মুর্শিদাবাদে ‘শচীন-সৌরভ’ জুটির ভূমিকায় অধীর-সেলিম! ‘খেলা হবে’ নবাবের জেলায়

মুর্শিদাবাদে ‘শচীন-সৌরভ’ জুটির ভূমিকায় অধীর-সেলিম! ‘খেলা হবে’ নবাবের জেলায়

adhir salim

নিজস্ব প্রতিনিধি:  বহরমপুরের মতো কঠিন পিচে তৃণমূলের টিকিটে প্রার্থী হয়েছেন প্রাক্তন ক্রিকেটার ‘বিগ হিটার’ বলে পরিচিত ইউসুফ পাঠান। যা নিয়ে বহরমপুর তথা মুর্শিদাবাদ জুড়ে রীতিমতো সাড়া পড়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বহরমপুরের লাগোয়া মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রে সিপিএমের প্রার্থী হলেন দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। সত্যিই ‘খেলা’ হচ্ছে নবাবের জেলা মুর্শিদাবাদে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকরা সাধারণত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন না। তবে সাম্প্রতিক অতীতে সেই প্রথা প্রথম ভাঙেন সূর্যকান্ত মিশ্র। রাজ্য সম্পাদক হয়েও নির্বাচনে লড়েছিলেন তিনি। এবার মহম্মদ সেলিমকেও একই ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে। মুর্শিদাবাদে মহম্মদ সেলিম প্রার্থী হবেন একথা গত ৮ মার্চ ইঙ্গিত দিয়েছিল ‘আজ বিকেল’। সেটাই শনিবার বাস্তব রূপ নিল। বলাবাহুল্য সংখ্যালঘু অধ্যুষিত মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রে কংগ্রেসের সমর্থনে সেলিম প্রার্থী হওয়ায় লড়াইটা বেশ জমে গেল। কয়েক সপ্তাহ আগে ধারাবাহিক ভাবে মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের বিভিন্ন এলাকায় সিপিএমের শীর্ষ  নেতৃত্বের উপস্থিতিতে বেশ কয়েকটি কর্মসূচি সংঘটিত হয়েছিল। সেলিম নিজেও একাধিক কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন। তখনই বোঝা যায় সেলিম এখানে প্রার্থী হতে চলেছেন। সিপিএম মনে করছে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রে সেলিম প্রার্থী হলে নিশ্চিত ভাবে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে পড়বে তৃণমূল ও বিজেপি।

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী তিন দশকের বেশি সময় ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তীব্র বিরোধী বলে পরিচিত। তাই তৃণমূলের সঙ্গে জোটের তিনি প্রথম থেকেই বিরোধিতা করেছিলেন। একই ভাবে মহম্মদ সেলিম জানিয়ে দিয়েছিলেন বিরোধীদের ‘ইন্ডিয়া’ জোটে তাঁরা বৃহৎ স্বার্থে থাকলেও পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের সঙ্গে কখনই তাঁরা হাত মেলাবেন না। এভাবেই অধীর-সেলিমের অবস্থান পুরোপুরি মিলে গিয়ে এক বিন্দুতে চলে আসে। ধূপগুড়ি বিধানসভার উপনির্বাচনের প্রচারেও এক মঞ্চে দু’জনকে দেখা গিয়েছিল। গত বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস ও সিপিএম দুজনেই শূন্য হয়ে যায়। তবে সাগরদিঘি বিধানসভার উপ-নির্বাচনে বামেদের সমর্থনে কংগ্রেস জয়লাভ করলেও এক মাসের মধ্যেই জয়ী প্রার্থী বাইরন বিশ্বাস তৃণমূলে যোগ দেন। অর্থাৎ বাম ও কংগ্রেস এখন শূন্যেই রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে এই নির্বাচন দুটি দলেরই ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই। রাজনীতির কারবারিদের বড় অংশ মনে করছেন পশ্চিমবঙ্গে মূল লড়াই হচ্ছে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে। তবে সেই ধারণা ভুল প্রমাণ করে দিতে চেষ্টার ত্রুটি করছেন না অধীর-সেলিম। সেই সূত্রে তাঁদের শচীন-সৌরভ জুটির সঙ্গে তুলনা করছেন কেউ কেউ। তবে শনিবার নিজের নাম ঘোষণার পর সেলিম একটি সংবাদমাধ্যমে রসিকতার সুরে বলেন, আপনারা একে বলিউডের কিংবদন্তি কাহিনীকার সেলিম-জাভেদ জুটিও বলতে পারেন। সেলিম-জাভেদ জুটি আজ ইতিহাস হয়ে গিয়েছে। তাঁদের একের পর এক স্ক্রিপ্টে আজও মজে রয়েছেন সিনেমাপ্রেমীরা। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, বাম-কংগ্রেসের এই  কঠিন সময়ে অধীর-সেলিম কী দুরন্ত কোনও স্ক্রিপ্ট তুলে ধরতে পারবেন, যাতে মাত হয়ে যাবে বিজেপি ও তৃণমূল? এখন সেই স্বপ্নই দেখছে দুই শিবির।

