দেশে করোনা আক্রান্তদের বিস্তারিত তথ্য এখনও অধরা: সমীক্ষা

দেশে করোনা আক্রান্তদের বিস্তারিত তথ্য এখনও অধরা: সমীক্ষা

820779f45467e3ef24d287ec283f52af

নয়াদিল্লি:  করোনভাইরাসে আক্রান্ত হাজার হাজার ভারতীয় রোগীর জনসংখ্যা ভিত্তিক বিবরণ বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে যে সাধারণত যে বয়সীদের মধ্যে সংক্রমণ বেশি হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছিল  তার চেয়ে কম বয়সীদের মধ্যেও কিভাবে সংক্রমণ ছড়িয়েছে, এছাড়াও করোনা আক্রান্তদের আসল পরিসংখ্যান নিয়েও বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। বিদেশ ভ্রমণ এবং কমিউনিটি ট্রান্সমিশন নিয়েও ধন্দ্ব। এমন নানান সংগৃহীত তথ্য শুধু যে সরকারিভাবে প্রকাশিত হচ্ছে তা নয়। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা থেকেও স্বেচ্ছাসেবীরা খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছেন।  এমনই একটি সমীক্ষা সংক্রান্ত তথ্য তুলে ধরেছে  'লাইভমিন্ট'।

তেমন একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, একজন মাঝবয়সী করোনা আক্রান্ত পুরুষ যার বয়স মাত্র ৩৯ বছর, তিনি ৭০জনেরও বেশি মহিলার দেহে করোনা সংক্রমণের কারণ। ২,৫০০ জন ভারতীয় রোগীর ডেমোগ্রাফিক বিবরণ বিশ্লেষণ করে এমনটাই দেখা গেছে। লাইভমিন্টে'র বিশ্লেষণ 'কোভিড -১৯ ইন্ডিয়া নেটওয়ার্ক' এর ডেটাবেস অনুসারে। যা একটি একটি স্বেচ্ছাসেবী দল দ্বারা পরিচালিত। যেখানে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ওয়েবসাইট এবং বেসরকারীভাবে পরিচালিত অন্যান্য অনেকগুলি রিপোর্ট থেকে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান রাখতে প্রতিদিনের আপডেট  সংগ্রহ করে, সেখানে 'কোভিড -১৯ ইন্ডিয়া নেটওয়ার্ক ডেটাবেস' গ্রুপ জনসংখ্যার নিরিখে করোনা আক্রান্ত, প্রত্যেক আক্রান্তের ডেমোগ্রাফিক্স সহ অন্য রোগীদের সঙ্গে তার সম্পর্ক, ভ্রমণের ইতিহাস এবং বর্তমান শারীরিক পরিস্থিতি সহ তাঁর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অপ্রকাশিত সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করে চলেছে।  

মিন্টের বিশ্লেষণটি ৩এপ্রিল, ২০২০ অবধি 'কোভিড -১৯ ইন্ডিয়া নেটওয়ার্ক' গ্রুপের  সংগৃহীত তথ্যের উপর ভিত্তি করে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী এইসময় পর্যন্ত করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৫৩৬ জন। তবে জনসংখ্যার নিরিখে প্রতিটি রোগীর সম্পর্কে সমস্ত বিবরণ তখনও উপলব্ধ ছিল না। ভারত ও ইতালি সামগ্রিক জনসংখ্যার যে পার্থক্যে সেই অনুযায়ী হিসেব করে দেখা গেছে, যাদের বয়স জানা গেছে  সেই অনুযায়ী সামগ্রিক হিসেব বলছে, ইতালিতে মোট করোনা আক্রান্তদের ৬৩ জন মাঝবয়সী।  ভারতে মাঝবয়সী করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩৯ জন। জাতিসংঘের জনসংখ্যা ভিত্তিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী,  ২০২০ সালে ভারতে মাঝবয়সীদের সংখ্যা ২৮.৪, যেখানে ইতালিতে এই সংখ্যা ৪৭.৩।

গত শনিবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পেশ করা পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়েছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে তাদের বয়স-
৮..৬১% আক্রান্ত ०-২০ বছরের মধ্যে,
৪১.৮৮% আক্রান্ত ২১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে,
৩২.৮২% আক্রান্ত ৪১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে এবং
১.৬৯% আক্রান্ত ৬০ বছরেরও বেশি হয়

