মুম্বই: জমজমাট জামনগর! দীর্ঘদিনের বান্ধবী রাধিকা মার্চেন্টের সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়তে চলেছেন রিলায়েন্স কর্তা মুকেশ আম্বানির কনিষ্ঠ পুত্র অনন্ত আম্বানি৷ তাঁর প্রি-ওয়েডিং অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে গুজরাতের জামনগরে বসেছে চাঁদের হাট৷ অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খান, সলমন খান সহ প্রায় গোটা বলিউড হাজির আম্বানিদের অনুষ্ঠানে৷ ‘রাজপুত্রে’র প্রাক বিবাহ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন মেটা সিইও মার্ক জুকারবার্গ, মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস, ডিজনি সিইও বব আইগার, ব্ল্যাকরক সিইও ল্যারি ফিঙ্ক-এর মতো ব্যক্তিত্বরা৷ দেশ বিদেশের প্রায় হাজার অতিথি সামিল এই জমাকালো অনুষ্ঠাকে৷ অনন্ত ও রাধিকার প্রাক বিবাহ অনুষ্ঠানের ঝলক এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল৷ এই রাজকীয় সেলিব্রেশনের মাঝেই চর্চায় অনন্তের শরীর স্বাস্থ্য৷ রোগা হওয়ার পরও কী ভাবে ওজন বাড়িয়ে ফেললেন মুকেশ-পুত্র? অনেকের মনেই দাগ কাটছে এই প্রশ্ন৷
নিজেকে একেবারে বদলে ফেলেছিলেন অনন্ত৷ মেদ ঝরিয়ে ছিপছিপে হয়ে উঠেছিলেন৷ হ্যান্ডসাম চেহারার অনন্তকে দেখে সেই সময় অনেকে অবাকই হয়েছিলেন৷ কীভাবে এত তাড়াতাড়ি রোগা হয়েছিলেন আম্বানি পরিবারের ছোট ছেলে? আসলে ডাক্তারের পরমার্শ মেনে কড়া ডায়েট, রোজের কাজকর্ম, শরীর চর্চা করেই ভোল বদলে ফেলেছিলেন মুকেশ-পুত্র৷ বাবা শিল্পপতি হলেও কোনওরকম সার্জারি বা লাইপোসাকশানের পথে হাঁটেননি তিনি৷ স্রেফ লাইফস্টাইল মডিফিকেশনেই ১৮ মাসে ঝরিয়েছিলেন ১০৮ কেজি ওজন৷ এর পরেও ছিপছিপে চেহারাটা ধরে রাখতে পারলেন না কেন আম্বানি-পুত্র? কী ভাবে ঝট করে বেড়ে গেল এতটা ওজন?
আসলে খুব ছোটবেলা থেকেই নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন অনন্ত৷ তাঁর মা নীতি আম্বানি জানিয়েছিলেন, ছোট থেকেই সিভিয়ার হাঁপানি ছিল অনন্তের। সেই কারণেই তাঁকে হাই ডোজের স্টেরয়েড নিতে হত। যার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে অনন্তের শরীরে বাসা বাধে ওবেসিটি৷ ওজন বাড়ার সমস্যায় ভুগতে থাকেন অনন্ত। শারীরিক জটিলতার কারণেই রোগা হওয়ার পরও সেই গড়ন ধরে রাখতে পারেননি আম্বানি পরিবারের ছোট ছেলে৷
অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগীদের শ্বাসকষ্টের ওষুধ খেতেই হয়৷ তবে তাঁরা দ্রুত আরাম পান স্টেরয়েডের ব্যবহারে। যা একেবারে ম্যাজিকের মত কাজ করে৷ তবে এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও কম নয়৷ যার মধ্যে অন্যতম হল ওজনের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি। যতটা স্টেরয়েড শরীরের প্রয়োজন, তার ঘাটতি হলেই দেখা দেবে প্রেসারের সমস্যা৷ খিদে কমে যাবে৷ বাড়বে নানা রোগের প্রকোপ৷ তবে শুধু অ্যাজমা নয়, ছোট থেকেই অটো ইমিউন রোগ, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমা, সিওপিডি, হেমোলাইটিক অ্যানিমিয়ার মতো জটিল রোগে আক্রান্ত মুকেশ আম্বানির কনিষ্ঠ পুত্র৷ ফলে লড়াইটা শুরু থেকেই বেশ কঠিন থেকেছে অন্তের কাছে৷
সিভিয়ার অ্যাজমা থাকায় মাঝে মাঝেই অ্যাজমা অ্যাটাক হয় তাঁর৷ সেই সময় কড়া ডোজের স্টেরয়েড ছাড়া সামলানো মুশকিল হয়ে পড়ে৷ চিকিৎসকেরা মাঝে মধ্যে তাঁর ওরাল স্টেরয়েডের ডোজও বাড়িয়ে দিতে বাধ্য হন৷ কড়া ডোজের স্টেরয়েড খাওয়ানো হলে খিদে বেড়ে যায়৷ যার ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখাটাও মুশকিল হয়ে পড়ে৷
প্রিওয়েডিং অনুষ্ঠানে নিজের জীবন সংগ্রামের কথা জানিয়েছেন অনন্ত৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার জীবন কখনই গোলাপের বিছানা দিয়ে সাজানো ছিল না। শৈশবে অনেক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে৷ তবে সব সময় আমি বাবা-মাকে পাশে পেয়েছি৷ তাঁরা আমাকে সাহস জুগিয়েছেন৷ নিজেদের সাধ্যের বাইরে গিয়ে আমাকে স্পেশাল ফিল করিয়েছেন। আমার বাবা-মা কোনও দিন বুঝতে দেননি আমি এতটা অসুস্থ৷ তাঁরা আমাকে সব সময় উৎসাহ জুগিয়ে গিয়েছে৷’’ ছেলের মুখে এ কথা শোনার পর চোখে জল ধরে রাখতে পারেননি রিলায়েন্স কর্তা৷ কেঁদে ফেলেন তিনি৷
প্রি ওয়েডিং পার্টির মঞ্চে দাঁড়িয়ে অনন্তর কথায় উঠে এসেছে বহু লাইফ পার্টনাম রাধিকার প্রসঙ্গও৷ রাধিকাকে জীবনে পেয়ে তিনি নিজেকে লাকি মনে করেন৷ তাঁর কথায়, ‘চিকিৎসকরা একরকম প্রায় আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু রাধিকা আমার পাশে শক্ত পিলারের মতো দাঁড়িয়ে থেকে৷ আমাকে সাহস জুগিয়ে গিয়েছেন। আমি যখন নিজের শরীরের সঙ্গে যুদ্ধ করেছি, তখন রাধিকা হাসি মুখে সমস্ত কর্তব্য করে গিয়েছে। ওই সময় রাধিকার থেকেই লড়াইয়ের শক্তি পেয়েছিলাম।’ রাধিকাকে পেয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাতেও ভোলেননি অনন্ত৷