গত লোকসভা নির্বাচনে মুর্শিদাবাদ কেন্দ্র থেকে ছয় লক্ষের বেশি ভোট পেয়ে তৃণমূল জয়লাভ করে। কংগ্রেস ও সিপিএম আলাদা লড়াই করেছিল। তাদের মিলিত ভোট ছিল প্রায় ৪ লক্ষ ৬০ হাজারের মতো। অতীতে এই কেন্দ্র থেকে সিপিএমের প্রার্থী জয়লাভ করেছিলেন। সবচেয়ে বড় কথা গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে মুর্শিদাবাদ লোকসভার অন্তর্গত বিভিন্ন পঞ্চায়েতে সিপিএম চোখে চোখ রেখে তৃণমূলের সঙ্গে তুল্যমূল্য  লড়াই করে বেশ কয়েকটি জায়গায় জিতেছে। কংগ্রেসও মুর্শিদাবাদ লোকসভার বিভিন্ন পঞ্চায়েতে সাধ্যমতো লড়াই করে অনেক জায়গায় জিতেছে। সেই জায়গা থেকে কংগ্রেসের সমর্থনে সেলিমের মতো সংখ্যালঘু রাজনীতিক  মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী হওয়ায় ‘খেলা’টা ঘুরে যেতে পারে বলে আলিমুদ্দিন মনে করছে।

গত লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএম তথা বামেরা পশ্চিমবঙ্গে শূন্য হয়ে গিয়েছে। এরপর থেকেই তারা ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই শুরু করেছে। কিছুদিন আগেই বহরমপুরে আইন অমান্য কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল সিপিএম। তাতে ব্যাপক সাড়া পায় তারা। এমনকী সেই কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে এক সিপিএম কর্মীর মৃত্যু হয়েছিল বলে আলিমুদ্দিনের দাবি। সিপিএমের দাবি সংখ্যালঘু ভোট তাদের পাশে ফিরতে শুরু করেছে পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকেই। তাই মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর ও জঙ্গিপুর আসন দুটি কংগ্রেসকে ছেড়ে দিয়েছে আলিমুদ্দিন। সেই সঙ্গে মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রটিকে পাখির চোখ করেছে সিপিএম। রাজনৈতিক মহল মনে করছে অতীতের ব্যর্থতা ভুলে এই লোকসভা নির্বাচনে সিপিএম বেড়ে খেলতে চাইছে। এই পরিস্থিতিতে খোদ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে তৃণমূল ও বিজেপিকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন। আর সেক্ষেত্রে অধীর চৌধুরী তথা কংগ্রেসের সমর্থন অবশ্যই দরকার সেলিমের। তাই অধীর-সেলিম জুটি মুর্শিদাবাদ জেলা জুড়ে হিট করে কিনা এখন সেটাই দেখার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

17 − 9 =