নয়াদিল্লি: ইয়েস ব্যাঙ্কের আর্থিক সংকটের জন্য বিজেপিকে কাঠগড়ায় তুলল কংগ্রেস৷ গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ এনে তুলোধনা করলেন দলের মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা৷
গতকাল রাজীব-কন্যা তথা কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর সঙ্গে ইয়েস ব্যাঙ্কের আঁতাতের অভিযোগ আনেন বিজেপি নেতা অমিত মালব্য৷ তিনি ট্যুইট করে বলেন, প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর কাছ থেকে ২ কোটি টাকা দিয়ে একটি ছবি কিনেছিলেন ইয়েস ব্যাঙ্কের প্রাক্তন কর্তা রানা কাপুর। কিন্তু এই আঁতাতের অভিযোগ নস্যাৎ করে দেয় কংগ্রেস৷ দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এফএফ হুসেনের আঁকা রাজীব গান্ধীর ওই ছবিটি বিক্রির কথা ২০১০ সালে আয়কর তথ্যে জানিয়েছিলেন প্রিয়াঙ্কা৷ এর সঙ্গে মোদীর সাড়ে পাঁচ বছরে ইয়েস ব্যাঙ্কের ২ লক্ষ কোটি ঋণের কী সম্পর্ক?
রবিবার সাংবাদিক বৈঠকে বিজেপি’র বিরুদ্ধে পাল্টা তোপ দাগেন সুরজেওয়ালা৷ ভারতীয় জনতা পার্টির সঙ্গে ইয়েস ব্যাঙ্কের সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি৷ সুরজেওয়ালা বলেন, ইয়েস ব্যাঙ্ক যখন ডুবতে বসেছে তখন হরিয়ানার ভারতীয় জনতা পার্টি সরকার ও মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খাট্টার রাজ্যের হরিয়ানা বিদ্যুৎ প্রসারন নিগমের এক হাজার কোটি টাকা ইয়েস ব্যাঙ্কে জমা করে দেন৷ এখানেই শেষ নয়৷ কর্নালের স্মার্ট সিটির কর্মীদের জেনারেল প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং অন্যান্য ক্ষেত্র থেকে আরও ১৫০০ কোটি টাকা জমা করে ইয়েস ব্যাঙ্কের খাতায়৷ যে ব্যাঙ্ক ডুবতে বসেছে, সেই ব্যাঙ্কে কী ভাবে ২৫০০ কোটি টাকা জমা দিল বিজেপি সরকার, হরিয়ানা সরকার ও মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লালা খট্টর? প্রশ্ন তুলেছেন তিনি৷
সুরজেওয়ালা আরও বলেন, মহারাষ্ট্রের ফড়নবিশ সরকার ইয়েস ব্যাঙ্কে কর্পোরশনের ১৫০০ কোটি টাকা জামা রেখেছিল৷ কার অঙ্গুলিহেলনে বিজেপি’র কতগুলি সরকার কত হাজার কোটি টাকা ইয়েস ব্যাঙ্কে জমা রেখেছে তাঁর হিসাব জনগণকে দিতে হবে৷ তাঁর অভিযোগ, মিডিয়াকে সামনে রেখে এই ইস্যুগুলিকে ভুল পথে চালনার চেষ্টা করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ আসল কথা হল ইয়েস কর্তার সঙ্গে গোপন আঁতাত রয়েছে বিজেপি’র৷ ইয়েস ব্যাঙ্কের মালিকের কাছে বিজেপি’র জন্য সমর্থন চাইতে অন্য কেউ নয়, গিয়েছিলেন দলের হেভিওয়েট নেতা নীতিন গডকড়ি৷ তিনদিন আগের কথা৷ ইয়েস ব্যাঙ্কের টাকায় আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে ভাষণ দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী৷ এর পরেও তী বলবেন ইয়েস ব্যাঙ্কের সঙ্গে বিজেপি’র আঁতাত নেই? প্রশ্ন তোলেন সুরজেওয়ালা৷
কংগ্রেস মুখপাত্র আরও বলেন, দেশের মানুষ জানতে চায় ইয়েস ব্যাঙ্ক কী ভাবে সংকটে পড়ল? জনতার টাকা কে ডোবালো? সরকার কি সব জেনেও তখন ঘুমিয়েছিল? নাকি ব্যাঙ্কের এই ভরাডুবির পিছনে হাত ছিল খোদ সরকারের? মোদীর উদ্দেশ্য প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে সুরজেওয়ালা বলেন, বিজেপি’র কতজন সদস্য বা আপনাদের কতজন মিত্র ইয়েস ব্যাঙ্ক থেকে কত টাকা নিয়েছেন সে হিবাস দিতে হবে৷ যখন ব্যাঙ্ক ডুবছিল তখন গুজরাত সরকার কীভাবে ব্যাঙ্ক থেকে টাকা বার করে নিল৷ হরিয়ানার বিজেপি সরকার তো ওখানে টাকা জামা দিতে ব্যাস্ত৷
তিনি আরও বলেন, এক গুজরাতি উদ্যোগপতি ডুবন্ত ব্যাঙ্ক থেকে কোটি কোটি টাকা বার করে নিয়ে গেছেন৷ সরকারের মধ্য বসেই কি কেউ ওনাকে ইঙ্গিত দিয়েছিল যে ব্যাঙ্ক ডুবতে বসেছে৷ নাকি কোনও ভিষ্যতবানী হয়েছিল যে ব্যাঙ্ক ডুবতে চলেছে৷ ইয়েস ব্যাঙ্কের ভরাডুবিতে আপনাদের মিত্রদের নয়, ডুবল তো সাধারণ মানুষের টাকা৷
বিজেপি জমানায় ১ ডলারের মূল্য হয়ে গিয়েছে ৭৪ টাকা ৪ পয়সা৷ দেশের ইতিহাসে প্রথমবার কাঁচা তেল ৩২ ডলার প্রতি ব্যারেল হয়ে গিয়েছে৷ কিন্তু পেট্রোলের দাম ৭১ টাকা প্রতি লিটার আর ডিজেল ৬৪ টাকা প্রতি লিটারে আটকে আছে৷ ব্যাক্তির বিমা আর তাদের স্কুটি ও মোটরসাইকেলের বীমা রাতারাতি বাড়িয়ে দিল মোদী সরকার৷ অথচ তার চোখের সামনে প্রথমে আইডিবিআই ব্যাঙ্ক ডুবল৷ তারপর পিএমসি ব্যাঙ্কে জনতার টাকা ডুবল৷ এবার ইয়েস ব্যাঙ্ক৷ কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সামনে এসে একটি শব্দও খরচ করলেন না৷ আসলে গোটা বিষয়টি কুৎসিত উপায়ে অন্য দিকে ঘোরানোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ প্রশ্ন হল, মার্চ ২০১৪ থেকে ২০১৯ এর মধ্য ইয়েস ব্যাঙ্কের লোনবুকের মাধ্যে দেওয়া ঋণ ৫৫ হাজার কোটি থেকে বেড়ে ২ লক্ষ ৪২ হাজার কোটি টাকায় কী ভাবে পৌঁছল?