নয়াদিল্লি: নোটবন্দি কিংবা এনআরসি৷ মোদির সরকারকে বিঁধতে জাতীয় রাজনীতির ময়দান কাঁপিয়ে তুললে খুব বেশি সময় নেননি তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নোটবন্দির ঘোষণার ১০-১৫ মিনিটের ব্যবধানে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে টুইট করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এনআরসি ইস্যুতেও সবার প্রথম টুইটারে সবর হয়ে দেশজুড়ে ঘোষণা করেছিলেন বিদ্রোহ৷ কেন্দ্রকে বিঁধতে তৃণমূল নেত্রীর তৎপরতা নাড়িয়ে দিয়েছিল দেশের রাজনীতি৷ কিন্তু, সোববার ফের এক বার সেই সুযোগ এলেও তা কার্যত কাজেই লাগালেন না তৃণমূল নেত্রী৷ জম্মু ও কাশ্মীরকে দেওয়া বিশেষ মর্যাদা দেওয়া ৩৭০ ধারা তুলে নেওয়ার কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয় একটিও শব্দ ব্যবহার করলেন না মমতা৷ কিন্তু, রাজ্যসভায় দলের তরফে বিরোধিতা করা হলেও দিনের শেষে সোশ্যাল মিডিয়ায় তৃণমূল সুপ্রিমোর কোনও প্রতিক্রিয়া নিয়ে পেয়ে নয়া ইঙ্গিত পেতে শুরু করেছেন রাজনৈতিক মহল৷
সাত দশকের চুক্তি রাতারাতি খারিজ করে কাশ্মীর ইস্যুতে ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের৷ অবশেষে বাতিল হল জম্মু ও কাশ্মীরকে দেওয়া বিশেষ মর্যাদা দেওয়া ৩৭০ ধারা৷ রাজ্যসভায় জম্মু ও কাশ্মীরকে দেওয়া বিশেষ সুবিধা তুলে নেওয়ার প্রস্তাব পেশ করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ৷ বিরোধীদের তীব্র বিরোধীতা সত্ত্বেও পাস হয়ে গেল ৩৭০ ধারা তুলে দেওয়ার কেন্দ্রের প্রস্তাব৷ অমিত শাহের প্রস্তাবের পক্ষে ১২৫টি ও বিপক্ষে ৬০টি ভোট পড়ে এই বিলে৷ সংসদ সূত্রে খবর, রাজ্যসভায় ভোটাভুটির আগেই ওয়াকআউট করে তৃণমূল৷ কিন্তু, রাজ্যসভায় বিল পাস হয়ে গেলেও ৩৭০ বিতর্ক মুখ্যমন্ত্রীর কোনও প্রতিক্রিয়া পেয়ে নয়া কৌতূহল তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক মহলে৷
অনেকেই বলতে শুরু করেছেন, কী এমন হল তৃণমূল নেত্রীর, দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া তীব্র বিতর্কে অংশ নিলেন না নেত্রী? সোশ্যাল মিডিয়ায় জানালেন না কোনও মন্তব্য৷ যখন মেহবুবা, ওমর আব্দুল্লাহের মতো নেতাদের গৃহবন্দি করে রাখা হল, জম্মু ও কাশ্মীর পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা কেড়ে নেওয়া হল, তারপরও কি নীরব থাকবেন নেত্রী? নাকি, নীরব থেকে কেন্দ্রের অস্ত্রে কেন্দ্রকে বিঁধতে নয়া কৌশল নিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ সর্বভারতীয় স্তরে সোরগোল ফেলে দেওয়া হাতেগরম ইস্যু এভাবে হাতছাড়া কড়ার পাত্রী নন মমতা৷ বিলক্ষণ জানে বাংলা তথা গোটা দেশ৷ কিন্তু, এতবড় ইস্যুতে মমতার নীরবতা নিয়েই দেশের রাজনীতিতে তৈরি হয়েছে নয়া জল্পনা৷ রাত ৭:৫৯ পর্যন্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শেষ টুইট ছিল, ‘‘অসমের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লোকপ্রিয় গোপীনাথ বরদোলইকে তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে প্রণাম৷’’
৩৭০ ধারা খর্ব করার প্রস্তাব পেশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের৷ রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের জেরে জম্মু ও কাশ্মীর পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা হারিয়ে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে পরিণত হচ্ছে৷ একই সঙ্গে লাদাখ হবে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল৷ কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত খোলাখুলি সমর্থন জানিয়ে এবার টুইট করলেন চন্দ্রবাবু নাইডু৷ খোলাখুলি কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানান তেলুগু দেশম পার্টির সুপ্রমো৷ চন্দ্রবাবু লেখেন, ‘‘জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা তুলে নেওয়ার কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে তেলুগু দেশম পার্টি৷ আমি জম্মু ও কাশ্মীরের শান্তির জন্য প্রার্থনা করি৷’’
কেন্দ্রের এই প্রস্তাবে চূড়ান্ত বিরোধীতা করেছে কংগ্রেস ও তৃণমূল সহ বামফ্রন্ট৷ আজ, সোমবার জম্মু ও কাশ্মীকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা তুলে নেওয়ার প্রতিবাদে দিনভর সংসদে গান্ধী মূর্তির সামনে অবস্থানে বসেছে কংগ্রেস-তৃণমূল-বামফ্রন্ট সহ একাধিক বিরোধী দল৷ এদিন তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ওব্রায়েনের পাশে দাঁড়িয়ে কংগ্রেসে নেতা গুলাম নবি আজাদ বলেন, ‘‘এই সিদ্ধান্ত দেশের মাথা জম্মু ও কাশ্মীরকে কেটে খুন করল কেন্দ্রের বিজেপি সরকার৷ এর দায় কেন্দ্রকে নিতে হবে৷ এভাবে কোনও পূর্ণ রাজ্যকে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল ঘোষণা করতে পারে না কেন্দ্র৷ আজ জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র৷’’