নয়াদিল্লি: মুখোশের আড়ালে ধীরে ধীরে যেন চেনা পৃথিবীর বুকে ফিরছে মানুষ৷ শহরের রাস্তায় সেই চেনা ট্রাফিক জ্যাম৷ দোকানে দোকানে ভিড়৷ তবে এখন আর দূর থেকে দেখে ঠাওর করা যায় না কাউকে৷ সকলেরই অর্ধেক মুখ ঢাকা পড়েছে মাস্কের আড়ালে৷
প্রায় দু’মাস ধরে চলা লকডাউন এখন অনেকটাই শিথিল৷ খুলেছে অফিস কাছারি৷ এই শিথিলতায় গত কয়েকদিনে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা৷ কেমন আছে দেশের শহরগুলি? দেখা যাক৷
দিল্লি- লকডাউনের বাঁধন আলগা হতেই রাজধানীর রাজপথ ভরেছে গাড়িতে৷ সেইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দিল্লির দূষণ৷ শনিবার সকাল ৯টায় রাজধানীর এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (AQI) ছিল ১৬২৷
একইসঙ্গে সমান তালে বেড়ে চলেছে আক্রান্তের সংখ্যা৷ শক্রবার নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৬৬০ জন মানুষ৷ সব মিলিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১২ হাজার ছাড়িয়েছে৷ বেড়েছে কনটেনমেন্ট জোনও৷ শুক্রবার নতুন করে তালিকায় জুড়েছে আরও ৯টি এলাকা৷ রাজধানীতে মোট কনটেনমেন্ট এলাকার সংখ্যা বেড়ে হল ৮৬৷
মুম্বই- আক্রান্তের নিরিখে দেশের মেট্রো সিটিগুলির মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে বাণিজ্যনগরী৷ টানা ছয় দিন ধরে লাগাতার ভাবে বেড়ে চলেছে আক্রান্তের সংখ্যা৷ শুক্রবার একদিনে মুম্বইয়ে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১,৭৫১ জন৷ এখনও পর্যন্ত এই শহরে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৯০৯ জনের৷ রোগীদের অ্যাম্বুলেন্সের জন্য অপেক্ষার সময় কমাতে অ্যাপ ক্যাবের জন্য ব্যবহৃত টেকনোলজি প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএমসি৷ এই অ্যাপের মাধ্যমে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের গতিবিধির উপর সহজেই নজর রাখা যাবে এবং দ্রুত রোগীর কাছে অ্যাম্বুলেন্স পাঠানো সম্ভব হবে৷
অন্যদিকে, শুক্রবার অবশেষে মদের হোম ডেলিভারি চালু করল বিএমসি৷ দোকানে লম্বা লাইন দিয়ে আর মদ কিনতে হবে না মুম্বইবাসীকে৷ তবে সংক্রমণ এড়াতে কনটেনমেন্ট জোনে ডেলিভারি দেওয়া হবে না বলে জানানো হয়েছে৷
কলকাতা- করোনা বিরোধী যুদ্ধের মাঝেই কলকাতার উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আমপান৷ যার দাপটে অনেকটাই দিশেহারা কলকাতা সহ গোটা দক্ষিণবঙ্গ৷ তবে শুক্রবার আকাশ ছিল অনেকটাই পরিষ্কার৷ টানা দু’মাস বন্ধ থাকার পর শাটার উঠতে শুরু করেছে কলকাতার বাজারেও৷ শুরু হয়েছে বিকিকিনি৷ খুব শীঘ্রই খোলা হবে হকার মার্কেট৷ রাস্তায় নেমেছে বাস-ট্যাক্সি৷ অন্যদিকে, সোমবার থেকে এ রাজ্যেও চালু হতে চলেছে অন্তর্দেশীয় বিমান পরিষেবা৷
পশ্চিমবঙ্গে এই মুহূর্তে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৩,৩৩২। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তথ্য অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১৩৫ জন। রাজ্যে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৬৫ জনের। যদিও রাজ্য সরকারের হিসেবে করোনাভাইরাসের জেরে মৃতের সংখ্যা ১৯৩। বাকি ৭২ জনের মৃত্যু হয়েছে কো-মর্বিডিটির কারণে।
চেন্নাই- লকডাউনের মাঝেই শনিবার থেকে চেন্নাইয়ে চলতে শুরু করেছে অটো এবং সাইকেল রিক্সো৷ গ্রেটার চেন্নাই পুলিশের এলাকার বাইরে বিউটি পার্লার খোলার অনুমতি দিয়েছে রাজ্য সরকার৷
অন্যদিকে রাজ্যে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে হাসপাতালের বেড, কেয়ার সেন্টার এবং কোয়ারেন্টিনের সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে তামিলনাড়ু সরকার৷
বেঙ্গালুরু- অগাস্ট মাস থেকে স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্ণাটক৷ তবে শুধুমাত্র স্কুলের ক্লাসরুমেই পড়াশোনা হবে, নাকি অনলাইন এবং ক্লাসরুমের মিশ্রনে পড়াশোনা চলবে, সেই বিষয়ে কোনও নির্দেশিকা জারি করা হয়নি৷
এদিকে, করোনায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত মহারাষ্ট্র, গুজরাত, তামিলনাড়ু, দিল্লি, রাজস্থান এবং মধ্যপ্রদেশ থেকে কর্ণাটকে আসা বিমান যাত্রীদের জন্য একগুচ্ছ ফরমান জারি করা হয়েছে৷ বলা হয়েছে, এই ছয় রাজ্য থেকে আসা যাত্রীদের বাধ্যতামূলকভাবে সাতদিনের জন্য কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে৷ অন্যদিক, আজ থেকেই ত্রি-সাপ্তাহিত স্পেশাল ট্রেন চলাতল শুরু হল কর্ণাটকে৷
হায়দরাবাদ- যাঁদের পরিচারিকা এবং গাড়ির চালক রয়েছেন, সে সকল কোভিড রোগীদের প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি কনট্যাক্ট খুঁজে বার করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে৷ এমনটাই জানিয়েছে গ্রেটার হায়দরাবাদ মিউনিসিপাল কর্পোরেশন৷
টিআরএস বিধায়করা মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওকে লিখিত বিবৃতিতে জানিয়েছেন, গল্ফভুক্ত দেশগুলি থেকে ফেরা কর্মীদের জন্য বিনামূল্যে কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করা হোক৷
লকনউ- জোড়-বিজোড় নীতি মেনে শহরে খুলতে শুরু করেছে দোকানপাট৷ তবে আলমবাগ, আশিয়ানা এবং ফইজুল্লাগঞ্জের মতো এলাকাগুলিতে দোকান খোলার জন্য সোমবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে৷
আমাউসি বিমানবন্দরে আসা যাত্রীদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে বলে জানিয়েছে সে রাজ্যের সরকার৷
আমেদাবাদ- সিভিল হাসপাতাল ক্যাম্পাসের গুজরাত ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের করোনা আক্রান্ত কর্মীর সংস্পর্শে আসা ১০২ জনের রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে৷ আমেদাবেদ ক্রমেই বেড়ে চলেছে আক্রান্তের সংখ্যা৷
চণ্ডীগড়- শুক্রবার চণ্ডীগড়ে ফিরেছেন ২৫ জন এনআরআই৷ তাঁদের অমৃতসর, দিল্লি এবং চণ্ডীগড় বিমানবন্দর থেকে নিয়ে এসেছে প্রশাসন৷
২৬ মে থেকে কাজ শুরু করবে চণ্ডীগড় পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্র৷