ডেটাবেসে সংগৃহীত তথ্যের ভিড়ে দেশে করোনায় মৃত ৭৩ জনের মধ্যে ডেমোগ্রাফিক বা জনস তথ্য  রয়েছে মাত্র অর্ধেকের। সেই অনুযায়ী মাঝবয়সী হিসেবে মৃত রোগীর বয়স ৫৭। মৃত দুজনের বয়স ৪০বছরের নীচে। ইতালির সঙ্গে তুলনা করলে করোনায় মৃত মাঝবয়সী বলতে তাঁদের বয়স ৮০ বছর। অন্যদিকে, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো ভারতেও   কোভিড -১৯ রোগী এবং মৃত্যুর সংখ্যায় পুরুষদের সংখ্যাই বেশি।  এর অন্যতম সম্ভাব্য কারণ হ'ল দিল্লির তাবলিগী  জামাতের জমায়েত থেকে বেশি সংক্রামণ ছড়িয়েছে। কারণ এই জমায়েত শুধু পুরুষদের জন্যই ছিল। এছাড়াও আরও একটি কারণ হল পুরুষরা মহিলাদের তুলনায় বিশি ভ্রমণ করেন।

২০২ জন মহিলা রোগীর মধ্যে যাদের ট্রান্সমিশন সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া গিয়েছিল, তাদের মধ্যে ৯০ জন বিদেশ ফেরত। আর ৭৪ জন কোনো পুরুষের আত্মীয়া। যাদের বিদেশ ভ্রমণের ইতিহাস আছে।  আরও ১২ জন মহিলা আক্রান্ত যারা কাজের ক্ষেত্র থেকে ভাইরাস সংক্রামিত হয়েছেন, তাদের মধ্যে ছ-জন চিকিৎসক বা নার্স আছেন। ভারতে এপর্যন্ত মোট আক্রান্তের মধ্যে ৫৪২ জনের  বিদেশ ভ্রমণের ইতিহাস আছে। বাকিরা তাদের থেকে কোনোভাবে সংক্রমিত হয়েছে আর কিছু সংক্রামণ নিয়ে খুব সামান্য তথ্য পাওয়া গেছে। এমনকি তাদের সংক্রমণ কিভাবে হয়েছে সেবিষয়েও নিশ্চিত করে কিছু জানা যায়নি। তবে সম্প্রতি নিজামুদ্দিন মারকাজ থেকে হাজারেরও বেশি সংক্রমিতব্যক্তির পুর্ণাঙ্গ তথ্য পাওয়া গেছে।

সুতরাং ভারতে করোনা আক্রান্ত প্রকৃতপক্ষে কারা সেই বিষয়ে সবমিলিয়ে এপর্যন্ত একটি বিষয় নিশ্চিত যে মূলত বিদেশ ফেরত তারা বা তাদের সংশ্পর্শে আসা আত্মীয় পরিজন এবং এদের সংশ্পর্শে আসা এদেশের সাধারণ নাগরিকদের মধ্যেই সংক্রমণ লক্ষ্য করা গেছে। তাছাড়াও লকডাউনের পরে ভারত যখন প্রাণে বাঁচার অনুশীলন শুরু করেছে, তখন ভারতের কোভিড -১৯ রোগী কারা রয়েছেন তার অন্তর্দৃষ্টিগুলি কিছু দিক নির্দেশ করে। যেমন বয়স্ক এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা কম যাদের তাদের এই ভাইরাসের সবচেয়ে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবে, যদি অল্প বয়সীরা বেশি মাত্রায় বাইরের লোকের সংশ্পর্শে আসতে থাকে এবং তারপরে পরিবারের মধ্যে এটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেয়। তাহলে এই সংক্রমণ এড়ানো সম্ভবত কঠিন প্রমাণিত হতে পারে।

'কোভিড -১৯ ইন্ডিয়া নেটওয়ার্ক' এই গ্রুপটি তাদের এক বিবৃতিতে বলেছে, “আমরা নিবেদিত স্বেচ্ছাসেবীদের একটি গ্রুপ যারা বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত ডেটা সঠিকভাবে যাচাই করে দেখি, সুতরাং সচেতন মানুষ এই ডেটা ব্যবহার করে জ্ঞাত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।” ডেটা উৎস হিসাবে, তারা তাদের এই পরিসংখ্যান আপডেট করার জন্য জাতীয় সংবাদ মাধ্যম এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত খবর, বৈধ সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডল এবং কিছু খবরের সূত্রে উল্লিখিত তথ্য ব্যবহার করে। এরপর সেই তথ্যগুলি অন্যান্য উৎসের সঙ্গে মিলিয়ে দেখেন গ্রুপের সদস্যরা।  তাঁদের তথ্যগুলি প্রকাশ্যে দেখা যায় এমন গুগল শিট এবং এপিআইতে প্রকাশিত হয়। তাদের সংগ্রহ করা তথ্য অনুযায়ী কারণ আক্রান্তের সংখ্যা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যানের তুলনায় কিছুটা বেশি হয়। কারণ তাদের সংগৃহীত পরিসংখ্যান বিভিন্ন রাজ্য প্রশাসন থেকে প্রাপ্ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *