rahul gandhi
নিজস্ব প্রতিনিধি:ভোটের আগেই হিন্দি বলয়ে কার্যত বিজেপিকে মাঠ ছেড়ে দিচ্ছে কংগ্রেস। দলের তরফে বহুবার আবেদন করা হলেও আমেথিতে রাহুল গান্ধী এবং রায়বেরেলিতে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরা দাঁড়াতে রাজি হচ্ছেন না। রাজনৈতিক মহল মনে করছে পরাজয়ের সমূহ সম্ভাবনা আছে বলেই তাঁরা সেখানে যেতে চাইছেন না। এই পরিস্থিতিতে উত্তরপ্রদেশের অপেক্ষাকৃত নিশ্চিত আসনে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে যাতে দাঁড়ান সেই চেষ্টা করা হচ্ছে বলে একাধিক সূত্রে খবর।
উত্তরপ্রদেশের প্রধান বিরোধী শক্তি অখিলেশ যাদবও তাতে সম্মতি দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। বিরোধী শিবিরের বক্তব্য কংগ্রেসের শীর্ষ কোনও নেতা যদি উত্তরপ্রদেশের কোনও আসনে না দাঁড়ান তাহলে বিজেপি ভোটের আগেই ওয়াকওভার পেয়ে যাবে। সেটা কিছুতেই হতে দিতে চাইছেন না অখিলেশ যাদব। তাই তিনি ক্রমাগত এ ব্যাপারে গান্ধী পরিবারের উপর চাপ বাড়িয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু বহুবার আবেদন করা সত্ত্বেও রাহুল-প্রিয়াঙ্কা উত্তরপ্রদেশের কোনও আসনে দাঁড়াতে চাইছেন না বলেই খবর। উল্লেখ্য মল্লিকার্জুন রাজ্যসভার সাংসদ এবং সেখানকার বিরোধী নেতা। তাঁর বয়স ৮০ পেরিয়ে গিয়েছে। সেই জায়গায় উত্তরপ্রদেশের মতো বড় রাজ্যে তাঁকে দাঁড় করানো মানেই যে গান্ধী পরিবারের পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা, সেটা সকলেই বুঝতে পারছেন। স্বাভাবিকভাবেই এই ধরনের প্রস্তাব একাধিক মহল থেকে উঠছে দেখেই তাতে আপত্তি জানিয়েছেন মল্লিকার্জুন। তিনিও সেখান থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাইছেন না।
রাহুল গান্ধী গত নির্বাচনে আমেথি কেন্দ্রে হেরে গিয়েছিলেন। তবে কেরলের ওয়েনাড় কেন্দ্রে জিতে সাংসদ পদ ধরে রাখতে পারেন। এবারেও তিনি সেখান থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কিন্তু তাতে বেজায় ক্ষোভ প্রকাশ করছে বামেরা। কারণ বিরোধীদের ‘ইন্ডিয়া’ জোটে অন্যতম শরিক হিসেবে রয়েছে বামেরা। ওয়েনাড় কেন্দ্রে রাহুলের বিপক্ষে প্রার্থী সিপিআইয়ের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ডি রাজার স্ত্রী অ্যানি রাজা। তাই কংগ্রেসের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে সিপিআই। তাঁদের কথায় রাহুল গান্ধীর মতো শীর্ষস্তরের নেতার উচিত বিজেপির শক্তিশালী নেতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা। কিন্তু রাহুল দ্বিতীয় কেন্দ্র হিসেবে শেষ পর্যন্ত আমেথিকে বেছে নিতে চাইছেন না।
যথারীতি বিষয়টি নিয়ে ভোটারদের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে। এ যেন নির্বাচনের আগেই হেরে বসা। বিশেষ করে উত্তর ভারতের রাজ্যগুলিতে কংগ্রেস আগে থেকেই যেন বিজেপির কাছে আত্মসমর্পণ করে বসে রয়েছে। উত্তর ভারতের রাজ্যগুলি থেকেই বিজেপি যে সবচেয়ে বেশি আসন পাবে, এটা সকলেই জানেন। তাই বিরোধীদের উচিত ছিল সেখানে বিজেপি প্রার্থীদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রার্থী দাঁড় করানো। কিন্তু সেই জায়গায় বহু আসনে কংগ্রেস দুর্বল প্রার্থী দাঁড় করাচ্ছে। কারণ একটাই, তথাকথিত হেভিওয়েটরা দাঁড়াতে চাইছেন না। এমনিতেই সোনিয়া গান্ধী এবারের লোকসভা নির্বাচনে অসুস্থতার কারণে রায়বেরেলি কেন্দ্রে প্রার্থী না হয়ে রাজস্থান থেকে রাজ্যসভার সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হয়ে গিয়েছেন। তাই রাহুল-প্রিয়াঙ্কা উত্তরপ্রদেশের কোনও আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করলে প্রশ্ন তো উঠবেই। সবমিলিয়ে নির্বাচনের আগেই বিজেপিকে কার্যত উত্তরপ্রদেশে ওয়াকওভার দিয়ে দেওয়ার পথে কংগ্রেস। শতাব্দী প্রাচীন দলের অন্যতম প্রধান নেতাদের এই হাল দেখে মুষড়ে পড়েছেন কংগ্রেসের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা। তাই দেরিতে হলেও বাস্তব পরিস্থিতি বুঝে রাহুল-প্রিয়াঙ্কারা সিদ্ধান্ত বদল করেন কিনা এখন সেটাই দেখার।