প্রসব যন্ত্রণা চেপে তৈরি করেন টেস্ট কিট, সফল হয়ে মা হলেন মিনাল

প্রসব যন্ত্রণা চেপে তৈরি করেন টেস্ট কিট, সফল হয়ে মা হলেন মিনাল

75e2f1460335bdaa43860943a49618f0

নয়াদিল্লি:  শুধু লকডাউনে রেহাই মিলবে না। তার থেকেও বেশি প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরীক্ষা। আর সেটাই সত্যি হলো। লকডাউনের চারদিনের মাথায় অর্থাৎ শুক্রবার থেকে হঠাৎ করে মাত্রা ছাড়িয়েছে। রবিবার পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ১০৪০, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৫। হঠাৎ করেই দুদিনের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে চিকিৎসকেরা বলছেন পর্যাপ্ত টেস্ট কিটের অভাবে উপসর্গ থাকা সত্ত্বেও বেশি মানুষের পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছিল না।  বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বারবার বলেছে, ভারতে পরীক্ষার হার বাড়াতে হবে।

গত ২৪ মার্চ, পুনের মাইল্যাব ডিসকভারি সলিউশনস প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি সংস্থাকে টেস্টিং কিট তৈরির জন্য অনুমোদন দেয় ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ। ২৫ মার্চ অন্যান্য সংবাদ মাধ্যমের পাশাপাশি 'আজ বিকেল' খবরটি করে। ভারতীয় গবেষকদের প্রচেষ্টায় সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এই কিট বিদেশি কিটের থেকে অনেক কম দামে পাওয়া যাবে বলে দাবি করে ওই সংস্থা। এমনকি এক সপ্তাহে ১ থেকে দেড় লক্ষ টেস্ট কিট তারা উত্পাদন করতে পারবে বলেও দাবি করে। আর এই কর্মকাণ্ডের নেপথ্যে তিনি ছিলেন তিনি হলেন পুনের এক ভাইরোলজিস্ট মিনাল দাভলে ভোঁসলে৷ বলা যায় এইদুর্দিনে দেশের জন্য এক অসাধ্য সাধন করেছেন তিনি এবং তা নিজের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে।

অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন মিনাল। কিন্তু এই কিট তৈরির টিম লিডারও ছিলেন তিনি। জরুরি পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে নিজের ব্যক্তিগত জীবনকে কর্মজীবনের বাধা হতে দেননি। সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য হাসপাতালে ভর্তির আগে তাঁর একমাত্র লক্ষ্য ছিল কিট তৈরীর অনুমোদন আদায় করা এবং এরজন্য ১৮ মার্চ ভারতের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি (এনআইভি)তে কিটটি জমা দেওয়া ৷ তাই আগের দিন ডেলিভারি হওয়ার কথা থাকলেও তার পরের দিন পর্যন্ত পিছিয়ে দেন। আর ডেলিভারির দিনও অর্থাৎ ১৮ মার্চ সকালে থেকেই একটুও বিশ্রাম না নিয়ে টেস্ট কিটের অনুমোদন পাওয়ার সমস্ত পেপার ওয়ার্ক শেষ করেন।

সেদিন সন্ধ্যায় মিনাল জন্ম দেন ফুটফুটে এক কন্যা সন্তানের। তবে নজিরবিহীন ভাবে তার কয়েক ঘণ্টা আগে পর্যন্তও কাজ করেছেন তিনি। টেস্ট কিট তৈরির অনুমোদন পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে গেছেন নিজের বা আসন্ন সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কাকে গুরুত্ব না দিয়ে। এপ্রসঙ্গে মিনাল বলেছেন, ” তখন এটাই জরুরী ছিল। তাই আমি এটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। আমাকে দেশের জন্য পরিষেবা দিতে হবে।” নিজের টিমের দক্ষতার প্রশংসা করে এমনটাই জানিয়েছেন তিনি।

পিটিআইয়ের এক সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতে এই সংক্রমনের ভয়াবহতার বিষয়ে আশঙ্কা করে ছয় সপ্তাহ আগেই সমস্যা সমাধানে কাজ শুরু করে দিয়েছিল ল্যাবের ২৫ জন গবেষকের একটি দল। প্রসঙ্গত, এতদিন কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য যে টেস্ট কীট ব্যবহার হচ্ছিল তাতে ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টা সময় লেগে যাচ্ছিল ৷ এমনকি বিদেশ থেকে আমদানি করা কিটেও ৬ থেকে ৭ঘন্টা সময় লেগে যাচ্ছে।  কিন্তু এই টেস্ট কীট থেকে মাত্র আড়াই ঘণ্টার মধ্যেই করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি সনাক্ত করা যাবে। এমনটাই জানিয়েছেন মাইল্যাবের রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট চিফ, ভাইরোলজিস্ট মিনাল দাখভে ভোঁসলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *