নয়াদিল্লি: লোকসভা নির্বাচনের মুখে দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নিতে চলেছেন সোনিয়া তনয়া প্রিয়াঙ্কা গান্ধী৷ প্রিয়াঙ্কার রাজনীতিতে উত্থান হওয়ার আগেই শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক জল্পনা৷ ছেলে রাহুল গান্ধীর হাতে কংগ্রেসের ভার দিয়ে আগেই নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছেন ইউপিএ চেয়ারম্যান সোনিয়া গান্ধী৷ এবার কী মেয়েকে রাজনীতির পেশায় এনে রাজনৈতিক জীবন থেকে সন্ন্যাস ঘোষণা করবেন অসুস্থ সোনিয়া? গান্ধী পরিবারের রাজনৈতিক অঙ্ক নিয়েই এই মুহূর্তে চলছে কেটা-ছেঁড়ার পর্ব৷
পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা, ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচন কংগ্রেসের মুখ রক্ষার লড়াই৷ বিজেপিকে হারিয়ে কেন্দ্রে সরকার গঠনের স্বপ্ন বিলি করতে শুরু করে দিয়েছে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী৷ ফলে, অসুস্থ শরীর নিয়ে নির্বাচনের ধকল নিতে কতটা তৈরি সোনিয়া? তা নিয়ে নানা মহলে রয়েছে প্রশ্ন৷ পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা, উত্তরপ্রদেশের রায়বেরিলি মেয়ের জন্য ছেড়ে দিতে পারেন সোনিয়া৷ কেনান, এমনিতেই নানান রোগে ভুগছেন সোনিয়া৷ মাঝেমধ্যেই বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করাতে হচ্ছে হচ্ছে তাঁকে৷ তারপর, অখিলেশ-মায়াবতীর জোট, বেশ চিন্তায় রেখেছে কংগ্রেসকে৷ দীর্ঘদিন রায়বেরিলির সঙ্গে যোগাযোগও নেই সাংসদ সোনিয়ার৷ তার উপর রয়েছে নির্বাচনী ধকল৷ নিজের কেন্দ্র প্রচারের পাশাপাশি অন্যকেন্দ্রেও সভা করতে হবে তাঁকে৷ ফলে, এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে নিজের ধরে রাখা কেন্দ্র মেয়ের হাতে তুলে দিয়ে নিশ্চিত হতে পারেন সোনিয়া৷ পর্যবেক্ষক মহলের ধারনা, মেয়ে প্রিয়াঙ্কা ও ছেলেকে রাজনীতির ময়দানে ছেড়ে পেছনে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারেন তিনি৷ ঠিক যেমনটা করেছিলেন ইউপিএ সরকারের আমল৷
গত লোকসভায় দেশজুড়ে ভরাডুবির পর সোনিয়ার নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠতে থাকে৷ কংগ্রেসের তরফে রাহুলকে মুখ না করায় তার খেসারত গুনতে হয় গান্ধী পরিবাককে৷ তখনই জল্পনা তৈরি হয়, ২০১৯-এর রায়বরেলি থেকে নাও লড়তে পারেন সোনিয়া৷ তাঁর জায়গায় প্রিয়াঙ্কা সেই আসন থেকে লড়বেন৷ এবার সেই জল্পনাকে আরও খানিকটা গতি বাড়িয়ে দিল গান্ধী-পরিবারের নয়া সিদ্ধান্ত৷
কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী আমেঠি থেকেই লড়বেন, এটা নিশ্চিত৷ আর প্রিয়াঙ্কা যদি তাঁর মায়ের নির্বাচনী কেন্দ্র থেকে লড়াই করেন, তাহলে তা হবে বড় চমক৷ রাহুল এই নিয়ে পরপর চারবার আমেঠি থেকে লড়বেন৷ এর আগে ২০০৪, ২০৯, ২০১৪ সালে লোকসভায় রাহুল এখান থেকে দাঁড়িয়ে জিতেছেন৷ আমেঠি নেহরু পরিবারের জেতা আসন৷ এখান থেকে সঞ্জয় গান্ধী, রাহুল গান্ধীও লড়ে জিতেছেন৷ পরে সোনিয়াও প্রথমে এই আসনে জিতে লোকসভায় যান৷ পরে রাহুলকে এই আসন ছেড়ে দেন৷ এবারও কী প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর জন্য একই উপহার তুলে রেখেছেন সোনিয়া৷
ইতিমধ্যেই, দু’দিনের সফরে আমেথিতে জেলাপার্টির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন রাহুল গান্ধী৷ জেলার নজরদারি কমিটির সঙ্গেও বৈঠকও করেছেন তিনি৷ রায়বেরিলিতেও জেলার মনিটরিং কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেন সোনিয়া৷ নিজেদের কেন্দ্রের ভোটব্যাঙ্ক ধরে রাখতেই মা-ছেলের তৎপরতাও শুরু হয়ে গিয়েছে৷
