১৯৯৯ থেকে ২০১৯। বিশ সাল বাদ আবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে সেই ওয়াঘা। ক্ষমতায় এসে অটল বিহারী বাজপেয়ী পড়শি দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। কবি, সাহিত্যিক সর্বোপরি রাজনীতিবিদ বাজপেয়ীর ব্যক্তিগত ক্যারিশ্মার জেরেই প্রশমিত হয়েছিল কয়েক দশক ধরে চলা ভারত পাক উত্তেজনার আঁচ।বন্দুকের নল নামিয়ে রেখছিল দুই দেশই।
১৯৯৯ সালে এই ওয়াঘা সীমান্ত দিয়েই চালু হয় দিল্লি-লাহোর বাস। বাসে করে সীমান্ত পার হন বাজপেয়ী। করমর্দন করেন পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে। এরপর বেশ কিছু দিনের জন্য দুই দেশের সম্পর্ক চলতে থাকে বেশ মসৃন গতিতে। তবে এই কেক ওয়াক দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। পাকিস্তানী সেনা মাঝে মধ্যেই যুদ্ধ বিরতি লঙ্ঘন করে গোলাগুলি বর্ষন করেছে। যার বলি হয়েছে কখনও নিরীহ গ্রামবাসী ।
কখনওবা কর্তব্যরত জওয়ান। নিরন্তর মদত দিয়ে গিয়েছে জঙ্গিদের বাড়বাড়ন্ত। তাই দিনের পর দিন পাক ছাতার তলায় আড়ে-বহড়ে বেড়েছে হিজবুল, লস্কর, জইশের মত নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন। জঙ্গিদের মদত বন্ধে পাক সরকারকে একাধিক বার অনুরোধ জানিয়েছে ভারত সরকার। তাঁর পরেও জঙ্গিবাদের আগুনে ঘি পড়া বন্ধ হয়নি। বাজপেয়ী সরকার চলে যাওয়ার পরেও ভারতের বিভিন্ন রাষ্ট্রনেতারা পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতিতে সচেষ্ট হয়েছেন। যদিও ওপার থেকে সেভাবে সাড়া মেলেনি।
বাজপেয়ীর পথ ধরে ক্ষমতায় এসে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কে উন্নতি ঘটাতে সচেষ্ট হন নরেন্দ্র মোদী। নওয়াজ শরিফের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন মোদী। পাকিস্তানের সাধারন নির্বাচনে কুর্সি হারান নওয়াজ। ক্ষমতায় আসেন তেহরিক-এ-ইনসাফ সুপ্রিমো ইমরান খান। তাঁর সঙ্গেও সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে চেষ্টার কসুর করেননি মোদী। যদিও পাক সরকার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গোলাগুলি বর্ষন চালিয়েই গিয়েছে।
পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার ঘটনা
সম্প্রতি পুলওয়ামায় সি আর পি এফ জওয়ানদের কনভয়ের ওপর হামলা চালায় জইশ-ই-মহম্মদ নামক জঙ্গি সংগঠন। হামলার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয় পাক অধিকৃত কাশ্মীরের বালাকোটে ঘাঁটি গেঁড়ে থাকা এই জঙ্গি সংগঠন। অন্ততঃ ৪০ জন জওয়ানের প্রান যাওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসতে থাকে ভারত। তারপরেই হয় সার্জিকাল স্ট্রাইক-২। এরপরেই দু দেশের উত্তেজনা পৌঁছয় পাহাড় চূড়ায়। বন্দুক উঁচিয়ে দু পক্ষের সেনাই দাঁড়িয়ে যায় সীমান্ত বরাবর। সীমান্তে সমরসজ্জা শুরু করে চিরবৈরি এই দুই দেশ। পাক সেনার মদতে ভারতের বিরুদ্ধে রনহুঙ্কার দেয় ইমরান খানের সরকার। দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের সম্পর্কে উত্তেজনার পারদ ক্রমশ চড়তে থাকায় নড়েচড়ে বসে গোটা বিশ্ব। আমেরিকা, ফ্রান্স, রাশিয়া মায় চিনও দুই শক্তিধর দেশকে নিরস্ত্র করতে উদ্যোগী হয়। ভুট্টোর নাতনি ফতিমাও ইমরানকে যুদ্ধের অসারতা নিয়ে মুখ খোলেন । ঘরে বাইরে প্রবল চাপের মুখে পড়ে পিছু হটতে বাধ্য হয় একদা পাক ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ইমরান খান। তাঁর জেরেই রাতারাতি পাকিস্তানের হাতে বন্দী ভারতীয় বায়ুসেনার উইং কম্যান্ডার অভিনন্দন বর্তমানকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। তাঁকেও হস্তান্তর করা হল সেই ওয়াঘাতেই।
শুক্রবার রাতে নিয়ম ভেঙে ফের একবার খোলে ওয়াঘার লৌহ কপাট। দেশের মাটিতে পা রাখেন অভিনন্দন। একদিন যে ওয়াঘার গেট খুলেছিল বাজপেয়ীর বাসের জন্য সেই গেট আবারও খুলল অভিনন্দনের কল্যাণে। মাঝখানে পেরিয়ে গিয়েছে ২০ টা বছর। ঝিলম দিয়ে বয়ে গিয়েছে অনেক জল। সীমান্ত প্রহরায় দুই দেশই ব্যয় করেছে কত গোলাগুলি।