জুতো পালিশ করে সংসার চালানো সানি’র কণ্ঠে কাঁপছে ইন্ডিয়ান আইডল!

কোনরকম প্রথাগত প্রশিক্ষণ নেই। জুতো পালিশ করেই গায়ক হবার স্বপ্ন চোখে ইন্ডিয়ান আইডল সিজন ইলেভেন এর চূড়ান্ত ১০-এর তালিকায় পাঞ্জাবের সানি হিন্দুস্তানি। 

নয়াদিল্লি: “বাস্তবতা এতই কঠিন যে কখনও কখনও বুকের ভিতর গড়ে তোলা বিন্দু বিন্দু ভালবাসাও অসহায় হয়ে পড়ে।”

দিনের পর দিন এই চরম অসহায়তাকে সঙ্গী করেই বেড়ে উঠছিল ছোট্ট সানি, মায়ের আদরের 'লাড্ডু'। আর মনের মধ্যে গড়ে উঠছিল গানের প্রতি তাঁর বিন্দু বিন্দু ভালোবাসা। আর সেই প্রতিভার প্রকাশ ঘটলজনপ্রিয় টেলিভিশন শো 'ইন্ডিয়ান আইডল' সিজন ইলেভেনের মঞ্চে। পাঞ্জাবের ভাটিন্ডার অমরপুরা বস্তিতে পলেস্তারা খসা জরাজীর্ণ ঘর যেখানে দিনের আলো ঢোকাও দুষ্কর। সেখানেই তিন বোন,অসুস্থ বাবা আর সংসারের দৈন্যদশায় দিশেহারা এক মা। এটাই ছিল সানির পরিবারের বাস্তব চিত্র। সেই ঘরেই ধীরে ধীরে বেড়ে উঠেছে তার শৈশব। অসহায় মায়ের একটুকরো আশার আলো। তবে দারিদ্রতা, অসহায়তার চরম সময়েও একমাত্র স্বান্তনার প্রলেপ ছিল গান।

বাবা মানিক রামের গলাতেও সুর ছিল, সাধনা ছিল। তবে সাধ আর সাধ্যের মাঝে বাধ সেধেছিল দারিদ্রতা। কিন্তু বাবার সেই প্রতিভার প্রভাব ছোট্ট সানির মধ্যেও লক্ষ্য দেখতে পেয়েছিল তার পরিবার ও প্রতিবেশীরা। ভাটিন্ডার সরকারি উচ্চমাধ্যমিক স্কুলে ক্লাস সিক্সে পড়ার সময় থেকেই স্থানীয় উৎসব অনুষ্ঠানে গান গাইতে শুরু করেছিল সানি। একরত্তি ছেলেটার গলায় এমন সুর মানুষের মনে ধরেছিল। তাই রুগ্ন শরীরে জুতো পালিশ করে যে যৎসামান্য উপার্জন করতেন মানিক রাম, সেই অর্থ জমিয়েই ছেলের স্বপ্ন পূরণের শেষপর্যন্ত একটা উপায় করলেন। কিনে আনলেন একটা হারমোনিয়াম আর একটা ঢোলক। ব্যাস্ তাই দিয়ে ঘরে বসেই শুরু হল গানের তালিম।

তবে অর্থের অভাবে আর ক্লাস সিক্সের পরেই স্কুল ছাড়তে হল। কোনো গানের স্কুলে যাওয়ারও উপায় হল না। কিন্তু তাতে থেমে যায়নি সাধনা। এভাবেই দারিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করে কোনো মতে গানের অভ্যেসটা টিকিয়ে রাখছিল সানি। রুগ্ন মানকরাম শয্যাশায়ী হয়ে পড়লেন। পাঁচ জনের পেট চালাতে  মাকেও রাস্তায় নামতে হল। বেলুন বিক্রেতা হিসেবে। তাই একরকম নিরুপায় হয়েই গানের পাশাপাশি বাবার জুতো পালিশের কাজটাকেই উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিতে হল সংসারের হাল ধরতে।

এরপর ২০১৪ সালে দীর্ঘ রোগের সঙ্গে লড়াই শেষ হল বাবা মানক রামের। ততদিনে অবশ্য গায়ক সানির পরিচিতিও অনেকটাই বেড়েছে। কারণ জুতো পালিশ করতে করতেই গানের রেওয়াজ চলছিল। একটা মোবাইল ফোন জোগাড় হয়েছিল। তাতেই গান শুনে শুনে অভ্যাস করতে। সবটাই নিজের চেষ্টায়। যে বছর বাবা মারা গেল, সেই বছরই টিএমসি পাঞ্জাবির সৌজন্যে সানির একটি গান রিলিজ হল। এরপর আর কোনো দিকে ফিরে তাকয়নি সে। ইন্ডিয়ান আইডল-এ একটা সুযোগ পেতে উঠেপড়ে লাগল। প্রথাগত গানের শিক্ষা বলতে যা বোঝায় তেমন কিছুই নেই। তাই টানা পাঁচ বছরের চেষ্টায় অবশেষে ২০১৯-এ স্বপ্নের মঞ্চে নিজের প্রতিভাকে মেলে ধরার একটা সুযোগ হাতে এলো। আর এক সুযোগেই স্বপ্ন পূরণ। দ্রুত এগিয়ে চলেছেন সাফল্যে৷