নয়াদিল্লি: ২২ জানুয়ারি নির্ভয়া কাণ্ডে ৪ দোষী অক্ষয় ঠাকুর সিং, মুকেশ সিং, পবন গুপ্তা এবং বিনয় শর্মাকে ফাঁসির নির্দেশ দিল পাতিয়ালা হাউস কোর্ট৷ ২২ জানুয়ারি সকাল ৭টায় তিহার জেলে চারজনকে ফাঁসি দেওয়া হবে৷ পরবর্তী আইনি সাহায্য নেওয়ার জন্য দোষীদের ১৪ দিনের সময় দেওয়া হয়েছে৷
২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাজধানী শহর দিল্লিতে গভীর রাতে ফাঁকা বাসে গণধর্ষণ করা হয় প্যারামেডিক্যাল পড়ুয়া নির্ভয়াকে৷ ঘটনায় ৫ অভিযুক্তের ফাঁসির আদেশ দেয় নিম্ন আদালত৷ জেলে থাকাকালীনই দোষী রাম সিং আত্মহত্যা করে৷ আর এক দোষী অপরাধের সময় নাবালক হওয়ায় সর্বোচ্চ তিন বছর জেল খাটার পর ছাড়া পেয়ে যায়৷ বাকিরা সাত বছর ধরে জেল খাটছিল৷ আজ তাঁদের ফাঁসি ঘোষণা করেন বিচারক৷
সাত বছর ধরে চলা নির্ভয়া মামলার সময়রেখা-
১৬ ডিসেম্বর, ২০১২: বাসচালক রাম সিংহ, তার ভাই মুকেশ সিং, অক্ষয় ঠাকুর, পবন গুপ্তা, বিনয় শর্মা এবং এক নাবালক মিলে নারকীয় অত্যাচার চালায় নির্ভয়ার উপর৷ গণধর্ষনের ঘটনায় যুক্ত ছিল এক নাবালকও৷
৩ জানুয়ারি, ২০১৩: তদন্তে নেমে দিল্লি পুলিশ পাঁচ প্রাপ্তবয়স্ক অভিযুক্তের বিরুদ্ধে হত্যা, গণধর্ষণ, হত্যার চেষ্টা, অপহরণ, ডাকাতি-সহ একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করে৷
২৮ জানুয়ারি, ২০১৩: তদন্তে নেমে জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ড রায় দেয়, ছ'জনের মধ্যে একজন আসামি নাবালক৷
২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩: পাঁচ প্রাপ্তবয়স্ক আসামি হত্যা-সহ ১৩টি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়৷
১১ মার্চ, ২০১৩: বাসচালক রাম সিংহ সংশোধনাগারের মধ্যেই গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী হয়৷
২১ মার্চ, ২০১৩: দেশে ধর্ষণ আইন সংশোধন করা হয়৷ ধর্ষণ অপরাধীদের মৃত্যু-সহ যৌন অপরাধের শাস্তি দিতে নতুন কঠোর ধর্ষণ বিরোধী আইন প্রণয়ন করা হয়৷
৩১ আগস্ট, ২০১৩: জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ড অপরাধী দোষী ওই নাবালককে তিন বছর হোমে রাখার নির্দেশ দেয় গণধর্ষণ এবং খুনের অপরাধে৷
১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৩: ফাস্ট ট্র্যাক আদালত অভিযুক্ত মুকেশ, বিনয়, অক্ষয়, পবনকে গণধর্ষণ, খুন, অপ্রাকৃত অপরাধ, অপহরণ, এবং তার পুরুষ বন্ধুকে হত্যার চেষ্টা-সহ ১৩টি ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে৷
১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৩: ফাস্ট ট্র্যাক আদালত চার আসামির মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করে৷ মৃত্যুদণ্ড ভাল রাখতে ট্রায়াল কোর্ট মামলাটি দিল্লি হাইকোর্টে পাঠায়৷
১ নভেম্বর, ২০১৩: দিল্লি হাইকোর্টে শুরু হয় নিয়মিত শুনানি৷
১৩ মার্চ, ২০১৪: চার আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখল দিল্লি হাইকোর্ট৷
২০ ডিসেম্বর, ২০১৫: দিল্লি হাইকোর্ট দোষী নাবালক ৩ বছর হোমে থাকার পরে তাঁকে মুক্তি দেয়৷ সে হোম থেকে ছাড়া পেয়ে যায়৷
৩ এপ্রিল, ২০১৬: সুপ্রিমকোর্টে শুরু হয় মামলার শুনানি৷
২৭ মার্চ, ২০১৭: সুপ্রিম কোর্ট এই মামলার শুনানির প্রায় এক বছর পর রায় সংরক্ষণ করে৷
৫ মে, ২০১৭: সুপ্রিমকোর্ট অক্ষয় ঠাকুর, বিনয় শর্মা, পবন গুপ্ত এবং মুকেশ সিং-এর মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে৷
৯ জুলাই, ২০১৮: নির্ভয়াকাণ্ডে দোষী পবন, মুকেশ এবং বিনয়ের রিভিউ পিটিশন বাতিল করে সুপ্রিম কোর্ট৷
১৩ ডিসেম্বর, ২০১৮: নির্ভয়ার বাবা-মা চার আসামির ফাঁসি কার্যকর করার জন্য পটিয়ালা হাউস আদালতের দ্বারস্থ হন৷
২৯ অক্টোবর, ২০১৯: তিহার জেল নির্ভয়া ধর্ষণ ও খুনের আসামিদের ক্ষমা প্রার্থনা আবেদনের জন্য সাত দিনের সময় দেয়৷ অন্যথায় তারা আদালতে গিয়ে কালো পরোয়ানা চাইবে বলে জানায়৷
৮ নভেম্বর, ২০১৯: বিনয় শর্মা দিল্লি প্রশাসনের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা আবেদন জসনায়৷
২৯ নভেম্বর, ২০১৯: দিল্লির স্বরাষ্ট্র দফতর বিনয়ের ক্ষমা প্রার্থনা নাকচ করে দেয়৷ এরপর তা পাঠানো হয় মুখ্য সচিবের কাছে৷
৩০ নভেম্বর, ২০১৯: মুখ্য সচিব ক্ষমার আবেদন নাকচ করে তা পাঠিয়ে দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈনের কাছে৷
১ ডিসেম্বর, ২০১৯: সত্যেন্দ্র জৈনের বিনয়ের আবেদন নাকচ করে তা লেজিসলেটিভ জেনারেলের কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেন৷
২ ডিসেম্বর, ২০১৯: লেজিসলেটিভ জেনারেল বিনয়ের আবেদন খারিজ করে দিল্লি প্রশাসনের সিদ্ধান্তে সম্মতি দেন৷
৬ ডিসেম্বর, ২০১৯: রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয় খনা প্রার্থনার আবেদন৷ যদিও তা খারিজ করে দেওয়ার আবেদন জানার দিল্লি প্রশাসন৷
১০ ডিসেম্বর, ২০১৯: অক্ষয় ঠাকুর ক্ষমা প্রার্থনা আবেদন জানায় সুপ্রিমকোর্টে৷
১৭ ডিসেম্বর, ২০১৯: সিজেআই রায় পুনর্বিবেচনার কারণ কি আছে, তা প্রশ্ন করেন৷
১৮ ডিসেম্বর, ২০১৯: সুপ্রিমকোর্ট পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ করে দেয়৷
৭ জানুয়ারি, ২০২০: ফাঁসির রায় দিল পাতিয়ালা হাউস কোর্ট আদালত৷