অভিষেকের নির্দেশেই মন্ত্রিত্ব হারালেন জ্যোতিপ্রিয়? নেপথ্যে কোন কারণ?

অভিষেকের নির্দেশেই মন্ত্রিত্ব হারালেন জ্যোতিপ্রিয়? নেপথ্যে কোন কারণ?

jyotipriya

নিজস্ব প্রতিনিধি:  মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন তৃণমূল কংগ্রেস তৈরি করেন ঠিক সেই সময় থেকে, অর্থাৎ দলের জন্মলগ্ন থেকে তাঁর পাশে যারা ছিলেন তাঁদের একাংশ বহুদিন আগেই ‘সাইড’ হয়ে গিয়েছেন। তাঁদের সেই রমরমা আর নেই। দলে থেকেও তাঁদের একটা বড় অংশ আজ গুরুত্বহীন। কাদের কথা বলা হচ্ছে সেটা সকলেরই জানা। আর সেই ‘টিম মমতার’ অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে শুক্রবার মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

সূত্রের খবর দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই এই পদক্ষেপ করা হয়েছে। অর্থাৎ অভিষেকের সিদ্ধান্তে মান্যতা দিয়েছেন (নাকি দিতে বাধ্য হয়েছেন?) মুখ্যমন্ত্রী। রেশন দুর্নীতি মামলায় সাড়ে তিন মাস ধরে জেলবন্দি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। গত ২৭ অক্টোবর গ্রেফতার হয়েছিলেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হল তাঁকে। রাজ্যের দুই মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা এবং পার্থ ভৌমিক এবার থেকে জ্যোতিপ্রিয়ের হাতে থাকা দুটি দফতরের দায়িত্ব সামলাবেন। উল্লেখ্য বন দফতরের পাশাপাশি শিল্পোদ্যোগ ও শিল্প পুনর্গঠন দফতরেরও দায়িত্ব ছিল জ্যোতিপ্রিয়ের হাতে। নবান্নের নির্দেশ অনুযায়ী এবার বন দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী হিসেবে থাকবেন বীরবাহা হাঁসদা। অন্যদিকে সেচ ও জল পরিবহণ দফতরের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক এবার থেকে জ্যোতিপ্রিয়ের হাতে থাকা শিল্পোদ্যোগ এবং শিল্প পুনর্গঠন দফতরেরও দায়িত্ব সামলাবেন।

উল্লেখ্য শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেফতার হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই তাঁর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি তাঁকে দল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সাসপেন্ড করা হয়। কিন্তু জ্যোতিপ্রিয়ের বিরুদ্ধে কেন সেই পথে হাঁটছে না তৃণমূল, সেই প্রশ্ন বহুদিন ধরেই তুলছিলেন বিরোধীরা। যা তৃণমূলের কাছে বেশ অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছিল। তাৎপর্যপূর্ণভাবে  তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি একটি সংবাদ মাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় ইঙ্গিতে বুঝিয়েছিলেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককেও শীঘ্রই মন্ত্রিত্ব থেকে হয়ত সরিয়ে দেওয়া হবে। সেটাই এবার সত্যি হল।

ঘটনা হল জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক গ্রেফতার হওয়ার পর তাঁকে মন্ত্রিত্বে রেখে দেওয়াটা মেনে নিতে পারছিলেন না অভিষেক, এমনটাই সূত্রের খবর। জ্যোতিপ্রিয় কোনও দিনই  অভিষেকের ঘনিষ্ঠ বৃত্তের মধ্যে ছিলেন না। আর থাকার কথাও নয়। উল্লেখ্য গত বছরের নভেম্বর মাসে রেশন দুর্নীতি মামলায় ধৃত জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোর জন্য সল্টলেকের ইডি অফিস থেকে বের করে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলেন তদন্তকারীরা। সেই সময় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে তলব করেছিল ইডি। সেদিন অভিষেককে তলব করার বিষয়টি নিয়ে জ্যোতিপ্রিয়ের মতামত জানতে চেয়েছিলেন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরা। সেই প্রশ্ন শুনে সেদিন জ্যোতিপ্রিয়কে ইঙ্গিতপূর্ণ ভাবে বলতে শোনা গিয়েছিল, “কে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়? আমাদের নেতা?” এর পাশাপাশি আর কোনও মন্তব্য করেননি তিনি। জ্যোতিপ্রিয়ের সেই মন্তব্য নিয়ে যথেষ্ট চর্চা শুরু হয়েছিল রাজ্য রাজনীতিতে। তিনি কী জেনে বুঝেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কে, কী তাঁর পরিচয়, সেই প্রশ্ন তুলেছিলেন? ভাবখানা এমন ছিল তিনি যেন সাংবাদিকদের প্রশ্নটা ঠিকমতো বুঝতে পারছিলেন না। বলাবাহুল্য জ্যোতিপ্রিয়ের সেই বক্তব্যের নানা মানে করা যেতেই পারে। এমনিতেই তৃণমূলে নবীন বনাম প্রবীণের দ্বন্দ্বের চোরাস্রোত বহুদিন ধরেই বইছে। কখনও তার গতিবেগ বাড়ে, কখনও কমে, কখনও আবার তাতে স্থিতাবস্থা দেখা যায়। কিন্তু কোনও ভাবেই বিষয়টিকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাই জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে দেরিতে হলেও কেন মন্ত্রিত্ব হারাতে হল, সেই কারণটা সহজেই অনুমেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

8 − 6 =