সঞ্জীবনী হাতে মানুষের প্রাণ বাচাচ্ছে উত্তরাখণ্ডের ‘মেডিসিন ম্যান’

সঞ্জীবনী হাতে মানুষের প্রাণ বাচাচ্ছে উত্তরাখণ্ডের ‘মেডিসিন ম্যান’

দেরাদুন: উত্তরাখণ্ডের মানুষের কাছে তিনিই এখন ত্রাতা৷ তাঁর আনা সঞ্জীবনী-তেই  দীপ্ত অগণিত মানুষের জীবন৷

ডায়াবেটিস হোক বা উচ্চ রক্তচাপ, কিংবা অন্য কোনও অসুখ, লকডাউনের মাঝে ওষুধের জন্য কোনও চিন্তা নেই দেরাদুন, চামোলি, পিথোরাগড়, রুদ্রপ্রয়াগ, উত্তরকাশি বা উত্তরাখণ্ডের অন্যান্য শহরের মানুষের৷ কারণ তাঁরা জানানে, যত প্রতিকূলতাই আসুক না কেন, তাঁদের কাছে জীবনদায়ী ওষুধ পৌঁছে দেবে তাঁদের ‘মেডিসিন ম্যান’৷

উত্তরখণ্ড পুলিশের দমকলকর্মী মনীশ পন্থ৷ পৌরি শহরের বাসিন্দা ‘ফায়ারম্যান’ মণীশ এখন উত্তরাখণ্ডের ‘মেডিসিন ম্যান’৷ জনতা কারফিউ-র দিন থেকেই শুরু হয়েছে তাঁর এই অনন্য লড়াই৷ ওই দিন হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন তাঁর প্রতিবেশি বছর ৬৫-র এক মহিলা৷ আচমকাই ব্লাড প্রেসার বেড়ে যায় তাঁর৷ অসহায় হয়ে মণীশের কাছে ছুটে আসেন ওই বৃদ্ধার পরিবারের লোক৷ পুলিশকর্মী হিসাবে যদি ওষুধের বন্দোবস্ত করতে পারেন তিনি!

মণীশ বলেন, ‘‘সেদিন এলাকায় একটা ওষুধের দোকানও খোলা ছিল না৷ তাই বাধ্য হয়েই হাসপাতালে ছুটি ওই বৃদ্ধার জন্য ওষুধ আনতে৷ ওষুধ নিয়ে ফেরার সময় মনে হল, ওনার মতো এমন বহু মানুষেরই তো জরুরি ভিত্তিতে ওষুধের প্রয়োজন হতে পারে৷ সেই সময় কি করবেন তাঁরা? সকলে তো আর পুলিশকর্মী বা সরকারি কর্মীকে পাশে পাবেন না৷ তখনই ঠিক করি, যতটা সম্ভব এই দুঃসময়ে মানুষের পাশে থাকব আমি৷’’

কী ভাবে আরও বেশি করে মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়া যায়, ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সেই ছক কষে ফেলেন তিনি৷ এর পরই ফেসবুক চটপট একটি পোস্ট করে ফেলেন মনীশ৷ ওই পোস্টে তিনি বলেন, ‘‘যে সকল প্রবীণ নাগরিকরা সন্তানদের থেকে দূরে রয়েছেন এবং যাঁরা প্রয়োজনীয় ওষুধ পাচ্ছেন না, তাঁরা তাঁদের লোকেশন এবং ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনের একটি ছবি তুলে আমাকে মেসেজ করুন৷’’ মনীশের ওই পোস্টটি ৫০০ বার শেয়ার করা হয়েছে ফেসবুকে৷ পোস্ট করার মুহূর্তের মধ্যেই উপচে পড়ে আবেদনের ভিড়৷ দেরাদুন তো বটেই, আলমোড়া, চামোলি, নৈনিতাল থেকেও ওষুধ পাঠানোর আর্জি জানান অসংখ্য মানুষ৷ কাউকে অবশ্য নিরাশ করেননি তিনি৷ সমস্ত প্রতিকূলতাকে হার মানিয়ে প্রত্যেকের কাছে ওষুধ পৌঁছে দিয়েছেন মণীশ৷ বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ছাড়াও গর্ভবতী মহিলা এবং শিশুদের জন্যও ওষুধ পৌঁছে দিয়েছেন তিনি৷

মণীশ বলেন, অসুস্থ মানুষদের কাছে ওষুধ পৌঁছে দেওয়ার সময় কোনও দূরত্বই বেশি মনে হয় না৷ ৩০ বছরের মনীশ জানান, ‘‘একবার একজন রোগী আমাকে ওষুধ পাঠানোর আর্জি জানিয়েছিলেন৷ আমার বাড়ি থেকে তাঁর বাড়ির দূরত্ব ছিল ৯০ কিলোমিটার৷ ওই দিন আবহাওয়াও প্রচণ্ড খারাপ ছিল৷ হিমালয়ের পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে বাইক নিয়ে যাওয়া ছিল খুবই বিপজ্জনক৷ তাই বাধ্য হয়েই আমি সিনিয়র অফিসারদের সঙ্গে কথা বলি৷ পুলিশের গাড়ি দেওয়ার আর্জি জানাই৷ তাঁরা যখন আমার ‘অপারেশন সঞ্জীবনী’র কথা শোনেন, তখন খুবই গর্বিত হন৷ কোনও প্রশ্ন না করেই গাড়ির চাবি তুলে দেন আমার হাতে৷’’ তিনি  বলেন, কথায় বলে না ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয়৷ সেই ইচ্ছা শক্তির জোড়েই প্রত্যেক রোগীর কাছে পৌঁছে যাওয়ার পথ খুঁজে নেব আমি৷’ য


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

10 − five =