নয়াদিল্লি: 'বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য' ভারতবর্ষ সম্পর্কে প্রচলিত এই ধারণাটি মোদি সরকারের আমলে আরও বেশি বৈচিত্রপূর্ণ হয়ে উঠেছে৷ এখন বৈচিত্র আর ঐক্য শব্দ দুটি পৃথকভাবে নিজেদের ক্ষমতা জাহির করতে ব্যস্ত৷ যেমন দেহরাদুন-এর পরিবর্তে যদি বলা যায় 'দেহরাদুনম্' ? হরিদ্বার-কে বলা যায় হরিদ্বারম্৷ উত্তরাখণ্ডে বেড়াতে গিয়ে সেখানকার স্টেশনগুলোতে এখন থেকে এমন নাম চোখে পড়লে আশ্চর্য হবেন না৷
কারণ রেলমন্ত্রকের সিদ্ধান্ত অনুসারে এখন থেকে উত্তরাখণ্ডের প্ল্যাটফর্মগুলির সাইনবোর্ডে উর্দুর পরিবর্তে সংস্কৃত ভাষায় লেখা থাকবে স্টেশনের নাম৷ অর্থাৎ এতদিন যেখানে ছিল হিন্দি, ইংরেজি, উর্দু পরিবর্তে হবে হিন্দি, ইংরেজি, সংস্কৃত৷ সূত্রের খবর, সংস্কৃত এই রাজ্যের দ্বিতীয় ভাষা৷ সেই কথা মাথায় রেখে রেলওয়ে ম্যানুয়াল অনুসারে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷
এর আগে ২০১০ সালে, দেশের রাজ্যগুলির মধ্যে উত্তরাখন্ডেই প্রথমবার সংস্কৃত ভাষাকে দ্বিতীয় সরকারি ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়৷ সেই সময় এই রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল নিশাঙ্ক রাজ্যে সংস্কৃতকে প্রচারের আলোয় আনার উদ্যোগ নিয়েছিলেন৷ এবিষয়ে হিমাচল প্রদেশ প্রথম এগিয়ে আসে৷ সম্প্রতি মোরাদাবাদ এর স্থানীয় এক নেতা এই নির্দেশিকার কথা স্মরণ করিয়ে দেন এবং তার পরেই মোরাদাবাদ রেলওয়ে ডিভিশনে এটি কার্যকর হয়৷
নর্দান রেলওয়ের প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা দীপক কুমার জানিয়েছেন, রেলওয়ে ম্যানুয়াল অনুসারেই ইংরেজি ও হিন্দির সঙ্গে রাজ্যের দ্বিতীয় সরকারি ভাষা হিসেবে সংস্কৃত ভাষা প্ল্যাটফর্মের সাইন বোর্ডে লেখা হবে তিনি বলেন এতদিন উত্তরাখণ্ড রাজ্যটি উত্তরপ্রদেশের সঙ্গে যুক্ত থাকায় উত্তরপ্রদেশের দ্বিতীয় সরকারি ভাষা উর্দুকে প্রাধান্য দেওয়া হতো৷ কোন একজন ব্যক্তি রাজ্যের দ্বিতীয় সরকারি ভাষা হিসেবে সংস্কৃত ভাষাযর বিষয়টি মনে করিয়ে দেওয়ার পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷
Indian Railways: Railways Ministry has decided that Sanskrit will replace Urdu on the boards in all railway stations in Uttarakhand. Sanskrit is the 2nd language of the state&the change is as per rules, which state that 2nd language of the state should be displayed on the boards. pic.twitter.com/OG6g7UTRkE
— ANI (@ANI) January 19, 2020
এ প্রসঙ্গে সিনিয়র ডিভিশনাল ম্যানেজার, রেখা শর্মারও একই বক্তব্য৷ তবে সংস্কৃত ভাষায় কীভাবে শহরগুলির নাম লেখা হবে সেটি তাদের জন্য একটি কঠিন কাজ বলেই উল্লেখ করেন তিনি৷
উত্তরাখণ্ডের যে সমস্ত জায়গায় রেলস্টেশন আছে সেখানকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের হিন্দি, ইংরেজি ও সংস্কৃত ভাষায় স্টেশনের নামগুলির ক্ষেত্রে সঠিক বানান লেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷
তবে স্থানীয় এক সংস্কৃত শিক্ষক বলছেন, হিন্দি ও সংস্কৃতি ভাষা প্রায় একইরকম৷ পার্থক্য বলতে, সংস্কৃতের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র শব্দের শেষে 'ম' উচ্চারণ হয়৷ হিন্দি ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে একই ভাবে দেবনাগরী হরফ ব্যবহার করা হয়৷ সেক্ষেত্রে দেহরাদুন হবে 'দেহরাদুনম', হরিদ্বার হবে 'হরিদ্বারম', রুরকি হবে রুরকিহ্৷ এই তালিকায় থাকছে লাখসার, রায় ওয়ালা, দোইওয়ালা, ঋষিকেশ সহ আরো বেশ কয়েকটি স্টেশনের নাম৷
তবে এই প্রথম নয় গত বছরও রাজ্যে সংস্কৃত ভাষাকে প্রচারের আলোয় আনতে এক অভিনব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল৷ বলা হয়েছিল প্রেস বিবৃতিগুলিও সংস্কৃতে লেখার কথা৷ তবে শেষ পর্যন্ত সেই সিদ্ধান্ত রাজ্যের মাত্র দুটি সংবাদমাধ্যমেই কার্যকর হয়েছে৷
ভাষাবিদদের মতে উর্দু ও হিন্দি দুটি ভাষাই ইন্দো-ইরানীয় ভাষাগোষ্ঠীর অন্তভুক্ত৷ দুটি ভাষাই সংস্কৃতির অপভ্রংশ খাড়িবুলি থেকে উৎপন্ন হিন্দুস্তানি ভাষার দুটি ভিন্ন লিখিত রূপ৷ হিন্দুস্তানি ভাষা ফারসি প্রভাবিত আরবি হরফে লিখলে তা উর্দু৷ আর হিন্দুস্তানি ভাষা দেবনাগরি লিপিতে লিখলে তা হিন্দি৷ উর্দু ভাষা আরবি-ফারসি শব্দবহুল আর হিন্দি ভাষা সংস্কৃত শব্দ বহুল৷ ভাষাগোষ্ঠী হিসেবে হিন্দি-উর্দু কে একই ভাষা হিসেবে গণ্য করা হয় এবং হিন্দি-উর্দুর ভাষাগত বিভাজনটি কৃত্রিম৷