কমেছে আয়, খরচে অনীহা সাধারণ জনতার, সিঁদুরে মেঘের আশঙ্কা সমীক্ষায়

কমেছে আয়, খরচে অনীহা সাধারণ জনতার, সিঁদুরে মেঘের আশঙ্কা সমীক্ষায়

নয়াদিল্লি: করোনা ভাইরাস নিশ্চিহ্ন করার দিশা এখনও নাগালের বাইরে। এপর্যন্ত গবেষণায় যতগুলি ভ্যাকসিন বা ওষুধের কার্যকারিতার উপর জোর দেওয়া হয়েছে তার সবটাই পরীক্ষামূলক। তাই গবেষকরাও বলেই দিয়েছেন এই ভাইরাসের সঙ্গে টিকে থাকার অভ্যাস করে নিতে হবে। সপ্তাহের শুরুতেই জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে একই কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাই আগামী দিনে অর্থাৎ, ১৯ মে থেকে শুরু হওয়া লকডাউনের চতুর্থ পর্বের “সম্পূর্ণ আলাদা” নিয়মবিধি থাকবে। সম্ভবত যে অঞ্চলগুলি কনটেইনমেন্ট জোনের বাইরে সেখানে বেশ কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হবে।

মঙ্গলবার নিজের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন,বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “করোনাভাইরাস এখনও থাকবে। তবে আমরা আমাদের জীবন ভাইরাস দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে দিতে পারি না। আমাদের একে সঙ্গে নিয়েই বাঁচতে হবে। আমরা মাস্ক পরব এবং ফিজিক্যাল ডিস্ট্যান্সিং বজায় রাখব, তবে আমাদের স্বপ্ন হাতছাড়া হতে দেব না”। কিন্তু যখন আমাদেরর কোভিড-১৯ এর মতো মারণ ভাইরাসের সঙ্গে সাক্ষাৎ লড়াই করে টিকে থাকতে হবে তখন একটা অজানা আতঙ্ক মনের মধ্যে সর্বক্ষণই থেকে যাবে। সুতরাং এতদিনের সেই স্বাভাবিক মানসিকতা নিয়ে স্বভাবিক জীবন যাপন করা সম্ভব হয়ে উঠবেনা তা একপ্রকার নিশ্চিত। আসন্ন ভবিষ্যতে একটা দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে গিয়ে আমাদের মানসিকতা ঠিক কেমন হতে পারে তারই একটা সমীক্ষা চালিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া ফার্ম লোকাল সার্কেলস।
মহামারীর জেরে অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে বিভিন্ন সেক্টর গুলিতে। সেখানে কর্মীদের যেমন বেতন কাটা যাচ্ছে তেমনই চাকরিও যাচ্ছে। ফলে বেশিরভাগই মানুষের ব্যয় করার মতো মানসিকতা নেই।

দেশের ১২৪ রেড জোন (সিওভিড -19 হটস্পট) জেলায় ছড়িয়ে থাকা গ্রাহকদের কাছ থেকে ২৪,০০০ এরও বেশি প্রতিক্রিয়া সংগ্রহ করেছে লোকাল সার্কেলস। রেড জোনের গ্রাহকদের জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে  লকডাউন শিথিল হয়ে যাওয়ার পরে তারা কোন বিশেষ পণ্যগুলিতে ব্যয় করবে? সমীক্ষায় দেখা গেছে লকডাউন পরবর্তী সময়ে ৭০ শতাংশ মানুষই প্রয়োজন ছাড়া খরচের পক্ষপাতি নয়।৬ শতাংশ মানুষ বলেছেন যে তারা গৃহসজ্জা ও সরবরাহ সংক্রান্ত জিনিসপত্র কিনবেন। ৫ শতাংশ বলেছেন তারা ল্যাপটপ, প্রিন্টার, ট্যাবলেট, মোবাইল ইত্যাদির মতো গ্যাজেট কিনবেন, এবং আরও ৫ শতাংশের কথায় তারা অফিস / স্কুল সরবরাহের মতো স্টেশনারি, মোবাইল আনুষাঙ্গিক, বই ইত্যাদি কিনবেন।

৪ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন যে তারা সাদা জিনিস ও যন্ত্রপাতি কিনবেন যেমন এসি, কুলার, রেফ্রিজারেটর, গ্রাইন্ডার ইত্যাদি জিনিসপত্র কেনার চিন্তা ভাবনা করছেন। ২ শতাংশ বলেছেন ফ্যাশন এবং পোশাক, অন্যদিকে ১ শতাংশের পরিকল্পনা রয়েছে অটোমোবাইল (গাড়ি / স্কুটার) কেনার। ৩ শতাংশ মানুষ অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের জন্য ব্যয় করার মত মানসিকতা রাখছেন।লোকাল সার্কেসের চেয়ারম্যান ও সিইও শচীন তাপারিয়ার মতে: “করোনভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের জেরে তৈরী হওয়া অনিশ্চয়তার কারণে গ্রাহকরা অপ্রয়োজনীয় খরচ থেকে পিছিয়ে আসছেন।”গত মাসের একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে ৮৭ শতাংশ ভারতীয় মনে করছেন চলতি বছরের তুলনায় আগামী বছরে তাদের পরিবারের আয় কমে আসবে।

যদিও গত শুক্রবার করা সমীক্ষায় আরও দেখা গেছে যে, ২১ শতাংশ মানুষ বলেছেন তারা এয়ারকন্ডিশনার, কুলার, ফ্রিজ এবং যন্ত্রপাতি মেরামতির ক্ষেত্রে ব্যয় করবেন। ১৮ শতাংশ মানুষ বাড়ির মেরামতির কথা বলেছেন এবং ১৬ শতাংশ মানুষ চুল কাটার মতো সৌন্দর্য পরিষেবাগুলির ক্ষেত্রে ব্যয় করার মানসিকতা রাখেন। ৯ শতাংশ বলেছেন অটোমোবাইল পরিষেবার কথা, ৬ শতাংশ গ্যাজেট মেরামত করার পক্ষে, এবং ২ শতাংশ মানুষ ব্রডব্যান্ড পরিষেবা বেছে নিয়েছেন।
তবে আশ্চর্যজনকভাবে, বেশিরভাগ মানুষেরই (২৪ শতাংশ)  কোনও পরিষেবাতেই ব্যয় করার মত মানসিকতা নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 × 4 =