নয়াদিল্লি: সোমবার করোনা পরিস্থিতির মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাসভবনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকে ক্ষুদ্র, মাঝারি এবং অতিক্ষুদ্র শিল্পগুলিকে আরও বেশি চাঙ্গা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়৷ এদিন বিকেলে সাংবাদিক বৈঠক করে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর, নিতিন গড়কড়ি ও নরেন্দ্র তোমর৷
এদিন সাংবাদিক বৈঠকে জাভড়েকর জানান, কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম বর্ষপূর্তির পর আজ সোমবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পৌরহিত্যে প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়৷ এদিনের বৈঠকে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ যার ফলে ভারতের কৃষক, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও অতিক্ষুদ্র শিল্প উদ্যোগ, ফুটপাতের দোকানদাররা উপকৃত হবেন৷
তিনি বলেন, ছোট বা মাঝারি মাপের শিল্পের (মাইক্রো, স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজেস বা এমএসএমই) আত্মনির্ভর ভারত গড়ার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে৷ ভারতে ৬ কোটি এমএসএমই আছে৷ এমএসএমই ভারতের মেরুদণ্ড৷ কোভিড ১৯ মহামারির পর রাষ্ট্র নির্মানের ক্ষেত্রে এমএসএমই-র উপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে৷এমএনএমই-র সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা হয়েছে৷ যাতে ছোট ব্যবসা আরও সহজ হয়৷ আরও বেশি করে এমএসএমই-র প্রতি আকৃষ্ট হন উদ্যোগীরা৷ তিনি জানান, ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্পে আর্থিক সাহায্য বা বিশেষ প্যাকেজ মঞ্জুর করা হয়েছে মন্ত্রিসভার বৈঠকে।
সংকটে থাকা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পর জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার ঋণ বরাদ্দ করা হয়েছে। এর থেকে উপকৃত হবে ২ লক্ষ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প৷ এছাড়াও এমএসএমই-র জন্য ইকুইডিটির স্কিম করা হয়েছে৷ এমএসএমই-র সংজ্ঞাকে আরও স্পষ্ট করা হয়েছে৷ এত দিন ২৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত মূলধনের শিল্পগুলি ক্ষুদ্রশিল্পের আওতায় আসত, এ বার মূলধনের সীমা বাড়িয়ে ১ কোটি করা হল৷ আবার যে সমস্ত সংস্থার বার্ষিক লেনদেন ১০০ কোটি টাকা, সে গুলিকে ছোট শিল্পের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। মাঝারি উদ্যোগে বিনিয়োগ ৫০ কোটি এবং টার্নওভারের সীমা ২৫০ কোটি করা হয়েছে৷
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের মাধ্যমে আরও বেশি কর্মসংস্থানে কথা বলা হয়েছে৷ ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে৷ প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালে এমএসএমই আইন কার্যকর হওয়ার ১৪ বছর বাদে এই আইনে সংশোধন করা হল৷ শহর এবং গ্রামের ফুটপাতের দোকানদারদের ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে৷ এই প্রকল্প দীর্ঘদিন চলবে৷ এই প্রকল্পে ৫০ লক্ষ দোকানদার উপকৃত হবেন৷ মাসিক কিস্তিতে এক বছরের মধ্যে এই লোনের টাকা ফেরত দিতে পারবেন তাঁরা৷ এর জন্য পোর্টাল এবং মোবাইল অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে৷
এদিনের বৈঠকে কৃষকদের জন্য বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ ঋণ শোধ করার জন্য আরও সময় পাবেন কৃষকরা৷ এছাড়াও দেড়গুণ বেশি সহায়ক মূল্য দেওয়া হবে কৃষকদের৷ চলতি অর্থবর্ষে ধানের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য কুইন্টাল পিছু ৫৩ টাকা বাড়িয়ে ১,৮৬৮ টাকা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ ১৪টি খারিফ শস্যে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের সিদ্ধান্তে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে৷ খরচের ৫০-৮৩ শতাংশ টাকা পাবেন কৃষকরা। কৃষি মন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর জানান, ঋণ শোধ করতে আরও সময় পাবেন কৃষকরা, এবার থেকে ঋণ শোধের সময়সীমা হবে অগস্ট মাস পর্যন্ত। কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ঋণ নেওয়া যাবে এবং চাইলে নিজেদের ফসল বিক্রি করতে পারবেন কৃষকরা।
গতমাসে সরকার জানিয়েছিল, কৃষকরা নিজেদের ইচ্ছেমতো তাদের ফসল যেখানে খুশি বিক্রি করতে পারবেন, এবং নিজেদের নির্ধারিত দাম নিতে পারবেন। তোমর বলেন, করোনাভাইরাসের প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও কৃষককা শস্য কেটেছে৷ চলতি বছর চাষিদের কাছ থেকে ৩৬০ লক্ষ মেট্রিকটন গম কেনা হয়েছে৷ গত বছর এর পরিমাণ ছিল ৩৪২ লক্ষ মেট্রিকটন৷ এখনও পর্যন্ত ৫৫ লক্ষ মেট্রিকটন ধান কেনা হয়েছে৷ গত বছর তা ছিল ৯০ মেট্রিকটন৷ এখনও অন্যান্য শস্য কেনার কাজ চলছে৷