নয়াদিল্লি: করোনা অতিমারী যেমন গোটা বিশ্বের সাধারণ মানুষের কাছে একটি বিপর্যয়ের মতো ধেয়ে এসেছে, সেরকমই করোনা পরিস্থিতি আবার ধনকুবেরদের পকেট বেশি করে ভর্তি করেছে। করোনাকাল কারো কাছে হয়েছে ‘পৌষ মাস’, তো কারো কাছে ‘সর্বনাশ’। এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন ‘অক্সফ্যাম’এর তরফে।
‘ইনইক্যুয়ালিটি ভাইরাস’ অর্থাৎ ‘বৈষম্যের ভাইরাস’ শিরোনাম নিয়ে প্রকাশিত এই রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার কথা সুইৎজারল্যান্ডের দাভোসের একটি বৈঠকে। তার আগেই মানবাধিকার সংগঠন ‘অক্সফ্যাম’এর এই রিপোর্টের তথ্য। কি বলা হয়েছে এই রিপোর্টে?
লকডাউনের সময় ভারতে ধনকুবেরদের সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছে গড়ে ৩৫%। যার জেরে দেশের প্রায় ৮৪% পরিবারের আয় কমেছে নানা কারণে। উল্লেখ্য, গত বছর এপ্রিল মাসেই দেশে প্রতি ঘন্টায় কাজ হারিয়েছেন প্রায় ১.৭ লক্ষ মানুষ। এই চাঞ্চল্যকর রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে যে, গত বছর লকডাউন শুরুর সময় থেকে দেশের ১০০০ ধনকুবেরের আয় বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে যে, দেশের ধনী ব্যক্তিদের আয় বৃদ্ধির কারণে দেশের আর্থিক বৈষম্য আরো ভয়ঙ্কর অবস্থায় পরিণত হয়েছে। একটি তথ্য দিয়ে এখানে বলা হয়েছে যে, রিলায়েন্স জিও’র মালিক মুকেশ আম্বানির বর্তমান ঘন্টাপিছু যা আয়, সেই পরিমান অর্থ রোজগার করতে একজন অদক্ষ শ্রমিকের ১০ বছর লেগে যাবে। এছাড়াও এই রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, দেশের ১১ জন শীর্ষক ধনকুবেরের কর ১% বৃদ্ধি করা হলে দেশের ‘জন ঔষধি প্রকল্পে’র চিত্রটা অন্যরকম হত।
এছাড়াও করোনাকালে শারীরিক দূরত্ব ও সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার প্রসঙ্গ টেনে উক্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে যে ভারতের মতো দেশে ৩২% মানুষের ক্ষেত্রে শারীরিক দূরত্ব বিলাসিতা ছাড়া কিছুই না; কারণ এখানে অনেক বাড়িতেই খুব কম জায়গায় অনেক মানুষ বসবাস করেন। এছাড়াও দেশের ৩০% মানুষের কাছে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার জোগাড় করাও দুঃসহ বলে বলা হয়েছে এই সমীক্ষালব্ধ রিপোর্টে। এইসমস্ত সমস্যার কথা উল্লেখের পর এই রিপোর্টে ভারত সরকারকে করণীয়জনক একটি ব্যবস্থার কথাও জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন ‘অক্সফ্যাম’। এই রিপোর্টে এই বিষয়ে বলা হয়েছে যে, বর্তমানে সরকারের উচিত কাজের নূন্যতম মজুরি বৃদ্ধি করা, এবং এখানে ভবিষ্যতেও এই মজুরি নিয়মমাফিক বৃদ্ধির পরামর্শও দিয়েছে ‘অক্সফ্যাম’। এই পাশাপাশি বিশ্বে ধনকুবেরদের আরো ধনী হয়ে ওঠাকে ‘বিস্ময়কর’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে মানবাধিকার সংগঠন ‘অক্সফ্যাম’ তরফের এই রিপোর্টে।