মুখ্যমন্ত্রীকে এবার ‘মিথ্যেবাদী’ তকমা প্রশান্তের, গৃহযুদ্ধের আগুন দলের অন্দরে

মুখ্যমন্ত্রীকে এবার ‘মিথ্যেবাদী’ তকমা প্রশান্তের, গৃহযুদ্ধের আগুন দলের অন্দরে

পাটনা:  নাগরিকত্বব সংশোধনী আইনের বিরোধিতায় মোদি-অমিত শাহের সমালোচনায় একাধিকবার সোচ্চার হয়েছেন বিজেপির শরিক জেডিইউ-র সহ সভাপতি তথা নির্বাচনী কৌশলী প্রশান্ত কিশোর৷ কিন্তু এই ইস্যুতে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে শেষে কিনা বিরোধী শিবিরের সরাসরি সমর্থন?  ধৈর্যের বাঁধ ভাঙাল বিহারের জেডিইউ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের৷ মতবিরোধ থাকলেও কার্যত গেরুয়া শিবিরের সঙ্গেই জোটবদ্ধ৷

তাই বিরোধী দল কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে নাগরিকত্ব আইন ও জাতীয় নাগরিকপঞ্জি বিরোধী প্রস্তাব পাশ হওয়ার পর টুইটে  প্রশান্ত কিশোরের তরফে রাহুল গান্ধী ও প্রিয়ঙ্কা গান্ধীর প্রতি বিশেষ ধন্যবাদ জ্ঞাপন মেনে নিতে পারলেন না৷ ফলতঃ দলের সহ সভাপতি প্রশান্ত কিশোরকে সরাসরি দল ছাড়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে বসলেন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার৷ মঙ্গলবার প্রশান্ত কিশোরের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, 'উনি যদি দলে থাকেন, ঠিক আছে৷ আর যদি দলে না থাকেন, তাহলেও ঠিক আছে৷' গত ১১ জানুয়ারি শনিবার কংগ্রেসের এনআরসি-এনপিআর বিরোধিতায় সমর্থন জানিয়ে প্রশান্ত কিশোর টুইট করেন, ‘‘এনআরসি ও সিএএ প্রত্যাখ্যান করার জন্য কংগ্রেসকে ধন্যবাদ৷ এর জন্য রাহুল গাঁধী ও প্রিয়ঙ্কা গাঁধীর বিশেষ ধন্যবাদ প্রাপ্য৷’’

আর এর পরিণামে এই মুহূর্তে বিজেপির শরিক জেডিইউর তবে শুধু দল ছাড়তে বলেই থেমে থাকেননি৷ মনে করিয়ে দিয়েছেন প্রশান্ত কিশোর কীভাবে দলে যোগ দিয়েছিলেন৷ এপ্রসঙ্গে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন 'অমিত শাহ আমাকে ওনার (প্রশান্ত কিশোর) বিষয়ে বলেন৷ সেসব উনি ভুলে গিয়েছেন৷ হয়ত দল ছাড়তে চাইছেন!' শাসক নেতৃত্বের কাছে দলের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার প্রচেষ্টায় এবার কি  তাহলে নীতীশ-প্রশান্ত কিশোরের সম্পর্ক শেষের পর্যায়ে? এনিয়ে রাজনৈতিক মহলে যখন জোর চর্চা তখন কয়েক ঘণ্টা যেতে না যেতেই এই চর্চায় ঘৃতাহুতি দিলেন  পিকে ৷

টুইটে নীতীশের হুঁশিয়ারির বিরুদ্ধে তীব্র ভাষায় জানিয়েছেন ‘‘আমাকে আপনি কেন ও কী ভাবে জেডিইউ-তে এনেছিলেন, তা নিয়ে মিথ্যা বলতে গিয়ে কতটা নীচে নামলেন৷ আমাকে আপনার মতো করে দেখানোর এ এক দুর্বল প্রচেষ্টা!’’ রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বললেন ‘‘আপনার কথা সত্যি হলেও কেউ কি আদৌ বিশ্বাস করবে যে, অমিত শাহের সুপারিশ করা কারও কথা না-শোনার সাহস আপনার এখনও আছে?’’

তবে দলের ভাবমূর্তি প্রসঙ্গে বলতে গেলে আজ যে ইস্যুকে কেন্দ্র করে এই বিবাদ, সেই সিএএ আইনের বিরোধিতায় শুরু থেকেই সুর চড়িয়েছেন নীতীশ কুমার৷ যদিও সংসদে ভোটাভুটি চলাকালীন সিএএ-র সমর্থনে তাঁর দল ভোট দিলেও এবিষয়ে একটিও শব্দ ব্যয় করেননি৷ তবে পরে অন্যান্য বিরোধী রাজ্যগুলোর মতই নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়ে বলেছেন ‘‘সিএএ নিয়ে আরও আলোচনা হওয়া প্রয়োজন৷ প্রত্যেকে রাজি থাকলে, বিধানসভা কক্ষেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে৷ আর বলে রাখি, এ রাজ্যে এনআরসি করার প্রশ্নই ওঠে না৷ এর কোনও যৌক্তিকতা নেই৷’’ এই কথাগুলো এখন হয়তো নিজেই ভুলে গেছেন তিনি, নাকি অন্য কোনো সম্প্রতি কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে মোদী-শাহ জুটি যখন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে, তখন  বিধানসভার নিরিখে গত দু’বছরে ক্রমশ নিস্তেজ হয়েছে গেরুয়া ঝড়৷ তীব্র অস্তিত্ব সংকটে ভুগছ এখন দল৷

দলের তাবড় রাজনৈতিক নেতাদের রণকৌশল স্থির করেন যিনি তাঁর বিবেচনার ওপর আস্থা রাখবেন সাধারন মানুষ এমনটাই স্বাভাবিক৷ আর তিনি যদি হন প্রশান্ত কিশোর তাহলে বিষয়টা আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে৷ কারণ ২০১৪ সালে দেশের বর্তমান শাসককে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী আসনে বসিয়েছিল তাঁরই রণকৌশল৷ এখন তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমোর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং একই সঙ্গে আদমি পার্টির প্রধান তথা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের জন্য রণকৌশল স্থির করেছেন৷

তাঁর থেকেও বড় কথা, যে এই বাংলাই আগামী বিধানসভা নির্বাচনে শাসকদলের পাখির চোখ৷ তবে তার আগে বড় পরীক্ষা দিল্লিতে৷ এরই মধ্যেই একের পর এক সিদ্ধান্তের ফলে আমজনতার কাঠগড়ায়  দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের ভাবমূর্তি৷ প্রশান্ত কিশোরের মত কৌশুলীকে হেনস্থা করে গেরুয়া শিবিরের জোটবদ্ধতা  কতটা ফলপ্রসূ হবে তার প্রমাণ দেবে ভবিষ্যৎ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *