নিজস্ব প্রতিনিধি: ২৫,৭৫৩ জনের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। সোমবার সকালে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি শাব্বার রশিদির বেঞ্চ এই ঐতিহাসিক নির্দেশ দিয়েছেন। লোকসভা নির্বাচন পর্বের মধ্যেই এই রায় যে তৃণমূলকে প্রবল অস্বস্তিতে ঠেলে দিল সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখছে না। কিন্তু কেন?
ঘটনা হল নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় যখন একের পর এক রায় দিয়েছেন সেগুলিকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ বা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে এসএসসি এবং রাজ্য। তখন প্রকাশ্যে তৃণমূল নেতাদের বলতে শোনা গিয়েছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে সেই সমস্ত রায় দিয়েছিলেন তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে অভিজিৎ যে নির্দেশ দিয়েছিলেন তার থেকেও কড়া নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি দেবাংশু বসাকের বেঞ্চ। তাই বিরোধীদের এই অভিযোগ আরও জোরদার হল যে, তৃণমূল অপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল। অর্থাৎ টাকা নিয়ে যে চাকরি হয়েছিল তার বড় অংশ শাসকদলের এক শ্রেণির নেতা-নেত্রীদের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল বলে যে অভিযোগ বিরোধীরা এতদিন ধরে করে আসছেন, এবার তা আরও গতি পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। রাজনৈতিক মহলের মতে এদিনের রায় স্পষ্ট বুঝিয়ে দিল তৃণমূল সরকারের আমলে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সীমাহীন দুর্নীতি হয়েছে। সেই দায় অবশ্যই নিতে হবে রাজ্য সরকারকে।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে নিয়োগ দুর্নীতি মামলার শুনানি ও রায় ঘোষণার জন্য বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি শাব্বার রশিদির বেঞ্চ গঠিত হয়েছিল। সম্পূর্ণ আদালতের নজরদারিতে এই মামলার তদন্ত করেছে সিবিআই। সেই জায়গা থেকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ হয়ে যাওয়ায় বাকি পর্বের নির্বাচনগুলিতে তৃণমূলের অস্বস্তি বাড়বে এটা আর নতুন কথা কি। সবচেয়ে বড় কথা বিরোধীরা ইতিমধ্যেই তৃণমূলের এক অন্যতম শীর্ষ নেতার দিকে অভিযোগে আঙুল তুলে নতুন উদ্যমে প্রচার করতে শুরু করে দিয়েছেন। বিরোধীদের দাবি সেই মাথাকেও শাস্তি দিতে হবে। কারণ শূন্যপদের থেকেও অতিরিক্ত ১১১৩ জনকে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছিল। এই সিদ্ধান্তের পিছনে ‘বড় মাথা’ অবশ্যই রয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। না হলে সেটা কখনও হতে পারে না। তাহলে কোন বড় মাথা ছিলেন সেখানে? সেই প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা। রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন যেহেতু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসনিক প্রধান, তাহলে এই দায় তাঁকেই নিতে হবে। অর্থাৎ সবদিক থেকে অস্বস্তি বেড়েছে তৃণমূলের। এর প্রভাব বাকি পর্বের লোকসভা নির্বাচনগুলিতে পড়বে বলেই রাজনীতির কারবারিদের একাংশের মত।