ক্যাব দিয়েই ৭০ বছরের ক্ষত ভরাট করতে পারবে সঙ্ঘ-বিজেপি?

কলকাতা: স্বাধীনতার পর ৭০ বছর ধরে পাকিস্তান বলে এসেছে দেশ ভাগের মধ্যে একটা অপূর্ণতা থেকে গিয়েছে৷ ভারত যদি কাশ্মীর সমস্যার সমাধান করে তবেই সেই অপূর্ণতা ভরাট হবে৷ ভারতের উটটির ছিল, দেশ ভাগে আর কোনও অপূর্ণতা নেই৷ ওটা এখন ‘ক্লোজড চ্যাপ্টার৷’ পুরানো বইয়ের পাতা উল্টে আর দরকার নেই৷ বরং কাশ্মীরের একটা বড় অংশ বেআইনি দখল করে

ক্যাব দিয়েই ৭০ বছরের ক্ষত ভরাট করতে পারবে সঙ্ঘ-বিজেপি?

কলকাতা: স্বাধীনতার পর ৭০ বছর ধরে পাকিস্তান বলে এসেছে দেশ ভাগের মধ্যে একটা অপূর্ণতা থেকে গিয়েছে৷ ভারত যদি কাশ্মীর সমস্যার সমাধান করে তবেই সেই অপূর্ণতা ভরাট হবে৷ ভারতের উটটির ছিল, দেশ ভাগে আর কোনও অপূর্ণতা নেই৷ ওটা এখন ‘ক্লোজড চ্যাপ্টার৷’ পুরানো বইয়ের পাতা উল্টে আর দরকার নেই৷ বরং কাশ্মীরের একটা বড় অংশ বেআইনি দখল করে রেখে সমস্যা পাকিস্তান’ই তৈরি করছে৷ তবে, বুধবার রাজ্যসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল বা ক্যাব পাশ হওয়ার পর থেকেই ভারত ৭০ বছরের পুরান অবস্থান থেকে সরে এসেছে৷

কেন ভারতের অবস্থান বদল হল? রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আর এস এস) নিয়ন্ত্রিত বিজেপি মনে করে দেশ ভাগের পরেও অপূর্ণতা থেকে গিয়েছে৷ তবে অবশ্যই সেই অপূর্ণতা কাশ্মীরকে নিয়ে নয়৷ বরং তা হল, পাকিস্তানে রয়ে যাওয়া ধর্মীয় সংখ্যালঘু, বিশেষ করে হিন্দুদের দিন দিন কমতে থাকে সংখ্যা৷ পাকিস্তান অর্থে এখানে শুধু পাকিস্তানই নয়, পূর্ব পাকিস্তান (পরবর্তীকালে স্বাধীন বাংলাদেশের) কথাও বলা যেতে পারে৷ এই দেশগুলির ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা নিপীড়নের স্বীকার হয়েছেন এবং ভারতে পালিয়ে এসে তাঁরা বসবাস করছে৷

এখানেই, নেহরু-লিয়াকত চুক্তি আলোচনায় প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে৷ ১৯৫০ সালের ৮ এপ্রিল দিল্লিতে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু এবং পাক প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়৷ সেই চুক্তি অনুযায়ী, দুই দেশই তাদের সংখ্যালঘুদের আশ্রয়, নিরাপত্তা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়৷ এছাড়াও বলা হয়, যে সংখ্যালঘুর ভারত থেকে পাকিস্তানে বা পাকিস্তান থেকে ভারতে পালিয়ে এসেছে তাদের নিরাপত্তা দেওয়া হবে৷ তাঁদের সম্পত্তি রক্ষা করা হবে৷ এছাড়াও যারা পাকাপাকি ভাবে দেশ বদল করতে চায়, তারাও নিজের সম্পত্তি সমেত আসতে পারে৷ তবে, যার জন্য কিছু শর্ত ছিল চুক্তিতে৷ যেমন নির্দিষ্ট সংখ্যক টাকা সঙ্গে আনা যাবে৷ নির্দিষ্ট সংখক মানুষ একসঙ্গে আসতে পারবে৷

উল্লেখ করা যেতে পারে, সেটা ছিল এক রক্তাক্ত সময়৷ ৫০ এ পূর্ব পাকিস্তানে নোয়াখালীর দাঙ্গা এক রক্তাক্ত ইতিহাসের সাক্ষী৷ একই ঘটনা ঘটে পাঞ্জাবেও৷ বেসিরভাব পাঞ্জাবি হিন্দু, শিখরা ভারতে চলে আসেন৷ মুসলমান চলে যান পাকিস্তানে৷ কিন্তু, মনে রাখতে হবে দেশের পূর্ব প্রান্তে এই ঘটনা ঘটনা ঘটেনি৷

দেশ ভাগের পরও দেশের পূর্ব পাকিস্তানে কিছু হিন্দু থেকে যান৷ আবার ভারতে (আসাম, ত্রিপুরা এবং পশ্চিমবঙ্গ) কিছু মুসলমান থেকে যান৷ কিন্তু, শুরু হয় মারাত্মক দাঙ্গা৷ ৫০ এর নোয়াখালীর দাঙ্গার কথা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে৷ এই পরিস্থিতিতেই নেহরু-লিয়াকত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়৷ পাকিস্তান ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের আশ্রয় দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়৷

প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ: আরএসএস পরিচালিত বিজেপি সরকার মনে করছে নেহরু-লিয়াকত চুক্তি, যার জন্য শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় কংগ্রেসের মন্ত্রিসভা ত্যাগ করেন, তা ভেঙে গিয়েছে৷ চুক্তি অনুযায়ী ভারত প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছে৷ কারণ, ভারতে হিন্দুদের থেকেও মুসলমানদের আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি হয়ছে৷ কিন্তু, পাকিস্তান প্রতিশ্রুতি রাখেনি৷ ওই দেশে হিন্দু এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের সংখ্যা কমছে৷ ওরে শূন্য৷ পরবর্তীকালে বাংলাদেশের হিন্দু এবং সংখ্যালঘু নিধন চলতে থাকে৷

ক্যাবের সঙ্গে কী সম্পর্ক: বিজেপির সাফ কথা নেহরু-লিয়াকত চুক্তি যখন ভেঙে পড়েছে তখন উদ্বাস্তুর সঙ্গা মেনে ভারতে পাকিস্তান, বাংলাদেশের হিন্দু বৌদ্ধ, জৈন, শিখ, খ্রিস্টান শরণার্থীদের নাগরিকত্ব প্রদান আবশ্যক৷ রাষ্ট্র সঙ্ঘের উদ্বাস্তু সঙ্গা তাই বলে৷ সেক্ষেত্রে ওই দেশের ধর্মীয় সংখ্যাগুরু মুসলমানদের ক্যাব দিয়ে চিহ্নিতকরণ করা হবে৷ নাগরিকত্ব প্রদান করা হবে না৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

12 − 10 =