নয়াদিল্লি: সমস্ত তথ্য প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র আইনি জটিলতার কারণে দীর্ঘ সাত বছর পর অবশেষে নির্ভয়া গণধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় চার অপরাধীর মৃত্যুদণ্ডের সাজা কার্যকর হল। শুক্রবার ভোর ৫.৩০-এ দিল্লির তিহার জেলে ফাঁসি হল নৃশংস ও বিরল থেকে বিরলতম অপরাধের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত চার অপরাধীর অক্ষয় ঠাকুর (৩১), পবন গুপ্তা (২৫), বিনয় শর্মা (২৬) ও মুকেশ সিং (৩২)এর। ভারতের ইতিহাসে এই প্রথমবার একসঙ্গে চার অপরাধীর ফাঁসি হলো। ৪ অপরাধীকে ফাঁসিতে ঝোলালেন জল্লাদ পবন। ফাঁসির আগে ৪ জনের কেউই কোনো শেষ ইচ্ছের কথা বলেনি।
বৃহস্পতিবার অপরাধী পক্ষের আইনজীবী এপি সিংয়ের মৃত্যুদণ্ড রদের শেষ কৌশল কার্যতই বিফলে যায় যখন প্রাণভিক্ষার চূড়ান্ত আবেদন খারিজ করে দেয় সুপ্রিম কোর্টের ৩ বিচারপতির বেঞ্চ। গত ২২ জানুয়ারি ফাঁসির সাজা কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারপর থেকেই অপরাধীদের আইনজীবী এপি সিংয় তাদের বাঁচাতে মরিয়া প্রচেষ্টা চালাতে থাকেন। বলা যায়, আইনি কোনো পদক্ষেপই বাকী রাখেননি। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। ন্যায়ের কাছে হার মানতেই হলো তাঁকে।
ফাঁসির সাজা কার্যকর হওয়ার পর নির্ভয়ার বাবা বদ্রীনাথ সিং দিনটিকে “দেশে সমস্ত নারীর দিন” বলে উল্লেখ করেন। দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন মা আশাদেবী। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেন, “আজ এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার দিন যে আমরা নির্ভয়ার মত আর কোনও ঘটনা ঘটতেই দেবনা। পুলিশ, আদালত, রাজ্য, কেন্দ্র সকলকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে যে ব্যবস্থায় ত্রুটি সংশোধন করে এমন ব্যবস্থা করতে হবে যেন আর কোনো কন্যসন্তানের নির্ভয়ার মত পরিনতি না হয়।
এই মামলায় মূল অপরাধী ৬ জন। দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন তিহাড় জেলেই আত্মহত্যা করে এক অপরাধী রাম সিং। অপর এক অপরাধী নাবালক হওয়ায়, জুভেনাইল কোর্টে বিচার হয় তার। তিন বছর হোমে থেকে ২০১৫ সালে তার সাজার মেয়াদ শেষ হয়। যদিও পুলিশের হাতে আসা তথ্য প্রমাণ অনুসারে সেই রাতে গণধর্ষণের সব সবথেকে বেশি নৃশংসতার নজির রেখেছিল ওই নাবালকই।
২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বরের এক অভিশপ্ত রাতে দিল্লির রাস্তায় চলন্ত বাসের মধ্যে গণধর্ষণ এবং ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হন বছর তেইশের প্যারামেডিক্যালের এক ছাত্রী। বাধা দিতে গেলে তার পুরুষ সঙ্গীকেও প্রচন্ড মারধর করা হয়। এরপর তাদের বাস থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেয় অপরাধীরা। ঘটনার নৃশংসতা স্তম্ভিত করেছিল গোটা দেশ তথা বিশ্বকে। টানা ১৩ দিন জীবন মৃত্যুর লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত হার মানতে হয় নির্ভয়াকে। শেষ পর্যন্ত বাঁচতে চেয়েছিলেন ওই তরুণী। অপরাধীদের সাজা দিতে চেয়েছিলেন। অবস্স্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। এরপর ২০১২-র ২৯ ডিসেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়। তরুণীর আসল নাম পরে প্রকাশ্যে এলেও, এরপর থেকে নির্ভয়া নামেই সে পরিচিত হয়ে ওঠে।