স্রেফ একটা সাদা ওড়না, দুঁদে কর্তাদের চোখে ধুলো দিয়ে সন্দেশখালিতে মীনাক্ষী, উড়ল লাল পতাকা

স্রেফ একটা সাদা ওড়না, দুঁদে কর্তাদের চোখে ধুলো দিয়ে সন্দেশখালিতে মীনাক্ষী, উড়ল লাল পতাকা

3cae69d442ca191f5eac722f9209bd5d

সন্দেশখালি: পুলিশের চোখে রীতিমতো ধুলো দিয়ে শনিবার সন্দেশখালি পৌঁছন ডিওয়াইএফআই (DYFI) নেত্রী মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। ‘অস্ত্র’ স্রেফ একটা সাদা ওড়ানা৷ তাতে মুখ ঢেকেই পুলিশকে বোকা বানালেন সিপিএম নেত্রী৷ সন্দেশখালিতে ঢোকার মুখে কর্তব্যরত দুঁদে পুলিশ কর্তাদের রীতিমতো ঘোল খাইয়ে দিলেন তিনি৷ এদিন ফেরিঘাটে যাওয়ার আগে একটা সাদা ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে নিয়েছিলেন মিনাক্ষী। তাঁর ছিলেন সিপিএমের নেতারাও। বাম কর্মীদের দাবি, ফেরিঘাটে নজরদারির কাজে মোতায়েন পুলিশ কর্তারা মিনাক্ষী ছাড়া আর কাউকে চিনতেনই না। সেই সুযোগেরই সদ্ব্যবহার করেন নেত্রী। দলীয় কর্মীদের ভিড়ের মাঝে মুখে সাদা ওড়না ঢাকা দিয়ে নৌকায় উঠে পড়েন বাম যুব নেত্রী। তাও একেবারে পুলিশের নাকের ডগা দিয়ে। মিনাক্ষীকে চিনতেও পারল না পুলিশ৷ উত্তপ্ত সন্দেশখালিতে পা রাখেন ডিওয়াইএফআই নেত্রী৷ গ্রামে গ্রামে ঘুরলেন। সকলের সঙ্গে কথাও বললেন।

এদিকে, মিনাক্ষী যে আসছেন, সে খবর আগে থেকেই ছিল স্থানীয় সিপিএম নেতাকর্মীদের কাছে৷ সেই উপলক্ষে সন্দেশখালির মাটিতে ওড়ানো হয় লাল পতাকা৷  তাও ২০১১ সালের পর এই প্রথম৷ এদিন জেলিয়াখালি, দুর্গামণ্ডপ, খুলনা-সহ একাধিক এলাকায় কাস্তে হাতুড়ি আঁকা পতাকা ওড়ান বাম কর্মী সমর্থকরা। তাঁরাও যে লড়াইয়ের ময়দানে রয়েছে, সে কথা জানান দেন৷ ২০১১ সালের পর সন্দেশখালি থেকে কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল সিপিএম৷ রাজ্যে পালা বদলের পর উত্তর ২৪ পরগণার এই ছোট্ট দ্বীপে মিটিং-মিছিল করা তো দূর, পতাকা তুললেও শেখ শাহজাহানের অনুগামীদের আক্রমণের মুখে পড়তে হত তাঁদের। সন্দেশখালির আন্দোলনের জোয়ারে গত ১২ বছরের সেই চেনা ছবি ছবির‌ই বদল ঘটল শনিবার৷ 

এদিকে, দুপুর দেড়টার পর নড়েচড়ে বসে পুলিশ৷ খবর পেয়ে মিনাক্ষীদের পথ আটকায়৷ তত ক্ষণে বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে ফেলেছেন বাম যুব নেত্রী। কিন্তু মিনাক্ষীর এই ছদ্মবেশের নেপথ্যে কে? কার পরিকল্পনায় এই পোশাক পরলেন নেত্রী? কী ভাবেই বা ছদ্মবেশে পৌঁছলেন অগ্নিগর্ভ সন্দেশখালিতে? 

সিপিএম সূত্রে খবর, রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম দিন কয়েক আগে মিনাক্ষী এবং যুব সভাপতি ধ্রুবজ্যোতি সাহাকে ডেকে বলেন, ‘‘আমি তোমাদের সন্দেশখালির মাটিতে দেখতে চাই। ধামাখালিতে আটকে পড়লে চলবে না। সন্দেশখালিতে তোমাদের পৌঁছতেই হবে!’’ এমনকি মিনাক্ষীদের ‘গেরিলা কায়দা’ শেখাতে নিজের কাহিনীও শোনান সেলিম৷ সেই ‘ভোকাল টনিক’-এই উদ্বুদ্ধ হন মিনাক্ষীরা। সেলিম তাঁদের এও বলেছিলেন, ‘‘আমি যদি ঘটনার পরের দিন বাইকে চড়ে বগটুইয়ে যেতে পারি, তোমরা তোমরা পারবে না কেন?’’ এর পরই তৈরি হয় মিশন৷ 

এমনিতে মিনাক্ষীকে সকলে চুড়িদার পরেই বেশি দেখেছেন৷ গলায় ওড়না আর পায়ে ফিতে-বাঁধা জুতই তাঁর সিগনেচার পোশাক৷ তবে সেই পোশাকে তাঁকে সকজেই চিনে ফেলতে পারত৷ সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই মিনাক্ষীকে শাড়ি পরে যাওয়ার কথা বলা হয়৷ সেই সঙ্গে মাথায় থাকবে হিজাব৷ পরিকল্পনা মতোই কাজ করেন মিনাক্ষী। শনিবার সন্দেশখালির গ্রামে গ্রামে যখন ঘুরছিলেন মিনাক্ষী, তখন দেখা যায় হিজাবে শুধু মাথা নয়, মুখও ঢেকেছেন তিনি। এদিন ধ্রুব সাধারণত পাজামা-পাঞ্জাবি পরেন। শনিবার তিনি পরেছিলেন ট্রাউজার্স আর টি শার্ট। তাঁদের ছদ্মবেশে বোকা বনে যায় পুলিশও৷ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *