দেশে মদ, বিয়ারের আকাল মেটাতে কেন্দ্রের দরবারে প্রস্তুকারী সংস্থা

দেশে মদ, বিয়ারের আকাল মেটাতে কেন্দ্রের দরবারে প্রস্তুকারী সংস্থা

নয়াদিল্লি: করোনাতঙ্কে লকডাউনের মধ্যে দিনকয়েক আগেই একটি খবর স্যোশাল মিডিয়ায় দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায় যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার নাকি অনলাইনে মদ বিক্রির অনুমতি দিয়েছে। তবে কয়েক ঘন্টার মধ্যেই প্রশাসনিক স্তর থেকে জানানো হয় এই খবর ভিত্তিহীন এবং এমন কোনো আলোচনাও হয়নি। যদিও এই মুহূর্তে দেশজুড়েই এর চাহিদা তুঙ্গে। নিয়মিত সুরাপাণে আসক্তরা যেমন অসুস্থ হয়ে পড়ছেন তেমনই অবসাদে আত্মহত্যার খবরও আসছে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। চাপে পড়ে কেরল সরকার অনলাইনে মদ বিক্রির অনুমতি দিলেও, শেষ পর্যন্ত আদালতের নির্দেশে সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হয়। চোরাপথে বা বেআইনিভাবে মদ বিক্রি কিন্তু বন্ধ করা যায়নি দেশে। তবে তা আর কতদিন? এদিকে গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিয়ারের চাহিদা। এবার তাই কেন্দ্রকে আইনি ভাবেই এবিষয়ে চিন্তা ভাবনা করার আবেদন জানালো খোদ দেশের বৃহত্তম বিয়ার কোম্পানিগুলি।

পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে পরিষেবা আংশিকভাবে চালু করার অনুমতি চেয়ে কেন্দ্র এবং একাধিক রাজ্য সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছে শিল্প সংস্থা অল ইন্ডিয়া ব্রিউয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন (এআইবিএ) এর নেতৃত্বে ভারতের শীর্ষস্থানীয় বিয়ার সংস্থাগুলি। লাইভমিন্টের প্রতিবেদন অনুসারে,বাণিজ্য মন্ত্রকের কাছে লেখা চিঠিতে স্যোশাল ডিস্ট্যান্সিং মেনে, কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে আংশিকভাবে পর্যায়ক্রমে কোম্পানিগুলি চালু করার অনুমতি চেয়েছে ইউনাইটেড ব্রিউয়ারিজ, বীরা, মলসন অ্যান্ড করস এবং কার্লসবার্গের মতো শীর্ষস্থানীয় বিয়ার কোম্পানিগুলির প্রতিনিধিত্বকারী এআইবিএ।

এআইবিএর চেয়ারম্যান ও বিদায়ী প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও জনপ্রিয় কিংফিশার ব্র্যান্ডের নির্মাতা, ইউনাইটেড ব্রিউয়ারিজ লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর শেখর রামমূর্তি বলেছেন,“আমরা কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলিকে চিঠিতে জানিয়েছি যে আমাদের সেক্টরে বহু লোক কাজ করে। আমরা তাদের অনুরোধ করেছি যে স্যোশাল ডিস্ট্যান্সিংয়ের সমস্ত নিয়ম জারি রেখে বিয়ার কোম্পানিগুলি আবার চালু করার অনুমতি দিন। পাশাপাশি একইভাবে নিয়ম মেনে হটস্পট অঞ্চল,তার,নাইট ক্লাব ছেড়ে অন্যান্য অঞ্চলে খুচরো মদের দোকানগুলি আবার চালু করার অনুরোধ করেছি৷”

এআইবিএ, যার সদস্যরা দেশে ৮০ টিরও বেশি বিয়ার উৎপাদনকারী সংস্থা পরিচালনা করে, বিয়ার শিল্পের জন্য ত্রাণ এবং ব্যবসায়ের ধারাবাহিকতার জন্য অনুরোধ করেছে। বিয়ার বিক্রির মাধ্যমে, রাজ্য সরকারগুলি প্রতি বছর  ৩৬,০০০ কোটি টাকারও বেশি আয়কর শুল্ক এবং ভ্যাট আকারে উপার্জন করে বলে জানিয়েছে এআইবিএ। শীর্ষ গ্রীষ্মের মরসুম ভারতে শুরু হয়েছে এবং বিয়ার উৎপাদনকারী সংস্থাগুলির জন্য, এপ্রিল থেকে জুনের বিক্রি ৩৫-৪০% অবদান রাখে। রামমূর্তি বলেন, “আমরা এমন পরিস্থিতিতে লক্ষ্য করছি যেখানে সীমাবদ্ধতা না উঠলে পুরো মরসুমটাই নষ্ট হয়ে যাবে।”

লাইসেন্স ফি সহ মদের বিক্রি থেকে আদায় করা শুল্ক এবং কর দেশের রাজস্ব খাতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় বিক্রি থেকে রাজ্যগুলির রাজস্বের হার ১৫-২০%। এআইবি-এর যুক্তি, সরকার এমন একটি বিপর্যয় মোকাবেলা করছে যে দেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তার বিশাল প্রভাব রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে এই সংস্থাগুলি আংশিক ছাড় পেলে আর্থিকভাবে রাজ্যগুলিকেও সহায়তা করতে পারে।

এক্ষেত্রে বিয়ারের অনলাইন বিক্রির সম্ভাব্যতার দিকে নজর দেওয়ার জন্যেও সরকারের কাছে আর্জি জানিয়েছে বিয়ার উৎপাদনকারী সংস্থাগুলি। 'বিরা' বিয়ার উৎপাদনকারী বি -৯ বেভারেজের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও অঙ্কুর জৈন বলেন, “এই মুহূর্ত সমস্ত সঠিক পদ্ধতি বজায় রেখে অনলাইন বিক্রির বিষয়ে বিবেচনা করা যেতে পারে।  পশ্চিমবঙ্গ সরকার মদের হোম ডেলিভারি নিয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত না নিলেও, লকডাউনের মধ্যেই মদের দোকান খুলতে চলেছে বিজেপি শাসিত দুই রাজ্য অসম আর মেঘালয়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eight + 1 =