কৃষক থেকে মৎস্যজীবী, পশুপালনে বিপুল অর্থ বরাদ্দ কেন্দ্রের

কৃষক থেকে মৎস্যজীবী, পশুপালনে বিপুল অর্থ বরাদ্দ কেন্দ্রের

নয়াদিল্লি: ‘আত্মনির্ভর ভারত অভিযান’ প্রকল্পে ২০ লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ শুক্রবার তৃতীয় দফায় এই বিষয়ে বিশদ ব্যাখ্যা দিতে সাংবাদিক বৈঠক করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন৷ 

তৃতীয় দফায় আর্থিক প্যাকেজে জোড় দেওয়া হয়েছে কৃষি, ডেয়ারি, মৎসজাত পণ্যের উপর৷ এদিন ১১টি পদক্ষেপ ঘোষণা করা হল৷ এর মধ্যে ৮টিই কৃষি সংক্রান্ত৷ এদিন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বলেন- 
* দুধ উৎপাদনে ভারত বিশ্বের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছে৷ 
* আখ, ডাল এবং অন্যান্য ফসল উৎপাদনে ভারত বিশ্বে দ্বিতীয়৷  
* এই বছর প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও রবিশস্য তুলেছে কৃষকরা৷ খরা হোক বা বন্যা, প্রতিকূল প্রাকৃতিক পরিস্থিতির মোকাবিলা করেও ভারতকে সমৃদ্ধশালী করেছেন কৃষকরা৷ দেশবাসীর মুখে আহার তুলে দিচ্ছেন তাঁরা৷
*কৃষকদের আয় বৃদ্ধ, পরিকাঠামোর জন্য প্যাকেজ আনা হয়েছে৷ ১ লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজ কৃষির পরিকাঠামো উন্নয়নে বরাদ্দ করা হচ্ছে৷  

*এর মধ্যে রয়েছে কোল্ড স্টোরেজ, ফসল কাটার পর সংরক্ষণ, পরিবহণ-সহ যাবতীয় বিষয়৷
*লকডাউনের মধ্যেও সরকার চাষিদের থেকে প্রচুর পরিমাণে শস্য কেনা হয়েছে৷ ৭৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকার ফসল কিনেছে সরকার৷ 
*ফসল বিমা যোজনার কৃষকদের টাকা দেওয়া হয়েছে৷
* লকডাউনের ফলে দুধের চাহিদা অনেকটাই কমেছে৷ ফলে বিপুল ক্ষতির মুখ দেখতে হয়েছে পশুপালকদের৷ বিদেশি অর্ডার সময়মতো পাঠাতে পারেননি কৃষকরা৷ 
*গত দু'মাসে কোভিড পরিস্থিতিতে ২৪২টি হ্যাচারির অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্র৷ 
* সমবায় সমিতি থেকে দুই মাসে ৫৬০ লিটার দুধ কেনা হয়েছে৷

*সমুদ্রে মাছ ধরা এবং মৎস্য পালন সংক্রান্ত বিষয়টিও সরকারের বিবেচনায় রয়েছে৷  
*প্রধানমন্ত্রী আগের দিনই বলেছিলেন লোকালের জন্য ভোকাল হতে হবে। সে কথা মাথায় রেখেই খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ২ লক্ষ ছোট খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ সংস্থা এর ফলে উপকৃত হবে।
*খুব শীঘ্রই এই তহবিল গঠন করে কাজ শুরু করা হবে 
*বিভিন্ন রাজ্যে খাদ্য সংক্রান্ত ক্লাস্টার তৈরি হবে৷ যেমন-
বিহারে গঠিত হবে মাখন ক্লাস্টার৷ আবার কাশ্মীরে আছে কেশর, অন্ধ্রপ্রদেশে লঙ্কা৷ এই খাতে ১০ হাজার কোটি টাকার পুনরুজ্জীবন প্যাকেজ বরাদ্দ করা হবে৷   
*প্রধানমন্ত্রী 'মৎস্য সম্প্রদায় যোজনা'র মাধ্যমে ২০ হাজার কোটি টাকার পুনরুজ্জীবন প্যাকেজ আনা হচ্ছে৷ এর মধ্যে ১১ হাজার কোটি টাকা সামুদ্রিক মৎস্য শিকার সংক্রান্ত কাজে খরচ হবে৷  বাকি ৯ হাজার কোটি টচাকা খরচ করা হবে অন্তর্দেশীয় মৎস্য চাষের জন্য৷ 

* এই প্রকল্পে ৫৫ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। সরকারের আশা, এর ফলে মৎস্য সংক্রান্ত রফতানির অঙ্ক বেড়ে ১ লক্ষ কোটি টাকা হবে।
* এই প্রকল্প খাতে মৎস্যজীবীদের মাঝ ধরার নৌকো দেওয়া হবে, মৎস্য বন্দর গড়ে তোলা হবে। সেই সঙ্গে মৎসজীবীদের বিমার ব্যবস্থাও করা হবে। তা ছাড়া বছরের বিভিন্ন সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে মৎস্যজীবীরা সমুদ্রে মাছ ধরতে যেতে পারেন না। সেই সময়েও তাঁদের আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে।

* ভারতে সর্বাধিক গবাদি পশু রয়েছে৷ দেশের ৫৩ কোটি গবাদিপশুকে টিকাকরণ করা হবে৷ যাতে গবাদিপশুর পায়ে এবং মুখের রোগ নিরাময় সম্ভব হয়৷ এই খাতে সরকারের ১৩,৩৪৩ কোটি টাকা খরচ হবে৷ 
*এই টিকাকরণে পশুরাও সুস্থভাবে বাঁচতে পারবে৷ দুধও বেশি উৎপাদন হবে৷
* ডেয়ারি শিল্পের জন্য ১৫ হাজার কোটি টাকার পুনরুজ্জীবন প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে৷ ডেয়ারি শিল্পে বেসরকারি বিনিয়োগে উৎসাহ দেওয়া হবে৷ ডেয়ারি শিল্প তৈরি গঠন এবং দুগ্ধজাত সামগ্রী রফতানির উপর ইনসেনটিভ দেওয়া হবে৷     
*দুধ পক্রিয়াকরণের জন্য শিল্প গড়ার লক্ষ্যে এই পদক্ষেপ৷ 

* যে কোনও পরিস্থিতিতে ভেষজ উদ্ভিদ খুবই উপকারী৷ ভেষজ চাষের জন্য ৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে। ১০ লক্ষ হেক্টর জমিতে ভেষজ উদ্ভিদ চাষ করা হবে৷ 
*গঙ্গার দু’ধারে ভেষজ ও ঔষধি উদ্ভিদ উৎপাদন করা হবে৷ এই উদ্দেশ্যে গঙ্গার দু’ধারে ৮০০ হেক্টর জমি চিহ্নিত করা হবে।
*মৌমাছি পালন ক্ষেত্রের জন্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে। এই পদক্ষেপ গ্রামাঞ্চলে মহিলাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে। উপকৃত হবেন প্রায় ২ লক্ষ মৌমাছি পালক৷ তাঁদের আয় বাড়বে৷ 'লোকাল সে গ্লোবাল'-এর ক্ষেত্রেও এই প্যাকেজ কাজ করবে৷ 

*লকডাউনের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষি পণ্যের সাপ্লাই চেন৷ আলু, পেঁয়াজ, টমেটো চাষিদের বিপুল ক্ষতি হয়েছে। বিক্রি না হওয়া প্রচুর কৃষিপণ্য পচে নষ্ট হয়েছে। এই অবস্থায় চাষীদের কৃষি পণ্যের পরিবহণের জন্য ৫০ শতাংশ ভর্তুকি দেওয়া হবে। কোল্ড স্টোরেজে সবজি মজুত করার জন্যও ৫০ শতাংশ ভর্তুকি দেবে সরকার৷ কৃষিপণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে মোট ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে৷ 
*অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইনে সংশোধন করা হবে। এ বার থেকে খাদ্যশস্য, ভোজ্য তেল, তৈলবীজ, পেঁয়াজ এবং আলুর মজুতের ঊর্ধ্বসীমা আর থাকবে না৷ এর ফলে কৃষকদের আয় বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে৷
*গরিব কৃষকদের যাতে বাধ্য হয়ে কম দামে ফসল বিক্রি না করতে হয়, তার জন্যই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে৷ 
*একমাত্র জরুরি বা ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি ছাড়া ঊর্ধ্বসীমা কার্যকর করা হবে না৷ 

*একই ভাবে কোনও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও মজুতে কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। 
* আন্তঃরাজ্য বাণিজ্যের অসুবিধা দূর করতেও আইন প্রণয়ন করবে কেন্দ্র৷ তাদের পণ্য ই-ট্রেডও করতে পারে। শুধুমাত্র লাইসেন্সধারী এজেন্টদের কাছেই ফসল বিক্রি করতে হবে, এই সীমাবদ্ধতা আর রাখা হবে না৷ কৃষকরা যেখানে খুশি তাঁদের ফসল বিক্রি করতে পারবেন৷

*চাষিরা যাতে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প, রফতানিকরণ, এগ্রিগেটর, রিটেল বিক্রেতার সঙ্গে চুক্তি চাষ করতে পারে সে ব্যাপারে একটি আইনি পরিকাঠামো তৈরি করে দেবে সরকার। 
*এই সংস্কারের মধ্যে কৃষকদের আরও শক্তিশালী করতে চায় সরকার৷ 
* ফসল কাটার সময় থেকেই কৃষকরা অনিশ্চয়তায় ভোগেন৷ আইনি পদক্ষেপ করে কৃষকদের ফসলের দামের নিশ্চয়তা দেওয়া হবে৷  

*উৎপাদন থেকে ফসল কাটা এবং তা বিক্রি করা পর্যন্ত কৃষকদের নিশ্চয়তা দেবে সরকার৷ তার জন্য নির্দিষ্ট আইন আনা হবে৷ কৃষকদের যাতে কেই শোষম করতে না পারে, এই আইনে সেই ব্যবস্থা করা হবে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fifteen + 10 =