নয়াদিল্লি: দেশব্যাপী তীব্র বিরোধিতা, জনরোষ, বিরোধী দলগুলির অসম্মতি সত্ত্বেও অবশেষে বুধবার সংসদে পাশ হলো বহুচর্চিত এবং সমালোচিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল৷ সোমবার লোকসভায় বিল পেশ করতেই রীতিমত বেগ পেতে হয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে৷ এরপর দিনভর তর্ক বিতর্কের মধ্যেই ৩১১-৮০ভোটে লোকসভায় ছাড়পত্র পায় এই বিল৷ বুধবার রাজ্যসভায় ১২৫-১০৫ ভোটে পাস হয় এই বিল৷ কিন্তু, বিল পাস হলেও পিছু ছাড়ছে না বিতর্ক৷
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলকে (সিএবি) ভারতের আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী আখ্যা দিয়ে এর তীব্র সমালোচনা করল বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)৷ এক বিবৃতিতে সংস্থা জানিয়েছে যে বিতর্কিত এই বিলে আন্তর্জাতিক কনভেনশন অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটস (আইসিসিপিআর) ও অন্যান্য মানবাধিকার চুক্তির লঙ্ঘনকরা হয়েছে৷ চুক্তিতে স্বাক্ষরকৃত দেশগুলোর ধর্ম, বর্ণ, জাতিগত-ধর্মের কারণে নাগরিকত্ব বাতিল না করার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে৷ তাসত্ত্বেও প্রতিবেশী বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে ভারতে পালিয়ে আসা নীপিড়িত হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, পার্সি এবং খ্রিস্টানদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে৷
এইচআরডব্লিউ’র দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক প্রধান, মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেছেন, সরকারের নাগরিকত্ব আইনের লক্ষ্য হল পাকিস্তানের আহমাদিয়া এবং মায়ানমারের রোহিঙ্গা এই দুই জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের রক্ষা করা৷ তবে এ বিলে উদ্বাস্তু এবং আশ্রয়ের কথা বলা হলেও সেখানে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ধর্মীয় ভিত্তিতে বৈষম্য করা হয়েছে বলেই উল্লেখ করেন তিনি৷
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আরও বলেছে বিলে বিজেপি সরকার কর্তৃক প্রচারিত অন্যান্য অনেক নীতি প্রতিফলিত হয়েছে যা মুসলমানদের তুলনায় বেশিরভাগ হিন্দুদের পক্ষে, যেমন ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর হামলায় জড়িত দলীয় সমর্থকদের যথাযথ বিচারের ক্ষেত্রে ব্যর্থতা৷ সরকার রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থীদের জীবন ও সুরক্ষার ঝুঁকি সত্ত্বেও মিয়ান মায়ানমারে নির্বাসিত করেছে৷
দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলির মতে, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে ‘লাখ লাখ মুসলিমের নাগরিকত্বের অধিকারের মতো মৌলিক অধিকারকে ছিনিয়ে নেওয়ার আইনি ভিত্তি তৈরি করেছে সরকার৷ এখন ভারত সরকারের উচিত একটি আইন পাস করে শরণার্থীদের সুরক্ষা দিয়ে নিজেদের প্রতিশ্রুতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা, যা ধর্ম নির্বিশেষে তাদের সুরক্ষা দেয়৷