজিক পরিকাঠামোকেও আঘাত করে৷ কলেরার মৃদু বা মাঝারি উপসর্গ দেখা দিলে প্রাণহানীর আশঙ্কা থাকে না৷ কিন্তু, প্রবল উপসর্গ দেখা দিলে প্রাণও যেতে পারে। ঘনঘন পাতলা পায়খানা হতে থাকলে রোগীর শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে জল বেরিয়ে যায়। একাধিক অঙ্গ বিকল হতে শুরু করে ও শেষে মৃত্যু হয়৷
মহামারীর আশঙ্কা কতখানি?
শুরুতেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা না হলে এই অসুখ মহামারীর রূপ ধারণ করতে পারে। টানা তিন বছর কোনও অঞ্চলে নিশ্চিতভাবে কলেরা সংক্রমণের খবর মিললে, সেই অঞ্চলটিকে কলেরা প্রাদুর্ভাবযুক্ত অঞ্চল বলে ধরে নেওয়া হয়। এই অসুখ মরশুমি হতে পারে আবার বিক্ষিপ্তভাবেও বছরের বিভিন্ন সময় দেখা দিতে পারে। পরিশুদ্ধ পানীয় দলের অভাব, ছোট জায়গায় একসঙ্গে অনেক লোক গাদাগাদি করে থাকলে এই রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>