নয়াদিল্লি: দেশের আর্থিক দৈন্যতার জন্য দায়ী একাধিক সরকারি পদক্ষেপের মধ্যে এবার নতুন সংযোজন 'ইন্টারনেট শাটডাউন'৷ ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইন্টার্নেশনাল ইকনোমিক রিলেশনস-এর ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশ্বের উন্নত দেশগুলির মধ্যে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখার ক্ষেত্রে শীর্ষ স্থানে ভারত৷ আন্তর্জাতিক সংস্থা সফটওয়্যার ফ্রিডম ল সেন্টারে যারা সারা দুনিয়ায় ইন্টারনেট শাটডাউনের হিসেব রাখে, তাদের রিপোর্টেও একই কথা উল্লেখ করা হয়েছে৷ এই সংস্থার মতে বিশ্বের উন্নত দেশগুলির মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে যেমন প্রথম সারিতে ভারত, তেমনই ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখার ক্ষেত্রেও শীর্ষ স্থানে দেশ৷
ডিজিটাল রাইটস গোষ্ঠী অ্যাক্সেস নাউয়ের ওয়েবসাইট অনুসারে, ২০১২ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত সরকারি নিষেধাজ্ঞা মেনে ভারতে মোট ৩৭৭ বার ইন্টারনেট বন্ধ হয়েছে৷ এই সময়ে, কাশ্মীরেই ১৮০ বার, রাজস্থানে ৬৮ বার, উত্তরপ্রদেশে ২৭ বার, বিহারে ১১ বার এবং উত্তরাখণ্ডে ২ বার ইন্টারনেটে নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ একই সময়ে মহারাষ্ট্রে মোট ১০ বার, অন্ধ্র প্রদেশে ১ বার তামিলনাড়ুতে ১ বার এবং পশ্চিমবঙ্গে ৯ বার ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করা হয়৷
সেলুলার অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া (সিওএআই)-এর ডাইরেক্টর রাজন ম্যাথিউজ সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে হিসেব তুলে ধরে জানিয়েছে, ২০১৯-এ বিভিন্ন সময় অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারি নির্দেশ মেনে বাধ্যতামূলকভাবে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখতে গিয়ে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ২৪ কোটিরও বেশি টাকার লোকসান হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলির৷
এক্ষেত্রে উল্লেখ করা যায়, দেশের মধ্যে যেকোনো অশান্তির পরিস্থিতি এড়াতে ভারত সরকারের প্রাথমিক পদক্ষেপ হল ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা৷ সেক্ষেত্রে, সাম্প্রতিক কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা তুলে নেওয়া থেকে শুরু করে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের ইস্যুতে দেশের মধ্যে বেশিরভাগ রাজ্যে দফায় দফায় নেট পরিষেবা বন্ধ হওয়ার প্রেক্ষিতে সবথেকে বড়সড় লোকসানের মুখে ভারতের ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারীরা৷ সরকারের এই পদক্ষেপ সঠিক নয় বলেই মত প্রকাশ করেছেন তিনি৷
সিওএআই-এর সদস্যদের মধ্যে আছে মোবাইল ক্যারিয়ার ভারতী এয়ারটেল (বিআরটিআই.এনএস), ভোডাফোন আইডিয়া (ভিওডিএএনএস) এবং রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের (রিইলআইএনএস) মত সংস্থাগুলি৷ সরকারকে এই সমস্যার বিষয়ে চিঠি লিখলেও কোনো উত্তর মেলেনি বলেই জানিয়েছে সংস্থাগুলি৷
সুইডিশ টেলিকমস গিয়ারমেকার এরিকসন (এরিকসিবি.এসটি) এর মতে, ভারতীয়রা তাদের স্মার্টফোনে প্রতি মাসে গড়ে ৯.৮গিগাবাইট ডেটা ব্যবহার করেন৷ স্যোশাল মিডিয়ার মধ্যে ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপের ব্যবহারকারীদের সংখ্যাই এখানে সবথেকে বেশি৷
চলতি বছরের অক্টোবরেই সুপ্রিম কোর্টের রায় ঘোষণার পরে রাজস্ব মেটাতে গিয় মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়তে হয় ভারতের সবথেকে বড় টেলিকম সংস্থাগুলিকে৷ এরপর ঘুরে দাঁড়াতে গিয়ে প্রতিটি সংস্থাই দাম বাড়িয়েছে৷ এখন যার মাশুল গুনতে হচ্ছে আমজনতাকে৷ তার ওপর দিনের পর দিন ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকায় আবারও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন টেলিকম সংস্থাগুলি৷
শুক্রবারও উত্তর প্রদেশের কমপক্ষে ১৮ টি জেলায় মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল৷ টেলিকম সংস্থা সূত্রে এমনটাই জানানো হয় রয়টার্সকে৷ খোদ রাজধানী দিল্লিতেই হোম ব্রডব্যান্ড পরিষেবা ২৪ ডিসেম্বর থেকে ২৮ ডিসেম্বর সকাল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে বলে জানান হয়েছিল৷