নয়াদিল্লি: জম্মু-কাশ্মীর রাজ্য গত বৃহস্পতিবার দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত হয়ে হিয়েছে৷ জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখ৷ ফলে বদলে গেল ভারতের রাজ্যওয়াড়ি মানচিত্র৷ শনিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রকাশিত নয়া মানচিত্রে রয়েছে ২৮টি রাজ্য এবং ন’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল৷
নয়া মানচিত্র অনুযায়ী লাদাখে দু’টি জেলা চিহ্নিত করা হয়েছে৷ কারগিল ও লে৷ গিলগিট, বালতিস্তানকে লাদাখের অংশ হিসেবে দেখানো হয়েছে৷ পাশাপাশি জম্মু-কাশ্মীরে জেলার সংখ্যা ২০টি রাখা হয়েছে৷ যার মধ্যে দেখানো হয়েছে, মুজাফফরাবাদ, পুঞ্চ ও মিরপুর৷ এই তিনটি এলাকা পাক অধিকৃত কাশ্মীরের অন্তর্গত৷ এখনও এই নিয়ে পাকিস্তান ও চিনের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি৷ ভারতের নতুন মানচিত্রে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের অংশকে নিজেদের বলে দাবি করায় ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তোলপাড় পড়ে গিয়েছে৷ অনেকেই বলছেন, শুধু মানচিত্রে পাক অধিকৃত কাশ্মীরকে ভারতের দাবি করলে চলবে না৷ ছিনিয়ে নিতে হবে পাক অধিকৃত কাশ্মীর৷
গত ৬ অগস্ট সংসদে জম্মু ও কাশ্মীরের জন্য সংবিধানের ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিলের পাশাপাশি ওই রাজ্যের পুনর্গঠন সংক্রান্ত বিলটি আনে বিজেপি৷ওই বিল অনুযায়ী জম্মু-কাশ্মীরকে ভেঙে জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখকে আলাদা আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার সিদ্ধান্ত হয়৷ কাশ্মীরের জন্য থাকা সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ লোপ ও জম্মু-কাশ্মীরের পুনর্গঠন বিল আনার ফলে বিশেষ মর্যাদা শুধু নয়, রাজ্যের মর্যাদাটুকুও হারায় জম্মু ও কাশ্মীর৷ বুধবার মধ্যরাত থেকে সেই সিদ্ধান্ত সরকারি ভাবে স্বীকৃতি পেল৷ এখন থেকে দু’টি এলাকার পুলিশ এবং আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা থাকবে কেন্দ্রের হাতে৷ জমির বিষয়টি দেখবে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের নির্বাচিত সরকার৷
সন্ত্রাসবাদ দমন ও প্রশাসনিক সুবিধার কথা মাথায় রেখে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যকে দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ অমিত শাহ বলেন, লাদাখ এত দিন জম্মু ও কাশ্মীরের সঙ্গে থাকলেও, সেখানকার ভূপ্রকৃতি ও জনসংখ্যার চরিত্র আলাদা৷ সেখানকার বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল, লাদাখকে কেন্দ্রশাসিত এলাকা ঘোষণার৷
অন্য দিকে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদের কথা মাথায় রেখে জম্মু ও কাশ্মীরকে কেন্দ্রশাসিত এলাকা করা হচ্ছে৷ অন্য কেন্দ্রশাসিত এলাকার মতোই এ ক্ষেত্রে রাজ্যের মাথায় থাকবেন উপরাজ্যপাল৷ সংবিধানের ৩৬০ অনুচ্ছেদে আর্থিক সংকট ঘোষণা করার অধিকার থাকবে কেন্দ্রের হাতে৷ দিল্লির মতো জম্মু ও কাশ্মীরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বও চলে আসবে কেন্দ্রের হাতে৷
বিজেপি সরকারের এই পদক্ষেপের ফলে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল দিল্লি-পুদুচেরির মতোই বিধানসভা নির্বাচন হবে জম্মু ও কাশ্মীরে৷ অন্য দিকে দমন ও দিউ বা চণ্ডীগড়ের মতো লাদাখে বিধানসভা থাকবে না৷ জনসংখ্যার তারতম্যের কারণে ওই পার্থক্য বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক৷ জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভার মেয়াদ ছয় বছর থেকে কমে দাঁড়াচ্ছে পাঁচ বছরে৷ তবে এখনই বিধানসভার সদস্য কমছে না৷ জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভার বর্তমানে বিধায়ক সংখ্যা ১১১, যার মধ্যে ৪ জন লাদাখের৷ সেই চার জনকে বাদ দিয়ে ১০৭ সংখ্যার জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভা গঠন করা হবে৷
আপাতত বিধায়ক সংখ্যা এক থাকলেও, ভবিষ্যতে জম্মু-কাশ্মীরে সরকার গঠনে আসন পুনর্বিন্যাসের পথে হাঁটার পক্ষপাতী শাসকশিবির৷ যাতে আসন পুনর্বিন্যাসে জম্মু এলাকায় বিধানসভা আসন সংখ্যা বাড়ে৷ ক্ষমতার ভরকেন্দ্র শ্রীনগর থেকে সরে আসে হিন্দু অধ্যুষিত জম্মুতে৷ যদিও পুরো বিষয়টি নিয়ে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আগেই জানিয়েছিলেন সন্ত্রাসবাদের কথা মাথায় রেখেই জম্মু ও কাশ্মীরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হচ্ছে৷ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে, ফের রাজ্যের মর্যাদা ফিরে পেতে পারে জম্মু-কাশ্মীর৷