জলপাইগুড়ি: বাংলায় পা রেখেই রাজ্যের বিরুদ্ধে সুর চড়ালেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ এদিন সভা শুরুতেই কেন্দ্রের উন্নয়ন প্রসঙ্গ তুলে ধরেন৷ কলকাতা হাইকোর্টে জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চের উদ্ধোধন হতে কেন ২০ বছর সময় লেগে গেল তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি৷ সভামঞ্চ থেকে তৃণমূলকে আক্রমণের পাশাপাশি তিন তালাক ইস্যুতে কংগ্রসকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন৷ বলেন, ‘‘ভোটের লোভে কংগ্রেস বলছে, তিন তালাক আইন তুলে দেবে৷ কিন্তু, আমি বলে রাখলাম, দেশ থেকে কোনও দিন তিন তালাক বিল তুলে দিতে দেব না৷ আমার কাছে ভোটের থেকে মসুলিম মহিলাদের সুরক্ষা দেওয়াটাই বেশি জরুরি৷’’
বৃহস্পতিবার দিল্লিতে কংগ্রেসের সংখ্যালঘু বিভাগের জাতীয় কনভেনশনে যোগ দিয়ে লোকসভা নির্বাচনে ক্ষমতায় এলে কংগ্রেস তিন তালাক আইন পরিবর্তন করবে বলে দাবি করলেন অসমের শিলচরের কংগ্রেস সাংসদ তথা সর্বভারতীয় মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী সুস্মিতা দেব৷ জাতীয় কনভেনশনে যোগ দিয়ে এ কথা বলেন সাতবারের সাংসদ প্রয়াত কংগ্রেস নেতা সন্তোষ মোহন দেবের মেয়ে সুস্মিতা বলেন, “আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি, ২০১৯ সালে কংগ্রেস ক্ষমতায় আসবে। আমি আরও একটা কথা দিচ্ছি। আমরা ক্ষমতায় এলেই তিন তালাকের আইনে পরিবর্তন আনবো৷” কংগ্রেস নেত্রীর এই মন্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই দেশজুড়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে৷ এবার বাংলার মাটিতে দাঁড়িয়ে সরাসরি কংগ্রসকেই বিঁধলেন নমো৷
তিন তালাক ইস্যুতে কংগ্রসকে আক্রমণের পাশাপাশি রাজ্যের শাসকদলকেও আক্রমণ করেন নরেন্দ্র মোদী৷ বলেন, ‘‘আজ বাংলার মাটির বদনাম হয়ে গিয়েছে৷ মানুষকে গলা টিপে মরা হচ্ছে৷’’ সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করে বলেন, ‘‘আপনি চা খান না, আমে আমি তা তৈরি করি৷ এই চা ওয়ালা মোদিকে নিয়ে দিদির এত চিন্তা কিসের? তা আমি কিছুটা বুঝতে পেরেছি৷’’
চিটফান্ড প্রসঙ্গ তুলে রাজ্য সরকার ও শাসকদলের বিরুদ্ধে সুর চড়ান তিনি মোদি৷ বলেন, লুটেরা হোক বা তাদের রক্ষাকারী, কাউকে ছাড়ব না৷ লুটেরাদের রক্ষা করতে মুখ্যমন্ত্রী ধর্নায় বসেছিলেন৷ আমি এই প্রথম দেখলাম, কোনও অভিযুক্তকে বাঁচাতে একজন প্রশাসনিক প্রধান ছুটে গেলেন৷ আমি বলে রাখছি, এই চৌকিদার, চিটফান্ড দুর্নীতে যুক্ত সবাইকে জেলে ভরে আমি নিশ্চিত হব৷ চিটফান্ড দুর্নীতে পায়পায় হিসাব নেব৷’’
বলেন, ‘‘এই উত্তরবঙ্গের সঙ্গে আমার চায়ের সম্পর্ক আছে৷ এই উত্তরবঙ্গের চা কর্মীদের অবস্থা খারাপ৷ এটা দেশে আমার খুবই খারাপ লাগছে৷’’ এদিন বাংলার রেশন ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি৷ বলেন, ‘‘আপনারা রেশনে যে দু’টাকা কেজি দরে চাল পান, তা কেন্দ্র সরকার দেয়৷’’ এদিন সরাসরি তৃণমূলকে আক্রমণ করে বলেন, ‘‘আজ দিদি দিল্লি যেতে চাইছে৷ আর বাংলাকে লুটেরাদের হাতে তুলে দিতে চাইছেন৷ দিদির জমনায় সব থেকে বেশি খুন হচ্ছে৷ পাশের রাজ্য ত্রিপুরার দিকে তাকিয়ে দেখুন৷ ওখানে কত শান্তি রয়েছে৷’’
শুক্রবার বিজেপির রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে দু’টি সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী৷ জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চের উদ্বোধনের পাশাপাশি ফালাকাটা-সালসাম্বারী জাতীয় সড়কের শিল্যানাসও করেন তিনি৷ এদিন শুরুতেই বেশ আক্রমণাত্মক ছিলেন তিনি৷
PM Narendra Modi in Jalpaiguri, West Bengal: Paschim Bengal ki sarkar ne maati ko badnaam kar diya hai aur maanush ko majboor kar diya hai. The West Bengal which was known for its art & culture is now being discussed for its violence and undemocratic ways. pic.twitter.com/FLYXQHl0PL
— ANI (@ANI) February 8, 2019
সমস্ত জটিলতা কাটিয়ে জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়িতে সভায় হাজির হন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বাগডোগরা বিমান বন্দরে নেমে সেনাবাহিনীর চপারে ময়নাগুড়ির সভাস্থলে যান মোদি৷ হেলিপ্যাড থেকে সভাস্থলের দূরত্ব ১৪০ মিটার। প্রধনামন্ত্রীর সভা উপলক্ষ্যে জোরদার করা হয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা৷ মঞ্চের সামনে ৬০ফুট প্রথম ব্যারিকেড বা ডি জোন তৈরি করা হয়। সেখানে থাকেন শুধু প্রধানমন্ত্রী এবং এসপিজি। দ্বিতীয় ডি জোন, ভিআইপি ব্লক, তারপর কর্মী, সমর্থকদের জন্য থাকার ছটি ব্লক তৈরি হয়৷ ৫ স্তরীয় তল্লাশি ব্যবস্থাও করা হয়৷ সভা থেকে জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চ সহ একাধিক সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর।
West Bengal: PM Narendra Modi lays the foundation stone for the four-laning of the Falakata – Salsalabari section of NH -31 D and inaugurates New High Court Circuit Bench in Jalpaiguri. pic.twitter.com/JzXPR5uVo4
— ANI (@ANI) February 8, 2019
নরেন্দ্র মোদিকে আনারসের পাতা থেকে তৈরি উত্তরীয় দিয়ে বরণ করেন উত্তরবঙ্গ আনারস চাষি সংগঠন। শুধু উত্তরীয়ই নয়, দেশের প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেওয়া হয় আনারসের পাতার তন্তু দিয়ে তৈরি শাড়িও। দেশে এই রীতিতে তন্তু তৈরির প্রচলন প্রথম। এতদিন যে পাতাকে অপ্রয়োজনীয় মনে করে ফেলে দেওয়া হত এবার সেই পাতা থেকেই তৈরি হতে চলেছে উত্তরীয় ও শাড়ি। সরকারি সহযোগিতা মিললে আগামীদিনে উত্তরবঙ্গের অর্থনীতিতে এই শিল্প বড় ভূমিকা নেবে বলেও আশাবাদী উত্তরবঙ্গ আনারস চাষি সংগঠনের সম্পাদক অরুণ মণ্ডল। বিশেষ এই উপহার দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর দফতরে জানান হয়েছে। মিলেছে মৌখিক আশ্বাসও। ময়নাগুড়িতেই প্রধানমন্ত্রীর গলায় সংগঠনের তরফে তুলে দেওয়া হয় এই উত্তরীয়। তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী।