Arrested shahhajan
কলকাতা: দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর অবশেষে গ্রেফতার সন্দেশখালির ‘নিখোঁজ’ তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখ৷ ৫৫ দিন পর মিনাখাঁ থেকে ‘বাঘ বন্দি’ করে পুলিশ৷ বৃহস্পতিবার তাঁকে আদালতে তোলা হলে ১০ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেয় বসিরহাট মহকুমা আদালত৷ এদিকে, পুলিশের জালে বাঘ ধরা পড়তেই উৎসবে মেতে ওঠে সন্দেশখালি৷ শুরু হয় মিষ্টিবিলি৷ আকাশে ওড়ে লাল আবির৷ তবে এটা সবে শুরু৷ শাহজাহান কঠোর শাস্তি পেলে তবেই সুবিচার পাবেন সন্দেশখালির নির্যাতিতা মহিলারা৷ বিচার পাবেন জমি-ভিটে হারানো অসহায় মানুষেরা৷
shahhajan
গত ৫ জানুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুরারি৷ এই ৫৫ দিন শাহজাহানকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়েছে বঙ্গ রাজনীতি৷ রেশন দুর্নীতির অভিযোগে ইডির হানা, ইডিকে মেরে গ্রামছাড়া করা৷ তার পরই শাহজাহানের উধাও হয়ে যাওয়া৷ তাঁর গ্রেফতারির দাবিতে আন্দোলনে নামেন সন্দেশখালির মহিলারা৷ সেই আন্দোলনে জোয়ার এনে প্রতিবাদে সামিল হন বিরোধীরাও৷ সেই সঙ্গে অভিযোগ ওঠে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার৷ অশান্তির আগুন নেভাতে সন্দেশখালির একাধিক জায়গায় জারি করা হয় ১৪৪ ধারা৷ এরই মধ্যে বারবার সন্দেশখালি যাওয়ার চেষ্টা করেন বিরোধীদের৷ সব মিলিয়ে টানটান উত্তেজনা৷ শাহজাহানকে ধরতে ৫৫ দিন সময় লেগে গেলেও, অনেক আগেই গ্রেফতার হন ইডি-র উপর হামলা চালানো বেশ কয়েক জন শাহজাহান অনুগামী৷ গ্রেফতার হন ব্লক সভাপতি শিবপ্রসাদ হাজরা এবং তাঁর সঙ্গী উত্তম সর্দার৷ কিন্তু শাহজাহান কোথায়? সেই প্রশ্নে উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা বাংলা৷ প্রায় দু’মাস পর অবশেষে গ্রেফতার হলেন সন্দেশখালির বাদশা৷ শাহজাহানকে নিয়ে যে টানটান উত্তেজনা তৈরি হয়, তাতে আগামী দিনে তাঁকে নিয়ে বাণিজ্যিক ছবি তৈরি হলেও চমকে উঠার মত কোনও কারণ থাকবে না৷
গ্রেফতারের পর শাহজাহানকে পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হলেও তাঁকে হেফাজতে পেতে মরিয়া ইডি-ও৷ পুলিশ হেফাজত শেষ হতেই তাঁকে নিজেদের হেফাজতে পেতে চায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা৷ কিন্তু এই আইনি প্রক্রিয়া চলার মাঝেই এসএসকেএম-এর পথে রওনা দেবেন নাতো সন্দেশখালির ‘নবাব’? সম্ভাবনা কিন্তু উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না৷
অতীতে নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেফতার রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, কালীঘাটের কাকু ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র, রেশন দুর্নীতিতে গ্রেফতার জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ওরফে বালু সকলেই বেছে নিয়েছিলেন হাসপাতালের পথ৷ গ্রেফতার হওয়ার পর ‘অসুস্থ’ নেতাদের আশ্রয়কেন্দ্রে হয়ে ওঠে হাসপাতাল৷ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন গরু পাচার মামলায় গ্রেফতার বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলও৷ অভিযোগ, যাঁরাই এসএসকেএম-এর উডবার্ন ওয়ার্ডে আসেন, তাঁদের বিশেষ যত্নআত্তিও করা হয়৷ দীর্ঘ দিন ধরে শহরের প্রথম সারির সরকারি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে গিয়ে কার্যত ‘ঘাঁটি গেড়ে বসেছেন’ কালীঘাটের কাকু৷ এমনকি কাকু শিশুদের জন্য বরাদ্দ বেডে রয়েছেন বলেও অভিযোগ ওঠে৷ এসএসকেএম-এর কার্ডিওলজি বিভাগে ১৮, ১৯ এবং ২০ নম্বর বেড হৃদরোগের সমস্যা রয়েছে এমন শিশুদের জন্য বরাদ্দ থাকে। তার মধ্যে ১৮ নম্বর বেডে কাকুকে ভর্তি করা হয় বলে জানা যায়৷
রেশন বন্টন দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর কোর্ট চত্বরেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক৷ বাইপাসের ধারে বেসরকারি হাসপাতাল থেকে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় এসএসকেএম-এ৷ সেই সময় তাঁর অসুস্থতা নিয়েও কম বিতর্ক হয়নি৷ হাসপাতালের জানলা থেকে দেখা গিয়েছিল, খিলখিলিয়ে হাসছেন বালু৷ অথচ জেলে যাওয়ার সময় হলে হঠাৎ করেই তাঁর অসুস্থতা বাড়ে। যদিও শেষমেষ জেলেই ফিরতে হয় তাঁকে৷ ফলে শাহজাহানও যে এসএসকেএম এ যাবেন না, সেই গ্যারান্টি কোথায়?
এরই মধ্যে বুধবার বোমা ফাটিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, পুলিশের সঙ্গে চুক্তি হয়ে গিয়েছে শাহজাহানের৷ কী সেই চুক্তি? শুভেন্দুর দাবি ছিল, ‘‘পুলিশ এবং বিচার বিভাগীয় হেফাজতে থাকাকালীন শাহজাহানের যথাযথ যত্ন নেওয়া হবে। কারাগারে থাকাকালীন তাঁকে পাঁচতারা হোটেলের সুবিধা দেওয়া হবে৷ সঙ্গে একটি মোবাইল ফোনও হাতে পাবেন শাহজাহান।’’ এখানেই শেষ নয়৷ শুভেন্দু এও লিখেছিলেন যে, ‘‘উডবার্ন ওয়ার্ডের একটি শয্যাও তাঁর জন্য প্রস্তুত ও খালি রাখা হবে। যদি কিছু সময় উনি সেখানে কাটাতে চান।’’
আর শাহজাহান যদি হাসপাতালে নাও যান, জেলের মধ্যে কী কী সুবিধা দেওয়া হবে তাঁকে? সেই প্রশ্নও উঠেছে৷ শাহজাহান কোনও মন্ত্রী-বিধায়ক না হলেও, তিনি যে অত্যন্ত প্রভাবশালী ও হাইপ্রোফাইল বন্দি তাতে কোনও সন্দেহ নেই৷ এর আগে জেলে একাধিক সুযোগ সুবিধা পেয়েছেন অনুব্রত৷ প্রেসিডেন্সি জেলে খাট বিছানা-চেয়ার টেবিল বিছিয়ে ‘সুখে’ থাকেন পার্থও৷ এবার পালা শাহজাহানের৷ তাঁর জন্য কী বন্দোবস্ত করা হবে, সে দিকে নজর থাকবে গোটা রাজ্যবাসীর৷