কলকাতা: বছর দেড়েক আগে একটি সংবাদ মাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন, আগামী দিনে যদি তাঁর মনে হয় যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে, তাহলে প্রয়োজনে রাস্তায় একটি টুলের উপর দাঁড়িয়েও তিনি প্রতিবাদ করে যাবেন। কিন্তু তিনি চুপ করে বসে থাকবেন না। নিজের প্রতিবাদী স্বরকে ক্রমাগত ছড়িয়ে দেবেন। যেখানে ছিটেফোঁটা দুর্নীতি দেখবেন সেখানে গিয়েই প্রতিবাদ করবেন তিনি।
এই পরিস্থিতিতে বিচারপতির পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে রাজনীতির ময়দানে আসার ইঙ্গিত দিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর সম্ভাব্য গন্তব্য বিজেপি বলেই মনে করা হচ্ছে। কিন্তু যে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন বিচারপতির আসনে বসে, সত্যিই যদি তিনি বিজেপিতে যান, তাহলে তাঁর সেই প্রতিবাদী ইমেজ ভেঙে চুরমার হয়ে যেতে পারে। কারণ বিজেপির বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ রয়েছে। ধরা যাক বিজেপি সংসদ ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের কথা। তাঁর বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ তুলে বহুদিন ধরেই সরব হয়েছেন দেশের একঝাঁক ক্রীড়াবিদ। দীর্ঘদিন ধরে ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে দিল্লিতে।
এছাড়া বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী নারদ মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত। আর দিল্লিতে কৃষি আন্দোলন নতুন করে দানা বেঁধেছে। সবচেয়ে বড় কথা বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো মানুষ তথাকথিত হিন্দুত্ববাদী বিজেপিতে গিয়ে কী নিজেকে মানাতে পারবেন? সেক্ষেত্রে তাঁকেও বিজেপির সিস্টেম অনুযায়ী চলতে হবে। সেভাবেই কথাবার্তা বলতে হবে। সেই জায়গা থেকে বিজেপি বা অন্য কোনও রাজনৈতিক দলে না গিয়ে তিনি যদি ব্যক্তিগতভাবে কোনও মঞ্চ তৈরি করতেন, আর তাঁর কথা অনুযায়ী যদি শহর তথা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে জনতার উদ্দেশে খোলা মনে বক্তব্য রাখতেন, তাতে বোধহয় তাঁর ইমেজ আগের মতোই বজায় থাকত। তিনি যে দুর্নীতির সঙ্গে কোনও আপস করেন না, সেই ইমেজ সম্মানের সঙ্গে ধরে রাখতে পারতেন তিনি। তাই বিচারপতির পদ ছেড়ে রাজনৈতিক ময়দানে গেলে এই বিষয়গুলি নিশ্চয়ই তাড়া করে দাঁড়াবে তাঁকে।
অর্থাৎ নিজের চিরাচরিত সত্তা রাজনীতিতে গেলে কতটা তিনি ধরে রাখতে পারবেন, সেটা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই আছে। এটাও কী ভবিষ্যতে ‘ঐতিহাসিক ভুল’ হিসেবে চিহ্নিত হবে? রাজনীতির ময়দানে না গিয়েও একজন বিচক্ষণ, উদার মনস্ক, ধর্মনিরপেক্ষ মানুষ সমাজ সংস্কারকের ভূমিকায় কাজ করতেই পারেন। যে কাজে নিঃসন্দেহে ‘ফিট’ করতেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি অন্য কথাই বলছে। তাই আগামী দিনে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ইস্যু কোন দিকে যায় এখন সেটাই দেখার।