নয়াদিল্লি: দেশের সামগ্রিক উন্নতিকল্পে সময়োচিত পদক্ষেপ হিসেবে গুরুত্ব দিয়ে গৃহীত একাধিক উদ্যোগ, পরিকল্পনা এবং তার বাস্তবায়নে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চূড়ান্ত অসফলতার নজির গড়েছে মোদি সরকার। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর সরকারের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ বিরোধী দলগুলি থেকে এখন আমজনতার কাছেও দিন দিন বেড়েই চলেছে। এমনকি সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলি নিয়ে অসফলতার নিরিখে বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণেও এমনটাই দাবি করা হয়েছে।
মোদি জমানায় 'মেক ইন ইন্ডিয়া' দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে এমনটাই দাবি করা হয়েছিল। এই লক্ষ্যে একাধিক গবেষণা মূলক প্রকল্পের জন্য একাধিক সংস্থাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাওয়ার জন্য সুযোগ করে দিয়েছিল কেন্দ্র। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মোটা টাকা ঋণও নিয়েছিল সংস্থাগুলি। তবে সেই টাকা যে পুরোটাই জলে গেছে, সেই তথ্য লোকসভায় পেশ করলেন খোদ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। কিন্তু দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির গতি যখন কমতে কমতে একেবারে তলানিতে ঠেকেছে তখন স্বাভাবিকভাবেই কোন ক্ষেত্রে আর্থিক বিনিয়োগের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করার প্রয়োজন আছে। যেমন এই মুহূর্তে গবেষণামূলক ১৩ টি সংস্থায় অচলাবস্থার কারণে অন্তত ১০০ কোটি টাকা লোকসানের মুখে কাউন্সিল অফ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ (সিএসআইআর) । লোকসভায় এক প্রশ্নের জবাবে এই তথ্য জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ও পৃথিবী বিজ্ঞান মন্ত্রী হর্ষ বর্ধন।
প্রস্তাবের অভিনবত্ব, সম্ভাব্য প্রযুক্তিগত সুবিধাগুলি এবং শিল্পগুলির সেই সুবিধাগুলি যথাযথ ভাবে নেওয়ার ক্ষমতা” এর ভিত্তিতেই একটি প্রকল্প নির্বাচন করা হয়। সেক্ষেত্রে এমন বহু সংস্থা আছে যাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত না হওয়ায় লক্ষ লক্ষ টাকা ঋণ প্রদান কার্যত ব্যর্থ হয়েছে অর্থাৎ কেন্দ্রের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে।
নিউ মিলেনিয়াম ইন্ডিয়ান টেকনোলজি লিডারশিপ ইনিশিয়েটিভ (এনএমআইটিআইএল) এর আওতায় সিএসআইআর বায়ো-প্রযুক্তি সংস্থাগুলিকে নতুন নতুন উদ্ভাবনীমূলক বিকাশের জন্য ঋণ দিয়েছিল। এই প্রকল্পটি দেশের গবেষণা ও উন্নয়নমূলক কর্মক্ষেত্রগুলির মধ্যে বৃহত্তম সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার জন্য চালু করা হয়েছিল। এখনও পর্যন্ত, উদ্ভিদ জৈব-প্রযুক্তি, সাধারণ জৈব-প্রযুক্তি, রাসায়নিক, ফার্মাসিউটিক্যালস এবং জ্বালানির মতো ক্ষেত্রগুলির প্রকল্পের জন্য অর্থ দিয়েছে এনএমআইটিআইএল।
সেকান্দারবাদ থেকে ফ্রন্টিয়ার ইনফরমেশন টেকনোলজি নামে একটি সংস্থা বায়োইনফরম্যাটিক্সের জন্য একটি বহুমুখী ও বহনযোগ্য কম্পিউটার সফ্টওয়্যার তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে সিএসআইআর থেকে ঋণ নিয়েছিল। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যর্থ ওই সংস্থা এখন ১০.৬৯ লক্ষ টাকা ঋণ পরিশোধ করতে পারছেনা। গাজিয়াবাদের একটি প্রতিষ্ঠান সামটেল-এর ঋণ বাকি ২,০৮৩ লক্ষ টাকা। এই সংস্থা নেক্সট জেনারেশন প্লাজমা ডিসপ্লে প্রযুক্তি তৈরি করতে চেয়েছিল। ঋণ শোধ করতে পারেনি এমন সংস্থাগুলির তালিকায় শীর্ষে আছে ফরিদাবাদের ক্লিচ অটো লিমিটেড। এই সংস্থার মোট বকেয়া ১,৪৮৩.৫০ লক্ষ টাকা। মজার বিষয় হলো, ১৩ টি সংস্থার মধ্যে পাঁচটিই ব্যাঙ্গালোরের, যে শহরটিকে বায়োটেকনোলজিকাল সংস্থাগুলির মধ্যে দ্রুত বর্ধনশীল শহরগুলির অন্যতম হিসাবে বিবেচিত।
এমন আরও বেশ কয়েকটি সংস্থা আছে যাদের মোটা অংকের টাকা দেনা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আগামী দিনের সতর্কতা হিসেবে কোন সংস্থাকে ঋণ দেওয়ার আগে তার আর্থিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে নিতে বেশ কয়েকজন চাটার্ড অ্যাকাউন্টেন্টকে নিয়োগ করা হয়েছে।