নয়াদিল্লি: মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকেই দেশজুড়ে শুরু হয়েছে লকডাউন৷ পরের দিন, অর্থাৎ বুধবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নিজের সংসদীয় কেন্দ্র বারাণসীর মানুষের সঙ্গে করোনা সংক্রমণ নিয়ে আলোচনা সারলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷
এদিন বক্তব্যের শুরুতেই কাবুলে গুরুদ্বারায় জঙ্গি হামলার ঘটনায় নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান প্রধানমন্ত্রী৷ এর পর তিনি বলেন, চৈত্র নবরাত্রি পার্বনের প্রথম দিন৷ মা শৈলপুত্রীর কাছে তাঁর প্রার্থনা, করোনা মহামারির বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ দেশবাসী শুরু করেছে, তাতে যেন আমরা সফল হতে পারি৷ তিনি বলেন, ‘‘মহাভারতের যুদ্ধ জিততে ১৮ দিন সময় লেগেছিল৷ করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে জয়ী হতে লাগবে ২১ দিন৷ মহাভারতের যুদ্ধে স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন রথের সারথী৷ আর করোর বিরুদ্ধে শুরু হওয়া এই যুদ্ধের সারথী ১৩০ কোটি দেশবাসী৷ এই শক্তিতে ভর করেই যুদ্ধে জয়ী হব আমরা৷’’
এর পরই কাশির প্রসঙ্গে আসেন নমো৷ তিনি বলেন, দিল্লিতে চূড়ান্ত ব্যস্ততার মধ্যেও আমি নিরন্তর বারাণসীর খবর রাখছি৷ করোনার বিরুদ্ধে যে লড়াই শুরু হয়েছে, তাতে কাশির মানুষেরও বড় ভূমিকা রয়েছে৷ কাশি জ্ঞানের ভূমি৷ সংকটের এই মুহূর্তে গোটা দেশকে সঠিক মার্গ দেখাতে পারে কাশি৷ বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে কাশি দেশের মানুষকে শেখাতে পারে সংযম, সমন্বয় ও সংবেদনশীলতা৷ শেখাতে পারে শান্তি, সাধনা, সেবা ও সহনশীলতা৷ নমো আরও বলেন, কাশির অর্থই হল শিব৷ শিব মানেই কল্যান৷ মহাকালের এই শহর সংকটের সময় সকলকে পথ দেখাবে নাতো কারা দেখাবে?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনার মতো মহামারিকে রুখতে হলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং নিজেকে ঘরে বন্দি রাখাই একমাত্র উপায়৷ দেশজুড়ে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৫৬০৷ করোনার সংক্রমণ রুখতে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে লকডাউন৷
বুধবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমেই বারাণসীর বাসিন্দাদের প্রশ্নরেও জবাব দিয়েছেন তিনি। সেখানেই এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মী, সাফাইকর্মীরা এখন ভগবানের রূপ। তাঁদের এখন কোনও জায়গায় কোনও অসুবিধায় পড়লে বাকিরা তাঁদের পাশে দাঁড়াবেন।'
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে মোদী বলেন, করোনা সম্পর্কে অনেকেরই স্বচ্ছ ধারণা নেই৷ মানুষের যেটা সহজ মনে হয় সেটাই বিশ্বাস করতে শুরু করে৷ কোনও কথা নিজের পছন্দ মতো হলেই তা সত্যি বলে মেনে নেন৷ আসল সমস্যার দিকে নজরই থাকে না তাঁদের৷ প্রধানমন্ত্রীর আবেদন, যত শীঘ্র সম্ভব এই ভুল ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে সত্যিটাকে স্বীকার করুন৷ তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় সত্যি হল, অসুখ কোনও মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ করে না৷ সমৃদ্ধ দেশের উপরেও যেমন এই সংক্রমণ আঘাত হেনেছে৷ তেমন গরিবের ঘরেও আঘাত হেনেছে৷ এমনকী যাঁরা শরীর চর্চা করেন, তাঁরাও করোনাভাইরাসের শিকার হতে পারেন৷ জেনে বুঝেও বহু মানুষ সাবধানতা অবলম্বন করছেন না৷ কিন্তু নাগরিক হিসাবে তাঁদের বোঝানো আমাদেরই কর্তব্য৷ সামাজিক দূরত্বের উপর গুরুত্ব দিতে হবে৷ ঘরে থাকতে হবে৷ কোরনাকে দূরে রাখার এটাই একমাত্র উপায়৷ সরকারি নির্দেশ মেনে চললে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা অনেকটা কমে হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, মনে রাখবেন, বিশ্বে করোনা সংক্রমিত এক লক্ষেরও বেশি মানুষ সুস্থ হয়ে উঠেছেন৷ ভারতেও বহু লোক করোনাকে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন৷
সেইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, '২১ দিনে আমরা এই যুদ্ধজয় করব। এই সময় সোশ্যাল ডিসটেনসিং খুব জরুরি। তবে করোনার জবাব দেব করুণা দিয়ে। গরীবদের পাশে দাঁড়ালেই তা সম্ভব।' জনসাধারণের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘ করোনা সম্পর্কে মানুষের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দিতে হোয়াটসঅ্যাপের সঙ্গে মিলিতভাবে একটি হেল্পডেস্ক নম্বর চালু করেছে কেন্দ্র৷ নম্বরটি হল ৯০১৩১৫১৫১৫৷ এর নম্বরে হিন্দি বা ইংরেজিতে নমস্তে লিখলেই সঙ্গেসঙ্গে উত্তর পাবেন।’’