সংকটে জলের উৎস! হিমবাহের দখল নিচ্ছে অজানা গাছ!

সংকটে জলের উৎস! হিমবাহের দখল নিচ্ছে অজানা গাছ!

নয়াদিল্লি: গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের ভয়ঙ্কর প্রভাবে বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের চিত্রটা দিন দিন অস্বাভাবিক হয়ে উঠছে৷ এরমধ্যেই আরও ভয়ঙ্কর বার্তা বয়ে আনলো নাসা ল্যান্ডস্যাট স্যাটেলাইটের তথ্য৷ এই তথ্য অনুসারে হিমালয়ের হিন্দুকুশ পর্বতমালার স্থায়ী হিমবাহ এবং তুষারাবৃত উচ্চতর একটা বিস্তৃত অংশে প্রভাব বিস্তার করছে সাবনিভাল ইকোসিস্টেম৷ এর বৈশিষ্ট্য ছোটো ছোটো গাছ এবং মরশুমি বরফ৷

এই অঞ্চলে বরফের স্তরের নীচে উদ্ভিদ জন্মানোর মত পরিবেশ থাকলেও তার এতটা বাড়াবাড়ি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে একটা বড়সড় চ্যালেঞ্জ হতে চলেছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ বলা যায় এই অঞ্চলেও যে উদ্ভিদ জন্মাতে পারে এটা একসময় কল্পনাতীত ছিল৷ ল্যান্ডস্যাট ৫,৭ এবং ৮ মিশনের স্যাটেলাইট ডেটা থেকে ১৯৯৩-২০১৮ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে তথ্য সংগ্রহের পর দীর্ঘদিনের এই উপেক্ষিত বিষয়টিই এখন পরিবেশবিদদের চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে৷

এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত এগ্জেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ডঃ ক্যারেন আন্ডার সনের বক্তব্য, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে  সাবনিভাল ইকোসিস্টেমের জন্য সাবনিভাল উদ্ভিদ যা সাধারণত ঘাসের মত হয, তার বিন্যাস এবং বাস্তুতন্ত্রের পরিবর্তনের হার সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য জানা যায়নি, তবে স্যাটেলাইটের তথ্য অনুসারে বিগত ২৫ বছরে সাবনিভাল ইকোসিস্টেম স্থায়ী হিমবাহ এবং বরফের ক্ষেত্রফলের তুলনায় পাঁচ থেকে ১৫ গুণ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে৷ তাঁর মতে, হিমালয়ের ৫০০০ থেকে ৫৫০০ মিটার উচ্চতায় উদ্ভিদের সংখ্যা বৃদ্ধি, বিশ্ব উষ্ণায়নের একটি উল্লেখযোগ্য প্রমাণ বলা যায়৷

যখন শতাব্দীর শুরু থেকে এপর্যন্ত ২০০০ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে এই উদ্ভিদের সবথেকে বেশি মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে৷ গবেষকদের এই অঞ্চল এবং এখানকার জলের বৃহত্তম উৎস সম্পর্কে সেই অর্থে ধারণা না থাকলেও এর প্রভাব দৃষ্টান্তমূলক বলেই মনে করছেন৷ বিশেষত যখন অতটা, উচ্চতায় বরফের পরিবর্তে উদ্ভিদের সংখ্যা যেভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে৷ এমনকি এই উচ্চতায় উদ্ভিদের অস্তিত্ব সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়, কারণ বেশিরভাগ বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার মধ্যে হিমবাহের পশ্চাদপসরণ এবং হিমবাহের হ্রদ সম্প্রসারণের দিকে দৃষ্টিপাত করা হয়েছে ৷ এগ্জেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দলে আছেন অ্যান্ডারসন, ফাউসেট, কগুলিয়ার, বেনফোর্ড, জোন্স, ও লেং৷

উপসাগরীয় হিন্দু কুশ হিমালয় অঞ্চলে উদ্ভিদের বিস্তার৷ গ্লোবাল চেঞ্জ বায়োলজি, 2019; 00: 1– 18. https://doi.org/10.1111/gcb.14919 শীর্ষক এই গবেষণা থেকে যে ভয়ঙ্কর তথ্য উঠে আসছে তা হল জল সম্পদের ওপর এর প্রভাব৷ কারণ হিমালয়ের উচ্চতর এই অঞ্চলের হিমবাহগুলি বৃহত্তর এশিয়ার জলের উৎস বা জল স্তম্ভ বলে মনে করা হয়৷ হিন্দু কুশ হিমালয়ান অঞ্চলটি পশ্চিমে আফগানিস্তান থেকে পূর্বে মিয়ানমার পর্যন্ত আটটি দেশের সমস্ত বা কিছু অংশ জুড়ে রয়েছে৷ এই অঞ্চলে জলের ওপর নির্ভর করে ১.৪ বিলিয়ন মানুষের জীবন৷ যে পরিমাণে হিমবাহ গলতে শুরু করেছে তাতে বরফগলা জলে পুষ্ট এই অঞ্চলের নদীগুলির জন্য এখন চরম অশনিসংকেত৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eighteen − fourteen =