নিজস্ব প্রতিবেদন: রাজ্য তথা কেন্দ্রীয় সরকার যখন প্রতি মাসে বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পের মাধ্যমে মহিলা পুরুষ নির্বিশেষে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভাতা দিচ্ছে, তখন সেই পথে হাঁটতে দেখা গেল না সিপিএম তথা বামেদের। ভাতা নয়, মহিলাদের বিভিন্ন সমস্যায় তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিলেন সিপিএমের যুবনেত্রী মীনাক্ষি মুখোপাধ্যায়। অন্যান্য দলের পাশাপাশি সিপিএম তথা বামেদের নজরেও রয়েছে মহিলা ভোট। সেই লক্ষ্যে রবিবার বাংলা নববর্ষের দিন একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সিপিএমের যুবনেত্রী মীনাক্ষি মুখোপাধ্যায়। লোকসভা নির্বাচনে সিপিএমের পাঁচ মহিলা প্রার্থী রয়েছেন। সাংবাদিক সম্মেলনে দলের মহিলা ব্রিগেডকে সামনে রেখেই একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মীনাক্ষি। ঘোষণায় বলা হয়েছে, লোকসভায় সিপিএমের প্রার্থীরা যেখানে নির্বাচিত হবেন সেখানে মহিলাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হবে। মেয়েদের আত্মরক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষ পদক্ষেপের কথা জানিয়েছেন মীনাক্ষি। মহিলা আত্মরক্ষা সমিতি ও মহিলা আত্মমর্যাদা কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। যৌন হেনস্থা ও গার্হস্থ্য হিংসার মতো বিষয়ে মহিলা আত্মরক্ষা সমিতি হস্তক্ষেপ করবে। আর আত্মরক্ষা সমিতির উদ্যোগে মহিলাদের মার্শাল আর্টের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এছাড়া মহিলাদের স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ ও তাঁদের স্বনির্ভর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সমবায় ব্যবস্থার আওতায় আনা হবে মহিলাদের। নির্যাতিতাদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকেও খেয়াল রাখা হবে বলে ঘোষণা পত্রে তুলে ধরা হয়েছে।
মীনাক্ষির কথায়, “একজন মহিলার মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার জন্য যা যা দরকার, যে মৌলিক বিষয়গুলি নিশ্চিত হওয়া উচিত, আমাদের প্রার্থীরা নির্বাচিত হলে সেই কাজগুলিতেই অগ্রাধিকার দেবেন।” সিপিএমের তরফে এদিন ঘোষণা পত্রে জানানো হয়েছে, দলের প্রার্থীরা সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হলে সাংসদ তহবিলের এক-তৃতীয়াংশ টাকা শুধুমাত্র মহিলাদের জন্যেই খরচ করা হবে। এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে মীনাক্ষির পাশাপাশি ছিলেন বোলপুরের সিপিএম প্রার্থী শ্যামলী প্রধান, শ্রীরামপুরের প্রার্থী দীপ্সিতা ধর, দক্ষিণ কলকাতার প্রার্থী সায়রা শাহ হালিম, আসানসোলের প্রার্থী জাহানারা খান এবং ঝাড়গ্রামের প্রার্থী সোনামনি টুডু (মুর্মু)।
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে মহিলাদের ভোটের বড় অংশ তৃণমূলের দিকে গিয়েছে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করে। পরবর্তীকালে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্প চালুর পর মহিলাদের ভোট আরও বেশি মাত্রায় তৃণমূলের দিকে আসবে বলে দলীয় নেতৃত্ব মনে করেন। একই ভাবে বিজেপিও প্রচার করছে তারা রাজ্যে ক্ষমতায় এলে মহিলাদের প্রতি মাসে তিন হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। সেই জায়গা থেকে এদিন মহিলাদের ভাতা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেনি সিপিএম। পরিবর্তে মহিলাদের বিভিন্ন সমস্যা দূর করার পাশাপাশি তাঁদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বামেরা। যা নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রমী বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। উল্লেখ্য সিপিএমের যুবনেত্রী মীনাক্ষি মুখোপাধ্যায় সব অর্থেই পাশের বাড়ির মেয়ে হয়ে উঠেছেন। তিনি কোথাও গেলে সঙ্গে বড় বড় গাড়ির সারি দেখা যায় না। প্রচার মঞ্চও থাকে অত্যন্ত সাধারণ মানের। অর্থাৎ আতিশয্য বলতে যা বোঝায় সেটা কখনই মীনাক্ষির পাশাপাশি দলীয় নেতৃত্বের বড় অংশকে স্পর্শ করেনি। তাই মহিলাদের ভাতা দেওয়ার লড়াইয়ে হাঁটতে চাননি সিপিএমের মহিলা ব্রিগেড। শুধু মহিলাদের সমস্যায় তাঁদের পাশে থাকার বার্তাই দিয়েছেন তাঁরা। সত্যিই এটা অন্য ধারার রাজনীতি!