গীতা ছুঁয়ে নিয়েছিলেন শপথ, এ বারেও কি সেই পথে হাঁটবেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনক?

গীতা ছুঁয়ে নিয়েছিলেন শপথ, এ বারেও কি সেই পথে হাঁটবেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনক?

লন্ডন: ব্রিটেনের মসনদে বসা এখন শুধুই সময়ের অপেক্ষা৷ শুক্রবার, ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নেবেন এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত৷ সোমবার দীপাবলীর রাতে সুদূর ব্রিটেন থেকে খবর আসতেই চর্চায় ঋষি সুনক৷ নিজের ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে কখনই সরব না হলেও নিজেকে বরাবরই ‘গর্বিত হিন্দু’ হিসাবেই জাহির করেছেন ঋষি। 

আরও পড়ুন- কী ভাবে কাছাকাছি আসা? কী ভাবে প্রেম হয়েছিল ঋষি-অক্ষতার? তাঁদের কাহিনী যেন টানটান চিত্রনাট্য

আশি সালে সাউদাম্পটনে জন্ম নেওয়া ঋষি সুনকের সঙ্গে ভারতের যোগসূত্র কিন্তু ছিন্ন হয়নি৷ ভারতীয় ঐতিত্যের ধারা রয়ে গিয়েছে ব্রিনেটেন নয়া প্রধানমন্ত্রীর অন্দরে৷ কনজারভেটিভ দলের ৪২ বছরের এই নেতা বিবাহ সূত্রেও ভারতের সঙ্গে আবদ্ধ৷ তিনি ইনফোসিস কর্তা নারায়ণ মূর্তির জামাতা৷ তাঁর দুই কন্যা অনুষ্কা আর কৃষ্ণার নামেও ভারতের ছোঁয়া৷ রীতি নীতি মেনে পুজো পাঠও করেন সুনক পরিবার৷ তবে তাঁর এই হিন্দু পরিচয় মাঝে মধ্যে রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্খার পথে ‘কাঁটা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ এবার সেই পরিচয় দূরে রেখেই ব্রিটেনের গদিতে বসতে চলেছেন ঋষি। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, এমপি হিসাবে শপথ নেওয়ার মতো এ বারও কি ভগবত গীতা ছুঁয়েই শপথ নেবেন ভাবী প্রধানমন্ত্রী?

ব্রিটেনের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন ৪২ বছরের ঋষি সুনক। ১৯৮০ সালে ব্রিটেনের সাউদাম্পটনে জন্ম হলেও ঋষির আদি বাড়ি পঞ্জাবে। ব্রিটিশ শাসনকালে কর্মসূত্রে নাইরোবি চলে গিয়েছিলেন ঋষির ঠাকুরদা। ছয়ের দশকে আফ্রিকা ছেড়ে ব্রিটেনে চলে আসে সুনক পরিবার। ঋষির বাবা ছিলেন পেশায় চিকিৎসক৷ মা ফার্মাসিস্ট। ২০০৯ সালে ইনফোসিস কর্তার মেয়ে অক্ষতার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন ঋষি। বিয়ের আসর বসেছিল বেঙ্গালুরু শঙরে৷ স্ত্রী এবং দুই সন্তানকে নিয়ে একাধিক বার বেঙ্গালুরুতে এসে সময়ও কাটিয়েছেন ঋষি। বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে তাঁর মুখে শোনা গিয়েছে পারিবারিক মূল্যবোধ এবং ঐতিহ্যের কথা৷ এমনকি গত বছর দীপাবলীতে নিজের বাড়িতে প্রদীপও জ্বালিয়েছিলেন ঋষি সুনক। বরিস জনসনের ক্যাবিনেটে অর্থমন্ত্রী থাকার সময় ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে দীপাবলীতে প্রদীপ জ্বালিয়ে ছিলেন তিনি।

২০০৯ সালে প্রথমবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য হন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনক। সাংসদ হিসেবে শপথ নেওয়ার সময় ভগবত গীতা ছুঁয়ে শপথ নিয়েছিলেন তিনি। মাস কয়েক আগের কথা৷ ব্রিটেনে তখন কনজারভেটিভ দলের নেতা বাছাই নিয়ে ঋষির সঙ্গে লিস ট্রাসের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে। সেই সময়ই জন্মাষ্ঠমীতে সস্ত্রীক মন্দিরে গিয়ে পুজো দিতে দেখা গিয়েছিল সুনককে। টুইটারে সেই ছবি পোস্ট করেছিলেন তিনি। রীতি মেনে গোমাতার পুজো, আরতি করেছিলেন সুনক দম্পতি। 

এবার আসা যাক রাজনীতির প্রসঙ্গে৷ দলের একাংশের দাবি ছিল, অর্থনীতি সামাল দিতে ট্রাসের দাওয়াই যে ব্যর্থ হতে চলেছে, তা কথা আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন ঋষি। এখন অবশ্য অধিকাংশ নেতাই নিজেদের ভুল মেনে নিয়েছেন। তাঁরা বুঝতে পারছেন, ঋষিই পারবেন এই সঙ্কট থেকে মুক্তি দিতে। ফলে এক্ষেত্রে তাঁর ‘হিন্দু পরিচয়’ বড় নয়৷ ফলে তিনি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়ার সময় এবারও গীতায় হাত রাখবেন কিনা, তাও অনেকের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়৷