নয়াদিল্লি: সাত দশকের চুক্তি রাতারাতি খারিজ করে কাশ্মীর ইস্যুতে ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের৷ অবশেষে বাতিল হল জম্মু ও কাশ্মীরকে দেওয়া বিশেষ মর্যাদা দেওয়া ৩৭০ ধারা৷ রাজ্যসভায় জম্মু ও কাশ্মীরকে দেওয়া বিশেষ সুবিধা তুলে নেওয়ার প্রস্তাব পেশ করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ৷ ৩৭০ ধারা খর্ব করার প্রস্তাব পেশেক ঘণ্টার মধ্যেই সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের৷ রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের জেরে জম্মু ও কাশ্মীর পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা হারিয়ে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে পরিণত হচ্ছে৷ একই সঙ্গে লাদাখ হবে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল৷
বেআইনি কার্যকলাপ দমন আইন ২০১৯ বা ইউএপিএ সংশোধনী বিল পাস করিয়ে এবার জম্মু ও কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার করে নিল কেন্দ্র৷ ৩৭০ ধারা তুলে নেওয়ায় উত্তাল সংসদ৷ কিন্তু, প্রশ্ন উঠছে এই সিদ্ধান্তে সব থেকে লাভবান হবেন কারা? এবার কি পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের দখলের পথে পা বাড়াবে কেন্দ্র?
প্রায় ৭০ বছর পার হয়ে গিয়েছে৷ ভারত এখনও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের অঞ্চলে নিজেদের ঘাঁটি তৈরি করতে পারেনি৷ আর সেই কারণেই পাক অধিকৃত কাশ্মীরকে নিজেদের অংশ বলেই দাবি করে পাকিস্তান৷ অনেকেই বলছেন, এতদিন কাশ্মীরের উপর সরাসরি কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় সে কাজ করে ওঠা যায়নি৷ কেননা, ৩৭০ ধারা বলে এতদিন কেন্দ্রীয় আইনি ব্যবস্থা সেখানে চাপিয়ে দেওয়া যেত না৷ ফলে, আইনি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাংরবার বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে৷ কিন্তু, এখন থেকে জম্মু ও কাশ্মীর পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা ছিনিয়ে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে পরিণত কায় সেখানে পৃথক পৃথক ভাবে প্রশাসক নিয়োগ করতে পারে কেন্দ্র৷ ফলে, নিজেদের হারানো জমি ফিরে পেতে অভিযানও চালাতে পারবে ভারত৷ একদিকে জম্মু ও কাশ্মীরের আইন-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করে বাসিন্দাদের উন্নয়নে সামিল করা ও হারানো জমি ফিরে পেতে ধীরে ধীরে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের পথে পা বাড়ানো কেন্দ্রের এখন প্রধান লক্ষ৷
আজ বিরোধীদের তীব্র প্রতিবাদের মধ্যে রাজ্য সভায় দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জামান, জম্মু ও কাশ্মীর আইনসভা দ্বারা পরিচালিত কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল হবে৷ লাদাখ কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল হলেও থাকবে না কোনও আইনসভায়৷ এদিন জম্মু-কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের কেন্দ্রের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ৷ ফলে, এখন থেকে জম্মু-কাশ্মীর ৩৭০ ধারা ধেরে মুক্ত করে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের মর্যাদা পেতে চেলেছে৷
কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চলেছে কেন্দ্র৷ ৩৭০ ধারা তুলে দিয়ে একদিকে যেমন লাভবান হবেন কাশ্মীরের বাসিন্দারা, অন্যদিকে ভোটের বাক্সেও চওড়া সুফল পেতে পারে কেন্দ্র৷ কেননা, এই মুহূর্তে কাশ্মীরের বাসিন্দারা চান শান্তি৷ উপার্জন৷ চাষাবাদ৷ দু’বেলা দু’মুঠো খাবারের ব্যবস্থা৷ সেক্ষেত্রে তাঁরা কোন দেশের বাসিন্দা, তার থেকে বেশি জুরিরি কাশ্মীরের বাসিন্দাদের ভবিষ্যত৷ এক্ষেত্রে কাশ্মীরের বাসিন্দারা কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চলের মর্যাদা পেলে সরাসরি যেমন উন্নয়ন পৌছে দেওয়া যাবে৷ তেমন কাশ্মীরের আইনের শাসকও জারি করতে পারবে কেন্দ্র৷ কেননা এর আগে ৩৭০ ধারার বলে এতদিন কেন্দ্রের কোনও সিদ্ধান্ত সরাসরি কাশ্মীরের বাসিন্দাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া যেত না৷ এখন থেকে তা পারবে কেন্দ্র৷ ফলে, কাশ্মীরের বাসিন্দাদের কাছে উন্নয় পৌঁছে দিয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ফের প্রতিষ্ঠিত করা যাবে৷
কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত কাশ্মীরের বাসিন্দারা সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি কেন্দ্রের বিজেপি সরকারও বেশ খানিকটা স্বস্তি পেতে চেলেছে৷ কেননা, বিজেপির নির্বাচনী ‘সংকল্পে’ ৩৭০ ধারা বাতিল করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল৷ এই সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করে কাশ্মীরের দখল নিয়ে একদিকে যেমন পাকিস্তানিককে বার্তা দিয়ে রাখল কেন্দ্র, তেমনই চিনকেও ঘুরিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখল ভারত৷