ইতিমধ্যেই কংগ্রেসের তরফে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে রাজনীতিতে নামার ছাড়পত্র দিয়ে বড় পদ দেওয়ার ঘোষণা করা হয়েছে৷ যোগীর রাজ্যে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক হলেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী৷ তাঁকে পূর্ব উত্তর প্রদেশের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়ছে৷ প্রিয়াঙ্কা গান্ধী কংগ্রেসের হয়ে পুরোপুরি রাজনীতিতে নামবেন একথা গত কয়েকবছর ধরেই চলছে৷ তবে প্রিয়াঙ্কা দলের হয়ে প্রচার করলেও সক্রিয় রাজনীতিতে গা ঘামাননি৷ শুধু মা ও দাদার হয়ে প্রচার করেছেন৷ এবার দলের ব্যাঁটন নিজের হাতেই তুলে নিতে চলেছেন প্রিয়াঙ্কা৷ দীর্ঘ নীরবতার পর অবশেষে রাজনীতির ময়দানে নেমেই পড়লেন প্রিয়াঙ্কা৷ রাজনীতি নামতেই পেয়ে গিয়েছেন বড় পদ৷ যোগীর রাজ্যে গুরুদায়িত্ব এখন তাঁর ঘাড়েই চাপিয়েছেন সোনিয়া-রাহুল৷
পুরনো কংগ্রেসিদের অনেকেই বলেন, তাঁর চলনে-বলনে খুঁজে পান ইন্দিরা গান্ধীর ছায়া৷ গত লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের ভরাডুবির পর আওয়াজ ওঠে প্রিয়াঙ্কা লাও, কংগ্রেস বাঁচাও৷ এসবের পরও তিনি কিন্তু নিজেকে আমেথি-রায়বরেলির চৌহদ্দিতেই আটকে রেখেছিলেন৷ এবার পাল্টে গেল পরিস্থিতি৷ যোগীর রাজ্যে যোগ্য জবাব দিতে প্রস্তুতি শুরু করে দিলেন রাজীব-তনয়া৷
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের আশঙ্কা, প্রিয়াঙ্কা রাজনীতির ময়দানে নামতেই বিজেপি খুঁচিয়ে তুলতে পারে রবার্ট বঢ়রার জমি কেলেঙ্কারির প্রসঙ্গ৷ ফলে, শুরুতেই আঘাত আসতে পারে হাত শিবিরে৷ মূলত, এই আশঙ্কায় তাতে এতদিন সায় দেননি সোনিয়া৷ কিন্তু, লোকসভা নির্বাচনের আগে বেশ এগিয়ে কংগ্রেস শিবির৷ ফলে, বিজেপির নানান কেলেঙ্কারির পেছনে নগণ্য হয়ে উঠতে পারে জামাইয়ের জমি কেলেঙ্কারির প্রসঙ্গ৷ কংগ্রেসের একাংশ মনে করছে, উত্তরপ্রদেশে বাইরেও বড় ভূমিকা নিতে পারেন প্রিয়াঙ্কা৷ ফলে, লোকসভা ভোটের আগে হিসাব কষেই প্রিয়াঙ্কাকে গুরুদায়িত্ব ছাড়াল গান্ধী পরিবার৷ প্রিয়াঙ্কার রাজনীতিতে পা দেওয়া মাত্রই ভাই বরুণ গান্ধীকে নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা৷ বিজেপির বরুণ গান্ধীকে কাছে টেনে উত্তরপ্রদেশে কি কোনও চমক দিতে চলেছেন প্রিয়াঙ্কা?
সূত্রে খবর, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ওয়াধেরার সঙ্গে বরুণের সম্পর্ক বরাবরই ভালো৷ রাহুলের সঙ্গে তেমন নয়৷ বরুণ এবং রাহুলকে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বলে চালানোর চেষ্টা হলেও ঘনিষ্ঠ মহলে বরুণের মত, কৃষক-রাফাল ইস্যুতে ক্রমাগত প্রচার করে এবং সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনে তিন গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে বিজেপিকে পর্যুদস্ত করে রাহুল নিজেকে মোদির চ্যালেঞ্জার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। পাশাপাশি রাহুল, প্রিয়াঙ্কা, বরুণের মধ্যে সম্প্রতি বেশ কয়েকবার ঘরোয়া বৈঠক হয়েছে বলেও খবর৷ ফলে, এক প্রিয়াঙ্কাকে দিয়ে বিজেপিতে ভাঙন ধরানো ও উত্তরপ্রদেশে নিজেদের প্রমাণ দেওয়ার মরিয়া চেষ্টাই চালিয়ে যাওয়ার কৌশল গান্ধি পরিবারের৷